নদিয়ার রেস্তোরাঁয় টেবিলে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে রোবট অনন্যা! – robot waitress ananya serving food at restaurant in nadia


গৌতম ধোনি, কৃষ্ণনগর: ব্যস্ত রেস্তোরাঁয় কিচেন থেকে খাবার নিয়ে গেস্টদের টেবিলে পৌঁছে দিচ্ছে চারটি মেয়ে। সামনে কেউ এসে পড়লে তারা সবিনয়ে বলছে, ‘আই অ্যাম অনন্যা। সাইড প্লিজ়।’ কারও সঙ্গে ধাক্কা লেগে গেলে তারা ইংরেজিতে বলছে, ‘আমি খুবই দুঃখিত। এটা হওয়া উচিত ছিল না। আগামীতে এ রকম যাতে আর না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকব।’এই মেয়েদের চার জনেরই নাম অনন্যা। শুধু নাম নয়, তাদের দেখতেও অবিকল একরকম। তাদের নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই রেস্তোরাঁয় খেতে আসা অতিথিদের। না, এই চার কন্যার কেউই মানুষ নয়। এরা সকলেই যন্ত্রমানবী অর্থাৎ রোবট। কৃষ্ণনগর শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ভাতজাংলায় ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ‘মাদার’স হাট’ রেস্তোরাঁয় দেখা মিলছে তাদের। আর এই রোবট সার্ভিস দেখতে ভিড় করছেন মানুষ। বেড়ে গিয়েছে সেলফি তোলার হিড়িক।

কিন্তু যন্ত্রমানবীদের নাম অনন্যা কেন?
রেস্তোরাঁর এক কর্মী শুভঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘খাবারে-আন্তরিকতায় মায়ের ছোঁয়া যেন থাকে – এই ভাবনা থেকেই আমাদের এই রেস্তোরাঁ। এখন এখানে ১৫০ জন মহিলা কর্মী রয়েছেন। ২০১৩ সালে আমাদের এই রেস্তোরাঁ যখন শুরু হয়েছিল, সেই সময়ে তিনজন মাত্র মহিলা কর্মী ছিলেন। এর মধ্যে দু’জন ছেড়ে গেলেও একজন থেকে যান। সেই দিদির নাম অনন্যা। তিনি এখন আর শারীরিক কারণে কাজে আসতে পারেন না। তাঁকে সম্মান জানাতেই আমরা রোবটদের নাম রেখেছি অনন্যা। এই রোবট সার্ভিস শুরু হয়েছে মাস দেড়েক ধরে।’

চার ফুট উচ্চতার রোবটগুলির প্রতিটিতে চারটি করে শেলফ বা তাক রয়েছে। কিচেন থেকে কমান্ড দিয়ে দিলে এক সঙ্গে চার জনের খাবার নিয়ে নির্দিষ্ট টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে রোবটগুলি। রেস্তোরাঁর মহিলা কর্মীরা সেই খাবার সার্ভ করছেন। বিদেশে বেশ কিছুদিন ধরেই হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতে রোবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ক্রোয়েশিয়ায় ‘বটস অ্যান্ড পটস’ রেস্তোরাঁয় কিচেনে রান্নাও করে দিচ্ছে রোবট।

এ দেশেও রোবট ওয়েটারের দেখা মিলছে নয়ডা, আমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, মাইসুরু এবং বেশ কিছু বড় শহরে। তবে এ রাজ্যে সম্ভবত প্রথম এবং তা-ও আবার মহানগর থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটি রেস্তোরাঁয় রোবট ওয়েটারের ব্যবহার বেশ চমকে দেওয়ার মতোই। মূলত বেঙ্গালুরুর রেস্তোরাঁয় রোবট-ওয়েটার দেখেই এই আইডিয়া মাথায় আসে মালিকপক্ষের।

এর পরে জাপান-সহ একাধিক দেশ থেকে যন্ত্রাংশ আনায় রেস্তোরাঁর নিজস্ব টেকনিক্যাল ডেভলপমেন্ট টিম। সে সব অ্যাসেম্বল করে তৈরি করা হয়েছে রোবট-ওয়েটার অনন্যাদের। শুভঙ্কর বলছেন, ‘অন্যান্য রেস্তোরাঁয় যে রোবটগুলি ব্যবহার হয়, সেগুলির চলার পথ একটি নির্দিষ্ট ট্র্যাকে বাঁধা থাকে। ফ্লোরে নির্দিষ্ট লাইনে থাকা ম্যাগনেটিক চিপ ধরে বা সিলিংয়ের স্টিকার ফলো করে সেই রোবটগুলি চলাফেরা করে। তার বাইরে এক চুলও যেতে পারে না। কিন্তু আমাদের অনন্যারা একদমই আলাদা। নির্দিষ্ট ট্র্যাকে নয়, কমান্ড দিয়ে দিলে ওরা নিজেরাই চলে যায় টেবিলের কাছে। সামনে বাধা পড়লে সরে গিয়ে নিজের রাস্তা খুঁজে নেয়। প্রয়োজনে সাইড চায়। দুটো রোবট মুখোমুখি হয়ে গেলে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করে কেউ একজন পিছু হটে অন্যকে এগোনোর রাস্তা দেয়।’

রেস্তোরাঁর মালিক গড়াই পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য বললেন, ‘আমাদের টেকনিক্যাল ডেভলপমেন্ট টিম খুব শক্তিশালী। দেখবেন আগামী এক বছরের মধ্যে এখানে প্রযুক্তিগত আরও অনেক চমক আনব আমরা।’

কিন্তু রোবট সার্ভিস বাড়লে আগামীতে কর্মী সঙ্কোচনের ভয় থাকবে না তো?মালিকপক্ষের বক্তব্য, মহিলা কর্মীরাই এই রেস্তোরাঁর আসল চালিকাশক্তি। ওঁদের কায়িক পরিশ্রম কমানোর কথা ভেবেই এই রোবট অনন্যাদের তৈরি করা হয়েছে। কিচেন থেকে বারবার আলাদা টেবিলে খাবার নিয়ে যেতে হচ্ছে না মাদার্স হাটের মায়েদের। রোবটদের নিয়ে যাওয়া খাবার তাঁরা স্রেফ সার্ভ করে দিচ্ছেন।’ মায়েদের কষ্ট কমাতে দৌড়ে বেড়াচ্ছে চার মেয়ে!



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *