গতি বাড়ার কোনও খবর নেই। মাসের পর মাস ব্লকের নামে শুধু বন্ধ থাকছে ট্রেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনে এ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অভিযোগ উঠেছে, উন্নয়নের নামে ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হচ্ছে কিন্তু, শম্বুক গতিতে চলছে সেই কাজ। মাঝে শুধু হয়রানির শিকার যাত্রীরা।প্রায় দু’বছর ধরে এই ডিভিশনে এটাই যেন এখন দস্তুর। বহু ট্রেন বারবার বাতিল করা হচ্ছে জানিয়ে আদ্রা রেলওয়ে ইউজার্স অর্গানাইজেশনের সহ সম্পাদক দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘আদ্রা-মেদিনীপুর লোকাল তো কবে থেকেই বন্ধ হয়ে রয়েছে। মাঝে মধ্যেই বন্ধ থাকছে আদ্রা-আসানসোল, খড়্গপুর-গোমো, খড়্গপুর-হাতিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন। এছাড়া ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাঁচি-আদ্রা-হাওড়া ইন্টারসিটিকে। বলা হচ্ছে, রেলের ট্র্যাফিক এবং পাওয়ার ব্লকের কারণে বন্ধ রাখা হচ্ছে ট্রেন। গতি বাড়া তো দূরের কথা, কত দিন ধরে চলবে এই ব্লক?’
একই প্রশ্ন পুরুলিয়ার ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। ওষুধ ব্যবসার কাজে প্রায়ই কলকাতা যেতে হয় অক্ষয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বলেন, ‘এক্সপ্রেসের টিকিট কেটে যাত্রা করলেও ট্রেন কখন হাওড়া পৌঁছবে তার ঠিক নেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন সমস্যা। হাওড়া-চক্রধরপুর এক্সপ্রেসটিকে হাওড়ার বদলে সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে ছাড়া হচ্ছে। রাত ১২টা নাগাদ এই ট্রেন ধরতে সাঁতরাগাছি যাওয়া দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়। এ নিয়ে রেল নীরব। ট্রেনের গতি বাড়লে কম সময়ে পৌঁছনো যেত রাজ্য রাজধানীতে। সেটাও তো হচ্ছে না।’
আদ্রার স্থায়ী বাসিন্দা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘রেল যা খুশি তাই করছে। মানুষ আগে থেকে পরিকল্পনা করে ট্রেনে চাপে। হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ট্রেন। এর পর বলতে গেলে প্রতিটা ট্রেন চলছে দেরিতে। রেলের উন্নয়নের নামে ব্লক চাওয়া হচ্ছে। শুধু কথায় উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু, চর্মচক্ষে দেখা যাচ্ছে না। তাহলে গতি বাড়ানোর কথা বলে লাভ কী? আসল কথা হলো প্যাসেঞ্জার ট্রেন বন্ধ করে মালগাড়ি চালানো। সাধারণ মানুষের সুবিধা অসুবিধাকে কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না রেল।’
কেন এত ব্লক নেওয়া হচ্ছে? জানতে চাওয়া হলে আদ্রার সিনিয়র ডিসিএম বিকাশ কুমার বলেন, ‘ব্লক নেওয়া হচ্ছে মূলত রোড আন্ডার ব্রিজ, আরওবি এবং ট্র্যাক রিনিউয়াল করার জন্য। এতে সুরক্ষা বাড়বে।’
প্রায় একই কথা জানিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ওপি চারণ বলেন, ‘হাওড়ায় কাজ চলার জন্য সেখান থেকে চক্রধরপুর এক্সপ্রেসকে ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। যাত্রীদের যে সমস্যা হচ্ছে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। রেলের উন্নয়নমূলক কাজগুলো হলে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধা স্বাভাবিক ভাবেই বাড়বে।’
মানুষের ভোগান্তি আর অভিযোগ প্রসঙ্গে রেল আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। বলেন, ‘বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেব।’