Jorasanko Thakur Dalan,জোড়াসাঁকোর ঠাকুর দালানে এবার বিয়ে? – wedding will be held at rabindra bharati university jorasanko campus thakur dalan


‘একদিন জোড়াসাঁকোর বাড়ির ছাদের উপর অপরাহ্ণের শেষে বেড়াইতেছিলাম। দিবাবসানের ম্লানিমার উপরে সূর্যাস্তের আভাটি জড়িত হইয়া সেদিনকার আসন্ন সন্ধ্যা আমার কাছে বিশেষ ভাবে মনোহর হইয়া প্রকাশ পাইয়াছিল…’ জীবনস্মৃতিতে লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তরুণ বয়সে সে বাড়িরই ঠাকুর দালানে মঞ্চস্থ করেছিলেন ‘বাল্মীকি প্রতিভা’।নীলমণি ঠাকুরের তৈরি ভবনে বহু যত্নে লালন পালন করা হয়েছিল বাংলার নবজাগরণের, নবচিন্তা, নতুন ভাবনার। দ্বারকানাথ, দেবেন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথদের স্মৃতি ঠাকুরবাড়ি জুড়ে। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসের ঠাকুর দালানে কি এ বার বিয়ের উপাচার হবে?

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার প্রেক্ষিতে ঠাকুর পরিবারেরই সদস্য প্রণতি ঠাকুর এমন আর্জিতে চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। রেজিস্ট্রারকে গত ১৪ জুন প্রণতি লিখেছেন – আমার পুত্র সুপ্রভ ঠাকুরের বিবাহ উপলক্ষ্যে ব্রাহ্ম উপাসনার জন্য জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির ঠাকুর দালানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

চিঠির বয়ানেই স্পষ্ট যে শুভ্রকমলের সঙ্গে কথাবার্তার প্রেক্ষিতে তা লেখা হয়েছে। এবং ভিসি মৌখিক ভাবে অন্তত আপত্তি জানাননি।শুভ্রকমল নিজেও সে কথা অস্বীকার করছেন না। তাঁর কথায়, ‘আমার সঙ্গে কথা বলে, আমারই পরামর্শ মেনে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধরের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য একটা দরখাস্ত করা হয়েছে। তাই নিয়ে মিডিয়ার এত মাতামাতি কেন? এটা ওঁদের পারিবারিক বিষয়। এ সব নিয়েও খবর হয়! এটা আমার জানা ছিল না।’

১৯৬২ সালের ৮ মে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষ। সেই উপলক্ষে তাঁর নামে ইউনিভার্সিটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৬১ সালে। সে বছরই পশ্চিমবঙ্গ সরকার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ করায় বিধানসভায়। জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে অবশ্য এখন আর ক্লাস হয় না, সেটি বর্তমানে মিউজ়িয়াম।

ওই ক্যাম্পাস ক্লাস ওয়ান হেরিটেজ ভবন। বিয়ে বা এ ধরনের যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানই সেখানে নিয়ম-বিরুদ্ধ। আগেও কেউ কখনও বিয়ের জন্য ওই দালান ব্যবহার করেননি বলে জানাচ্ছেন হেরিটেজ বিশেষজ্ঞরা। সেখানেই প্রণতি ছেলের বিয়ের ব্রাহ্ম উপাসনার অনুমতি চাওয়ায় উঠেছে প্রশ্ন।

প্রাক্তন উপাচার্য তথা শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের বক্তব্য, ‘আমি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্র ভারতীর ভিসি ছিলাম। ঠাকুরবাড়ির বংশধর হলেও কারও ওখানে সামাজিক অনুষ্ঠানের কোনও সংস্থান নেই। এমনকী উপাচার্য অনুমতি দিলেও এটা হতে পারে না।’

বিয়ের উপাসনায় কী হয়? ব্রাহ্ম সমাজের আচার্যরা জানাচ্ছেন, এ হলো হিন্দু সমাজের বিয়ের অনুষ্ঠানের মতোই। এবং সেটি হয় সন্ধেবেলা। এতে বর ও কনে পক্ষের আমন্ত্রিতরা হাজির থাকেন। তাঁদের উপস্থিতিতে পাঠ, গানে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন আচার্যরা। বর-কনের আংটি ও মালাবদল হয়। উপস্থিত আমন্ত্রিতদের ‘পদ্ধতি’ দেওয়া হয়। ‘পদ্ধতি’তে থাকে বিয়েবাড়ির যাবতীয় অনুষ্ঠানের বিস্তারিত বিবরণ।

হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ঠাকুরবাড়ির দালানের সিঁড়িতে জুতো পড়ে ওঠা-নামাও বারণ। সেখানে কোনও ব্যানার, পোস্টার লাগানো যায় না। তেমন জায়গায় বিয়ের আসর বসবে কী ভাবে? বিদেশ থেকে ফোনে প্রণতি বলেন, ‘ওখানে কোনও সাধারণ নাচ-গান হবে না। উপনিষদ থেকে বিবাহ-সংক্রান্ত পাঠ ও গান হবে। উপাচার্যের কথা মতোই আবেদনপত্র জমা দিয়েছি আমি। বিয়ের অনুষ্ঠানের এখনও পাঁচ মাস বাকি। তা ছাড়া, আমরা কোনও লতায় পাতায় ঠাকুর পরিবারের বংশধর নই, সরাসরি বংশধর।’

চিঠিতে তিনি লিখেছেন – মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রপৌত্র আমার প্রয়াত স্বামী সুনন্দ ঠাকুর। … সুপ্রভের বিবাহ উপাসনার জন্য ঠাকুর দালানটিই সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় নিয়মকানুন মেনেই উপাসনার আয়োজন করা হবে।

রেজিস্ট্রার আশিসকুমার সামন্তের বক্তব্য, ‘ঠাকুরবাড়ির দালান বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে নিজস্ব অনুষ্ঠান ছাড়া কোনও দিনই অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়নি। ফলে ঠাকুরবাড়ির উত্তরসূরি হিসেবেও কেউ যদি বিয়েবাড়ি বা অন্য কোনও কারণে তা ব্যবহারের জন্য চিঠি দেন, সেটা আমাদের কাছে উৎকণ্ঠার। এই চিঠি পেয়েই আমরা ব্রাহ্ম সমাজের কাছে গোটা বিষয়টি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিতর্ক তৈরি হওয়ার আগেই ব্রাহ্ম সমাজের মতামত পেলে সুবিধা হবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *