অনেক কাজ হওয়া সত্ত্বেও সংযোজিত এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় ভোগান্তি কমছে না বৃহত্তর কলকাতা পুর-এলাকাুর। সম্প্রতি নবান্নে সভায় সংযোজিত এলাকায় উন্নয়ন-কাজ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ১৪৪ ওয়ার্ড বিশিষ্ট কলকাতা পুরসভার ৪৪টি ওয়ার্ড সংযোজিত এলাকায়।বেহালা, জোকা, গার্ডেনরিচ এবং যাদবপুর নিয়ে বিস্তৃত এই ৪৪টি ওয়ার্ড। বিস্তীর্ণ এলাকার একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে বৃষ্টি হলেই জল জমা। কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, সংযোজিত এলাকায় এখনও জল জমার কারণ হচ্ছে, কলকাতা এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্রুভমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (কেইআইআইপি) কাজে মন্থর গতি এবং লাগোয়া দুই পুরসভা মহেশতলা এবং রাজপুর-সোনারপুরে কোনও পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা না থাকা।
সংযোজিত এলাকার নিকাশি জল বের হওয়ার কোনও রাস্তাই নেই। ফলে বৃষ্টি বেশি হলেই জমা জলের সমস্যায় পড়তে হয় সংযোজিত এলাকায়। মূল কলকাতার মতোই ধারাবাহিক ভাবে সংযোজিত এলাকার ম্যানহোল থেকে পলি তোলা হয়। তাতেও নিকাশি-পথ মসৃণ হয়নি বলে আধিকারিকরা জানাচ্ছেন। সংযোজিত এলাকার নিকাশি পথের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বেগোর খাল, মণি খাল, চড়িয়াল খাল, রেনিয়া খাল, কেওড়াপুকুর খাল এবং টালি নালা।
এই সব খাল দিয়েই সংযোজিত এলাকার নিকাশির জল গিয়ে পড়ে হুগলি নদীতে। কিন্তু খালগুলির নাব্যতা এতটাই কমে গিয়েছে, সংযোজিত ওয়ার্ডের অনেক জায়াগাতেই পাম্প করে খালে জল ফেলা হলে সেই জল আবার খাল উপচে এলাকায় ঢুকে পড়ে। ফলে এলাকার জল নামাতে কলকাতা পুরসভাকে নির্ভর করতে হয় খালের জলের স্তর নামার জন্যে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মহেশতলা, রাজপুর-সোনারপুর এবং কলকাতার সীমানায় কার্যত কোনও নিকাশি ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি। এক সময়ে কলকাতার পরে এই দুই পুর-এলাকায় ছিল চাষের জমি। সহজেই কলকাতার নিকাশির জল খালে গিয়ে পড়ত। গত বিশ বছরে এই সব এলাকায় খালের পথ রুদ্ধ করে চাষের জমিতে অপরিকল্পিত ভাবে একের পর এক বহুতল উঠেছে।
অনেক এলাকায় খালের পথ দখল করেও বাড়ি তোলার অভিযোগ রয়েছে। এই সব সমস্যা নিয়ে সেচ দপ্তরের সঙ্গেও একাধিক বার বৈঠক করেছেন পুর-আধিকারিকরা। তবে সুরাহা অধরাই। সংযোজিত এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আরও একটি সমস্যা হলো কেইআইআইপি প্রকল্পের অধীনে যে সব এলাকায় নর্দমা নির্মাণ করা হয়েছে, তার অধিকাংশই এখনও মূল নিকাশি পথের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি। অত্যন্ত মন্থর গতিতে কেইআইআইপি প্রকল্পের কাজ চলায় নিকাশি বিভাগের পুর-আধিকারিকরা বিরক্ত।
প্রকাশ্যে বার বার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। তিনি বলেন, ‘কেইআইআইপি প্রকল্প নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।’ নিকাশি বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘সীমানা এলাকার নিকাশি উন্নয়ন নিয়ে আমরা মহেশতলা এবং রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।’