Maoist Leader Arnab Dam,‘ও আজ বিপ্লবী…! আমার ছেলেটা যে ফিরে এলো না’, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আকুতি সৌম্যজিতের মায়ের – school teacher soumyajit bose mother letter to cm mamata banerjee for punishment maoist leader arnab dam


সুনন্দ ঘোষ
মায়ের মন। তাই কিছুতেই মানতে চায় না। কষ্টটা এখনও জমাট বেঁধে রয়ে গিয়েছে—৩৩ বছরের তরতাজা ছেলের তো কোনও দোষ ছিল না। তবু কেন ওরা মেরে দিল ওকে?মাঝে ১৪ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার হুগলির বাড়িতে বসে সেই মা চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর প্রশ্ন, ‘একেই কি সুবিচার বলে?’ যাঁর হাত থেকে এখনও মুছে যায়নি তাঁর ছেলের রক্ত, মায়ের অভিযোগ—সেই অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম যাতে জেলে বসেই পিএইচডি করতে পারেন, তার জন্য উদ্যোগ শুরু হয়েছে সরকারি তরফে। মিডিয়ায় আছড়ে পড়ছে একের পর এক খবর। অর্ণব কতটা ‘প্রতিভাবান’, যেন এমনটাই প্রতিভাত হচ্ছে সমাজে। অথচ তাঁর অন্যদিকটা থেকে যাচ্ছে অন্ধকারে।

মা, সুমিতা বসুর আকুতি, ‘এই অর্ণবই তো বলেছিল, আমার ছেলেকে ছেড়ে দেবে। অযোধ্যা পাহাড় থেকে ফোনে আমার ছেলে বলেছিল, মা চিন্তা কোরো না। দাদারা ছেড়ে দেবে বলেছে। কই ছাড়ল না তো!’ ভুগোলের শিক্ষক, সাতে-পাঁচে না-থাকা সৌম্যজিৎ বসু মা-স্ত্রী-পুত্রকে বাড়িতে রেখে বন্ধু পার্থ বিশ্বাসের সঙ্গে গিয়েছিলেন অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে।

পার্থ ছিলেন রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর। অযোধ্যা পাহাড়ে মাওবাদীদের হাতে ধরা পড়ে যান দু’জন। তখন সেখানকার এরিয়া কম্যান্ডার অর্ণব ওরফে বিক্রম। বেড়ানোর অছিলায় পার্থ আদতে মাওবাদীদের খবর সংগ্রহ করতে এসেছেন, এই অভিযোগে দুই বন্ধুকে অপহরণ করে মাওবাদীরা। মায়ের অভিযোগ, নিরীহ সৌম্য এর বিন্দুবিসর্গও জানতেন না।

তার দু’দিন পরে ২০১০-এর ২১ অক্টোবর, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন রাত ১১টা ৪০ মিনিটে হুগলির বাড়িতে সুমিতার মোবাইলে সৌম্যর নম্বর ফুটে ওঠে। সৌম্য নয়, ফোনের অন্য প্রান্তে ভেসে আসে অন্য গলা। মায়ের দাবি, ‘ফোনের ও-প্রান্ত থেকে বলা হয়, আমি পুরুলিয়া থেকে বিক্রম বলছি।’

সৌম্য কী করেন, কোন স্কুলে পড়ান, সেখানকার প্রধান শিক্ষকের নাম কী, মোবাইল নম্বর কত—এমন বেশ কিছু প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয় ওপার থেকে। বাড়িতে থাকা সৌম্যর দুই দাদা অভিজিৎ ও সুজিত পরস্থিতি বুঝতে পারেন। মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে সৌম্যর শ্বশুরবাড়িতে ফোন করে একই তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এর প্রায় ৪০ মিনিট পরে সৌম্য নিজে ফোন করে বলেন, ‘দাদারা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। কাল ছেড়ে দেবে বলেছেন।’ সেই শেষ শোনা যায় সৌম্যর গলা।

স্বপ্ন ছুঁয়ে PhD-র প্রবেশিকায় শীর্ষে জেলবন্দি অর্ণব

২০১১-র যে দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শপথ গ্রহণ করে, সেই ২০ মে পাহাড়ের বুকে ১৪ ফুট গর্তের নীচে দুই বন্ধুর দেহ মেলে। সুমিতা ও সৌম্যর ছেলের ডিএনএ নমুনা নিয়ে তা মিলিয়ে শণাক্ত করা হয় দেহ।

বুকের অতলে জমিয়ে রাখা কষ্টটা এত দিন পরে যেন নতুন করে খুঁচিয়ে দিচ্ছে সময়। মুখ্যমন্ত্রীকে মা লিখছেন, ‘কেমন করে ভুলি যে, এই হন্তারকই কথা দিয়েছিল ছেলেকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবে। তার কয়েক মিনিটের মধ্যে নিরীহ সৌম্যর প্রাণ কেড়ে নিতে হাত কাঁপেনি তার। আজ সে বিপ্লবী, মহান, সরস্বতীর উপাসক হিসেবে সমাদৃত। আর আমি…।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *