তার দু’পাশে ঝাউ ও নানা বাহারি ফুলের গাছ। সব কিছুতেই যত্নের ছাপ স্পষ্ট। বিশাল জমি নিয়ে এই বাড়ির নিরাপত্তায় কম করে ৩০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো। এখানেই শেষ নয়। হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া রাখার মতো কারবার জামালের! তার সুইমিং পুলে খেলা করে কচ্ছপ। এ বার এই কচ্ছপ নিয়েই বিপদ পড়েছে সে। পুলিশের পাশাপাশি জামালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বন দপ্তর।
বন দপ্তরের ডিএফও মিলনকান্তি মণ্ডল বলেন, ‘জামাল সর্দারের বাড়িতে অবৈধ ভাবে ইন্ডিয়ান সফট শিল্ড টার্টেল রাখা আছে। ওই টার্টেল ধরা, মারা কিংবা পালন করা আইনত দণ্ডনীয়। দোষী প্রমাণিত হলে কমপক্ষে সাত বছরের জেল ও ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।’
শখ করে জামাল একটি ঘোড়াও পুষেছিল। সেই ঘোড়া দেখভালের জন্য দশ হাজার টাকা দিয়ে লোক রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রাসাদোপম বাড়ি, সুইমিং পুল, বাগান পরিষ্কারে আরও ছ-সাত জন লোক রয়েছে। সে জন্যেও মাস গেলে মোটা টাকা গুনতে হয় জামালকে। প্রশ্ন উঠছে, কোথা থেকে আসে এত টাকা? দশ বছর আগেও জামাল কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার বাইরে বসে মুহুরির কাজ করত।
থানায় যাঁরা অভিযোগ জানাতে আসতেন তাঁদের সাহায্য করে বিশ-তিরিশ টাকা হাতে পেত। সামান্য মুহুরি থেকে জামালের উল্কার গতিতে এই উত্থান ঘিরেই উঠছে নানা প্রশ্ন। স্থানীয়দের কথায়, শাসক দল ও পুলিশের একাংশের মদতেই এত বাড়বাড়ন্ত জামালের। জমির দালালি দিয়ে শুরু হয়েছিল। পরে অন্যের জমি কাড়া, এক জমি বার বার বিক্রির মতো নানা জালিয়াতিতে হাত পাকায় সে।
অভিযোগ, টাকাপয়সা হওয়ার পরে এলাকার স্বঘোষিত মাতব্বর হয়ে ওঠে জামাল। নিজের বাড়িতেই বিচারসভা বসাত। লোকজনকে নিয়ে এসে অকথ্য অত্যাচার করত। সেই অত্যাচারের আঁতুড়ঘর ছিল বসতবাড়ির পাশেই মার্বেল বাঁধানো বৈঠকখানাটি। অভিযোগ, এখানেই জামাল প্রতিবেশী এক মহিলার পায়ে লোহার বেড়ি দিয়ে রেখেছিল।
তারপর তার স্যাঙাতরা ওই মহিলাকে বেদম লাঠিপেটা করে। ওই মহিলা ও তাঁর স্বামী অনেক কাকুতি মিনতি করলেও সন্ধের আগে ছাড়া মেলেনি। ছাড়া পেয়েই পুলিশের দ্বারস্থ হন নির্যাতিতা। যদিও তাঁর অভিযোগ, সোনারপুর থানা প্রথমে জামালের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নিতে চায়নি। শেষে বারুইপুর পুলিশ সুপারকে চিঠি লিখলে সোনারপুর থানা অভিযোগ নেয়।
এ দিন জামালের সেই বৈঠকখানায় গিয়ে লোহার শিকল চোখে পড়েছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার যখন জামালের স্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাঁর জবাব ছিল গোরু-ঘোড়া বেঁধে রাখতেই লোহার শিকল রাখা হয়েছে। যদিও কোন গোরু বা ঘোড়াকে লোহার শিকল পরিয়ে রাখা হয়, তা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন স্থানীয়রা। বুধবার গ্রামেরই এক মহিলা অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামীকেও ওই বৈঠকখানায় নিয়ে গিয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে মারধর করা হয়েছিল।
যাকে ঘিরে এত বিতর্ক সেই জামালের কোনও খোঁজ নেই। ফোন বন্ধ। আপাতত জামালের দুই শাগরেদকে হেফাজতে নিয়ে পুলিশ জাল গোটানোর চেষ্টা করছে। বারুইপুর পুলিশ জেলার এক কর্তা বলেন, ‘পালিয়ে কতদূর যাবে। আজ নয় কাল জামাল ধরা পড়বেই।’