Calcutta High Court,ছেলেকে ফিরিয়ে দাও, আর্তি নিঃস্ব বাবার – barasat man request to calcutta high court to get back his missing son


বছর পাঁচেক আগের কথা। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে ছেলে বলে গিয়েছিল, ‘বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি।’ সেই ছেলে আজও ফেরেনি। ক’দিন পরে বাবার হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ আসে, ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে দিতে হবে ২০ লক্ষ টাকা। বারাসত থানায় অভিযোগ হয়। ওই পর্যন্তই! তার পর থেকে প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরছেন অসহায় বাবা। হোয়াটসঅ্যাপের সূত্র ধরে একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।তবে আসল অভিযুক্তের নাগাল পাওয়া যায়নি। সেই ধৃতও এখন জামিনে মুক্ত। আর টানা পাঁচ বছর ধরে ছেলের খোঁজ করতে করতে আর্থিক ভাবে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন বাবা। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ছেলে কাঞ্চন নিখোঁজ পরে প্রথমবার হাইকোর্টে মামলা করেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী কার্তিকচন্দ্র সরকার। নিখোঁজ হওয়ার সময়ে বছর তিরিশের কাঞ্চন পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করে চাকরির পরীক্ষার কোচিং নিচ্ছিলেন।

পুলিশ ও নিম্ন আদালতকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে মামলার নিষ্পত্তি করে দেয় হাইকোর্ট। ছেলে ফেরেনি। গত বছর মার্চে ফের হাইকোর্টে মামলা করেন কার্তিকবাবু। এতদিনে মামলাটির মাত্র দু’টি শুনানি হয়েছে। মাঝের এই সময়ে শাটল কক হয়ে কার্তিকবাবু ঘুরে বেরিয়েছেন এ দোর থেকে ও দোরে। অভিযোগ, কিছু দালাল আইনজীবীর নাম করে কাঞ্চনকে খুঁজে দেবে বলে কার্তিকবাবুর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ৬ লক্ষ টাকা।

পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে অসহায় ওই বাবার কাছ থেকে টাকা হাতানোর। শুধু তাই নয়, ছেলের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, এই খবর দিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে কেউ। ছেলে তো ফিরে আসেইনি, উল্টে গিয়েছে টাকা। কার্তিকবাবুর নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কাহিনিটা এখানেই শেষ নয়। ছেলেকে খুঁজে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গরিবদের কম্বল বিতরণের জন্যও তাঁর কাছ থেকে হাজার দশেক টাকা নিয়েছেন তথাকথিত সমাজসেবীরা। তাঁরাও কথা রাখেননি। শুধু তাঁরা কেন, কেউ কথা রাখেনি।

আর তাতে পরিস্থিতিটা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, এখন ছেলের খোঁজ করতে থানায় গেলেই কার্তিকবাবুকে শুনতে হচ্ছে জেলে ভরে দেওয়ার হুমকি। পুলিশের দাবি, তাঁর ছেলে নাকি পাগল। কার্তিকবাবুর পাল্টা যুক্তি, ছেলে যদি পাগলই হবে, সে চাকরির পরীক্ষার কোচিং নেবে কেমন করে?

কার্তিকবাবুর আইনজীবী অমিতাভ ঘোষ বলেন, ‘ছেলেকে খুঁজে পেতে এক বাবার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে কত সুযোগসন্ধানী ওই বৃদ্ধের টাকা লুটেছে, তার হিসেব নেই। যে যা চেয়েছে ওই বৃদ্ধ দিয়ে দিয়েছেন এই আশায়, যে ছেলে ফিরবে। কিন্তু ছেলে ফেরেনি।’

মঙ্গলবার হাইকোর্টে কার্তিকবাবু এসেছিলেন ছেলেকে খুঁজে পাওয়ার মামলার যাতে দ্রুত শুনানি হয়, তার আবেদন করতে। তবে এই মামলার যিনি বিচার করবেন, সেই বিচারপতি না থাকায় বছর সত্তরের কার্তিকবাবু অসুস্থ বোধ করায় বসে পড়েন আদালতের মেঝেয়। জোড়হাতে আইনজীবীদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, ‘আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন। কত লোক, কত টাকা ছেলেকে ফেরানোর জন্য আমার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে, সে হিসেব আর রাখি না। আর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব, সেই ক্ষমতাও আমার নেই। আমার ছেলেটা শুধু ফিরে আসুক।’

জামিনে ‘তোলাবাজি’ পুলিশের, থানায় বৈদ্যুতিক শকের নালিশ! ঢোলাহাট শুনানি আজ

কার্তিকবাবুর আইনজীবী অমিতাভ ঘোষ জানান, গত বছর মার্চে হাইকোর্টে নতুন করে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলা গত বছর ১৫ জুন ও ৩ জুলাই দু’বার ওঠে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে। সেখানে পুলিশ একটি রিপোর্ট দিলেও তাতে সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। গত বছরের ১১ জুলাই মামলা ওঠার কথা ছিল হাইকোর্টে। তবে বছর ঘুরে গেলেও সেই মামলার শুনানি হয়নি।

তাঁর মামলার যাতে দ্রুত শুনানি হয়, তার আর্জি জানাতেই এদিন হাইকোর্টে এসেছিলেন কার্তিকবাবু। তবে বিচারপতি না আসায় সেই আর্জিও জানাতে পারেননি। ছেলে কাঞ্চন নিখোঁজ হওয়ার পর ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার মামলাটি হয়েছিল বারাসত আদালতে। ওই আদালতে কার্তিকবাবুর আইনজীবী সুপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, ‘পুলিশ কাঞ্চনকে খুঁজে দেওয়ার জন্য কোনও পদক্ষেপ করেনি। ফলে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। হাইকোর্টে দীর্ঘ দিন মামলা না ওঠায় এখন পুলিশেরও জবাবদিহির দায় নেই।’ এই জাঁতাকলে পড়ে সব দিক থেকে নিঃস্ব বাবার একটাই আর্তি। ‘আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দাও।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *