বর্ধমান রাজ পরিবারের রাজমাতা ব্রজকিশোরী কালনায় এসেছিলেন গঙ্গাস্নানে। তখন উত্তর ভারত থেকে বহু সাধক গঙ্গা দিয়ে নৌকায় চড়ে গঙ্গাসাগরে যেতেন। যাত্রা বিরতির স্থান হিসেবে কালনার পরিচিতি ছিল। তেমনই কয়েকজন সাধু ডেরা বেঁধেছিলেন কালনায়। তাঁদের মধ্যে এক সাধু লালজি বা কৃষ্ণর মূর্তি ব্রজকিশোরীকে রাখতে দিয়ে বলেছিলেন, ফেরার পথে নিয়ে যাবেন তিনি।
সন্ন্যাসী ফিরে না আসায় মূর্তি রয়ে যায় ব্রজকিশোরীর কাছেই। প্রচলিত লোকশ্রুতি, ব্রজকিশোরী তাঁর রাধার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন লালজির। জামাই লালজির জন্য তিনি মন্দির নির্মাণ করে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। ব্রজকিশোরীর অনুরোধে ছেলে কীর্তিচাঁদ ১৭৩৯ খ্রীস্টাব্দে ২৫ চূড়ার লালজি মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরে রয়েছে লালজি ও শ্রীরাধার বিগ্রহ।
কালনা মহকুমা ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব চর্চা কেন্দ্রের উপদেষ্টা সিদ্ধেশ্বর আচার্য বলেন, ‘কালনা শহরের সব থেকে জাঁকজমকের রথযাত্রা উৎসব হতো বর্ধমান রাজপরিবারের লালজি মহারাজের রথে। রাজবাড়ি চত্বর থেকে রথ বেরোত। জগন্নাথের বদলে এই রথে চড়েন লালজি মহারাজ। রথে বর্ধমান থেকে নিয়ে আসা হতো হাতি। বিশাল রথ টানার জন্য লোকের অভাব হলে হাতি দিয়ে রথ টানানো হতো। তার জন্য প্রস্তুত রাখা হতো হাতিকে।’
এক সময়ে মোট তিনটি রথ ছিল। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কাঠের সেই সব রথ নষ্ট হয়ে যায় বছরকয়েক আগে। স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্যোগী হয়ে কালনা রথ কমিটি গড়ে লোহার রথ নির্মাণ করেন। বর্তমানে টানা হয় সেই রথ। রথযাত্রার আগের দিন শহরের সুরসাথী মোড়ে ওই লোহার রথ এনে রাখা হয়। রথের দিন পাল্কি করে লালজি মহারাজকে এনে রথে চড়ানো হয়। তার পর রথ টেনে নিয়ে যাওয়া হয় ১০৮ শিবমন্দির পর্যন্ত। সেখানে সাত দিন ধরে থাকে রথ।