Russia Ukraine War,ছুটিতেও শান্তিতে নেই উরগেনের, উপরে উড়ছে নজরদারি ড্রোন – russian army surveillance with drone camera to urgen tamang of kalimpong


সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি
তাঁকে নিরন্তর তাড়া করে বেড়াচ্ছে অশান্তি। ছুটিতেও তাড়া করছে ড্রোন। কলিম্পংয়ের উরগেন তামাং পাকেচক্রে এখন রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে ক্রাইমিয়ায়। রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে নেমেছেন। স্বেচ্ছায় নয়। সম্পূর্ণ ভুল বুঝিয়ে তাঁকে অন্য চাকরির কথা বলে পাঠানো হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে। সম্প্রতি সেই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দশ দিনের ছুটি পেয়ে সাময়িক স্বস্তির কথা জানিয়েছিলেন কালিম্পংয়ে।কিন্তু, স্থায়ী হয়নি সেই স্বস্তি। ছুটিতে যেখানে পাঠানো হয়েছে তাঁকে, সেখানে মাথার উপরে ক্রমাগত উড়ে বেড়াচ্ছে সেন্সর লাগানো ড্রোন। সামান্য নড়াচড়ার ইঙ্গিত পেলেই ওই সমস্ত ড্রোন খবর পাঠাচ্ছে ইউক্রেনের সেনা শিবিরে। তারপরেই ধেয়ে আসছে গোলা। কানে তালা লাগানো ওই গোলার শব্দে দু’দণ্ড ঘুমোনোর উপায় নেই। তার পরে রাত সাড়ে আটটা বাজলেই আবার শুরু হচ্ছে ট্রেনিং।

ফ্রন্টলাইন থেকে দু’দিন আগে উরগেনকে নিয়ে আসা হয়েছে সমুদ্রের ধারে ছোট একটা জঙ্গলে। সেখানেই বাঙ্কারে এমন ‘ছুটি’ কাটছে তাঁর। সমুদ্রের ধারে জঙ্গলের ভিতরে লম্বা নিকাশি নালার মতো কাটা ড্রেন। তার উপরে গাছের ডাল, পাতা দিয়ে ঢাকা। দেখলে মনে হবে, সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে বুঝি বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনের ড্রোন তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির ক্যামেরা দিয়ে দিনভর ওই জঙ্গল চষে বেড়াচ্ছে।

বন্দুকের নিশানার বাইরে থেকেই ড্রোনের নজরদারি চলছে বলে গুলি চালিয়ে নামানোর সুযোগ নেই। কিন্তু ড্রোনের সেন্সরে অস্বাভাবিক কিছু নজরে এলেও সেই খবর পৌঁছচ্ছে ইউক্রেনের সেনা ঘাঁটিতে। তার পরে দূরপাল্লার গোলা ছুটে আসছে।

কালিম্পংয়ের পুর প্রধান রবি প্রধানকে উরগেন বলেছেন, ‘ছুটি মাথায় উঠেছে। সব সময়ে ভয়ে মরছি, এই বুঝি ইউক্রেনীয় ড্রোন আমাদের গতিবিধি টের পেয়ে যায়।’ রাশিয়ায় ভারতীয় দূতাবাস উরগেনকে উদ্ধারের ব্যাপারে আশ্বাস দিলেও এখনও পদক্ষেপ কিছু করেনি। তবে উরগেন হাল ছাড়তে নারাজ। তিনি জানতে পেরেছেন, ভারত সরকারের হস্তক্ষেপে ইতিমধ্যেই রাশিয়া থেকে পনেরো জন ভারতীয়কে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁরা সকলেই এজেন্টদের মাধ্যমে এ দেশে ঢুকে যুদ্ধে সামিল হতে বাধ্য হয়েছিলেন। উরগেনের প্রশ্ন, ‘তা হলে আমার বেলাতেই কেন ভারত সরকার উদ্যোগী হবে না?’

বাঙ্কার থেকে খানিক মুক্তি, দূতাবাসে যোগাযোগ উরগেনের

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হচ্ছে পুরোপুরি ভাবে প্রযুক্তি নির্ভর। স্যাটেলাইটের নজরদারি, ড্রোনের নজরদারি নির্ভর এই যুদ্ধে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে গোলা ছোড়া হচ্ছে একেবারে নির্ভুল ঠিকানায়। তার পরেই উরগেনদের মতো শত শত ভাড়াটে সেনাদের ফ্রন্টলাইন যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে। শত্রু সেনার বিরুদ্ধে মুখোমুখি কামানের লড়াই, শত্রুদের শহর দখল করতে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁদেরই। সেই কারণে যুদ্ধে দু’পক্ষের ভাড়াটে সেনারাই বেশি মরছে।

উরগেন বলেন, ‘রাশিয়া আমার মিত্র নয়। ইউক্রেন আমার শত্রুও নয়। তার পরেও এই যুদ্ধে আমায় লড়তে হচ্ছে।’ কালিম্পংয়ের পুর প্রধান অবশ্য এ সব নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য, যে ভাবে হোক, উরগেনকে উদ্ধার করে দেশে ফেরানো। তিনি বলেন, ‘আমি দিল্লিতে রাশিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। চিঠি পাঠিয়েছি। শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেটাই দেখার।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *