বিধান সরকার: রথযাত্রা উপলক্ষে সেজে উঠেছে মাহেশ। শ্রীরামপুরের মাহেশের রথ জগৎ-বিখ্যাত। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু থেকে শ্রীরামকৃষ্ণ এসেছেন এই রথে। সাধক ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী যে উৎসবের সূচনা করেছিলেন, এবার সেই রথ ৬২৮ বছরে উৎসব পালন করবে।
আরও পড়ুন: West Bengal Weather Update: ওডিশায় ঘূর্ণাবর্ত! ৭৫ শতাংশ বৃষ্টিপাতে ভাসবে সারা রাজ্য! কলকাতায় কী হবে?
এর প্রস্তুতিপর্ব চূড়ান্ত। মার্টিন বার্ন কোম্পানির তৈরি লোহার রথ টানা হবে রবিবার বিকেল চারটের সময়ে। তার আগে সকাল থেকে জগন্নাথ মন্দিরে চলবে পুজোপাঠ। জগন্নাথ গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে এসে ভক্তদের দর্শন দেবেন।
রীতি অনুযায়ী স্নানযাত্রা উৎসবের পর জগন্নাথের ধুম জ্বর আসে। লেপমুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকেন জগতের নাথ। কবিরাজের পাঁচন খেয়ে তাঁর জ্বর সারে। তারপর হয় তাঁর নব যৌবন উৎসব। পুরীর জগন্নাথের হয় নব কলেবর। মাহেশে হয় নব যৌবন। এসময় মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয় ভক্তদের জন্য। আগামী কাল দুপুরে হবে দামোদর। তারপর প্রথমে নারায়ণ শিলা একে একে সুভদ্রা বলরাম ও জগন্নাথদেব রথে উঠবেন। বিকাল চারটে নাগাদ মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবে রথ।
মাহেশের রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে মেলা বসে স্নানপিঁড়ির মাঠে। রথের দড়ি ছুঁতে বহু ভক্তের সমাগম হয়। যে কারণে পুলিসি নিরাপত্তা জোরদার করা হয় প্রতি বছরই।
ওদিকে সেজে উঠেছে মহিষাদলও। প্রস্তুত মহিষাদলবাসী। তাঁদের অন্যতম গর্ব তাঁদের রথযাত্রা উৎসব। পুরী ও মাহেশের পরে অন্যতম এই মহিষাদল রথযাত্রা উৎসব। এই রথযাত্রা শুরু হয়েছিল মহিষাদলে রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতায়। মহিষাদল রাজবংশের আদিপুরুষ জনার্দন উপাধ্যায়। জনার্দন উপাধ্যায়ের উত্তরসূরিদের মধ্যে ১৭৩৮ সালে যুবরাজ আনন্দলাল উপাধ্যায় রাজপদাভিষিক্ত হন। দীর্ঘ ৩১ বছর রাজত্ব করার পর ১৭৬৯ সালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করলে তাঁর সহধর্মিণী রানি জানকী রাজত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত ধর্মপরায়ণা ছিলেন। ১৭৭৬ সালে তিনিই এক রথ তৈরি করা শুরু করেন। কিন্তু তাঁর আমলে সেই রথ চলতে শুরু করেনি। ১৮০৫ সালে রাজবংশের মতিলাল পাঁড়ের (উপাধ্যায়) সময়ে সেই রথ চলার শুরু।
এই রথের ইতিহাস বহু প্রাচীন। আগে সতেরো চূড়া রথ ছিল। এখন তেরো চূড়া রথ হয়েছে। তেরো চূড়া রথের ঢাকার উচ্চতা ৪ ফুট। বেধ ৮ ইঞ্চি, পরিধি ১২ ফুট। লোহার পাত দিয়ে মোড়া মোট ৩৪টি চাকা আছে। রথের উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। তবে কলস ও ধ্বজা দিয়ে সাজানো হলে উচ্চতা ৫০ ফুটেরও বেশি হয়ে যায়। প্রথম রথ তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় চৌষট্টি হাজার টাকা।
পুরী ও মাহেশের পরেই মহিষাদলের রথের নাম শোনা যায়। ভারতে একমাত্র কাঠের রথ হল মহিষাদলের প্রাচীন এই রথ। মহিষাদলের রথ ‘মদনগোপাল জিউ’-র রথ নামে খ্যাত। মদনগোপল জিউর সঙ্গে থাকেন জগন্নাথ ও রাজবাড়ির শালগ্রাম শিলা শ্রীধর জিউ। মহিষাদল রাজ পরিবারের সদস্যরা জানান অন্যান্য জায়গায় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা হলেও মহিষাদলের রথে যান রাজ পরিবারের কুলদেবতা মদন গোপাল জিউ। প্রথা অনুযায়ী রাজ পরিবারের কোনও সদস্য রথের রশিতে হাত দেওয়ার পরে রথযাত্রা শুরু হয়। মহিষাদলের বর্তমান রাজা হরপ্রসাদ গর্গ।
আরও পড়ুন: Darjeeling: বিপর্যয় থামছেই না! ফেটে গিয়েছে রাস্তা, বইছে কাদার স্রোত, বন্ধ টয় ট্রেন, স্তব্ধ জনজীবন…
মহিষাদলের বিধায়ক তিলককুমার চক্রবর্তী জানান, মহিষাদল রথ কমিটির উদ্যোগে প্রায় এক মাস ধরে এই মেলা চলে। এই রথের মেলায় রথ টানার দিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে। পাশাপাশি তিনি এও দাবি করেন যে, এই আড়াইশো বছরের প্রাচীন রথকে যাতে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়, সেটা দেখা হবে। তা ছাড়া ফি-বছর যে-সড়ক ধরে রথযাত্রা হয় তা পরিচ্ছন্ন করা, নর্দমা পরিষ্কার করা-সহ নানা কাজ নিয়ে প্রচুর জটিলতা তৈরি হয়। তিনি চান, সেই সড়কও নিয়মমতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা হোক এবং সড়কটিকে ‘রথযাত্রা সড়ক’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)