Neet Pg Application,দাও ৯০ লাখ! ভর্তি হয়ে যাও সার্জারিতে, নেট-পিজি আবেদনকারীকে ফোনে টোপ – neet pg application are baited over phone for college admission


রূপক মজুমদার, বর্ধমান
নেট-পিজি কেলেঙ্কারি নিয়ে সরব দেশ। সর্বোচ্চ আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এখনও শুরু করা যায়নি কাউন্সেলিং। বহু ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যত প্রশ্নের মুখে। তবুও হেলদোল নেই দুষ্কৃতীদের। পরের বছর নেট-পিজির জন্য আবেদন করেছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, মেমারি পুরসভার হেল্‌থ অফিসার, চিকিৎসক তনভি আজমি।গত মঙ্গলবার বেজে উঠল তনভির মোবাইল —
– নমস্কার ম্যাম, আমাদের পক্ষ থেকে মার্কস ম্যানিপুলেশন করানো হচ্ছে। আপনার স্টেট কি ওয়েস্ট বেঙ্গল?
– হ্যাঁ, ওয়েস্ট বেঙ্গল।
– ডিস্ট্রিক্ট কোনটা?
– বর্ধমান।
– বর্ধমান? ওকে। তো ম্যাম, আপনার যে ক্যাটেগরি থাকবে তার উপর যে কাট অফ যাবে, সেই কাট অফ আমরা বানিয়ে দেবো। তাতে আপনি নিজের স্টেটেই গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজে পিজি পেয়ে যাবেন।
– আচ্ছা। মানে কী ভাবে আপনি মার্কস বানাবেন, একটু বলবেন?

– হ্যাঁ অবশ্যই। ধরুন, ২০০ কোয়েশ্চেন থাকে, ঠিক আছে ম্যাম। আগে আপনাকে ব্রাঞ্চটা বলতে হবে যে কোন ব্রাঞ্চে যাবেন। ২০০ কোয়েশ্চেনের মধ্যে ১০০ কোয়েশ্চেন ব্ল্যাঙ্ক ছেড়ে দিতে হবে। বাকি ১০০ কোয়েশ্চেন আপনাকে অ্যাটেন্ড করতে হবে। যেটা পারবেন সেটারই উত্তর দেবেন। যেটা পারবেন না, সেটা ছেড়ে দেবেন। তাতে নেগেটিভ মার্কিং হবে না।

এটা তো কম্পিউটার বেস্‌ড টেস্ট। যখন এনটিএ-তে আপনার অ্যানসার স্ক্যান হবে, সেখানে আমাদের লোক থাকবে। যারা ইন্ডিভিজুয়ালি ইনভল্‌ভড এই কাজের মধ্যে। আপনি তো নিশ্চয়ই শুনেছেন যে মার্কস ম্যানিপুলেশন হয়। আমাদের লিঙ্কআপ থাকে সেখানে। সে-ই আপনাকে মার্কস বানিয়ে দেবে। যখন রেজ়াল্ট বেরোবে, তখন আপনি পরীক্ষায় কী করে এসেছিলেন আর রেজ়াল্টে কী মার্কস এসেছে, সেটা বুঝে যাবেন।

– আচ্ছা, কোয়েশ্চেন কি আগে থেকে বলে দেওয়া হবে?
– না, কোয়েশ্চেন বলে দেওয়া হবে না। ….ওয়ান কোয়েশ্চেনে আপনি ফোর মার্কস পাবেন। তা হলে ধরুন, ১০০ কোয়েশ্চেন যেটা ব্ল্যাঙ্ক রাখবেন তাতে আপনি ৪০০ মার্কস পেয়ে যাবেন। বাকি ১০০ কোয়েশ্চেন যেগুলি আপনি অ্যাটেন্ড করবেন তাতেও যদি আপনি সব ঠিক অ্যানসার করে ৪০০ পেয়ে যান, তা হলে আমি কাট অফ দেখে ব্ল্যাঙ্ক কোয়েশ্চেনের মার্কস ঠিক করব।

আবার যদি আপনার অ্যানসার থেকে নেগেটিভ মার্কিং হয়ে যায়, তা হলে আমাদের হাতে থাকা কোয়েশ্চেনের মার্কস দিয়ে সেটা ব্যালেন্স করে দেবো। ১০০টা কোয়েশ্চেন আপনাকে ব্ল্যাঙ্ক ছাড়তেই হবে আর বাকি ১০০টা অ্যাটেন্ড করতে হবে।

– এটা যে ঠিকঠাক ভাবে হবে আর আমি চান্স পেয়ে যাবো এটার শিওরিটি আছে?
– হ্যাঁ, অবভিয়াসলি শিওরিটি আছে। কারণ, যত টাকাপয়সা লাগবে সবটাই আপনি অনলাইন ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে দেবেন। এক টাকাও আপনার থেকে আমি ক্যাশ নেব না। আপনি যদি একটু ব্রাঞ্চটা বলে দেন তা হলে আমিও টাকার ব্যাপারে সব ক্লিয়ার করে বলে দেবো। কত টাকা লাগবে, কী ভাবে লাগবে, সব জানিয়ে দেবো। বলতে পারবেন কোন ব্রাঞ্চে আপনি নিতে চান?

– ধরুন, গাইনি।
– দেখুন ম্যাম, যদি আপনি মেডিসিনে যেতে চান, ৯০ লাখ টাকা লাগবে। সার্জারিতে ৯০ লাখ, গাইনিতে ৬০ লাখ, ডার্মাতে ৭০ লাখ লাগবে। ইএনটি, রেডিয়োলজিতে খরচ পড়বে ৭০ লাখ। এরকম রেট আছে ম্যাম। – রেটটা তো অনেক হাই হয়ে যাচ্ছে, তো আমার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। – আপনার বাজেটটা আমাকে কি জানিয়ে দেবেন? তা হলে আমি জানিয়ে দেবো তার মধ্যে কী আসছে।

– আমি মিডিওকার ফ্যামিলির মেয়ে। আমার পক্ষে এত টাকা দেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। – ঠিক আছে। কোনও ব্যাপার না। আপনাকে টাকাটা কিন্তু রেজ়াল্টের পরে দিতে হবে। আপনি ইন্টারেস্টেড হলে আপনার ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশনের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। আপনার কাজ হবে কিনা সেটা ওখান থেকে গ্রিন সিগনাল পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে জানিয়ে দেবো।

তার পর ওখানে কিছু রেজিস্ট্রেশন ফি বা বুকিং অ্যামাউন্ট লাগবে। মার্কস ম্যানিপুলেশন কিন্তু ১০০-২০০ সিটের মধ্যে হয় না। এটা আমরা ২০-২৫টা সিটের মধ্যে করি। সিটের বুকিং অ্যামাউন্ট হচ্ছে ৩ লাখ টাকা। যেটা আপনাকে ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশনের পরে দিতে হবে। তার পর বাকি টাকা রেজ়াল্ট বেরোনোর পর আপনাকে দিতে হবে। – এখন তো আমার পক্ষে এত টাকা দেওয়া কোনও মতেই সম্ভব নয়। আমি খুবই মিডিওকার ফ্যামিলির মেয়ে।

– আপনার বাজেটটা কি আমাকে জানিয়ে দেবেন ম্যাম? – আমি একটা জব করি, সেখান থেকে আমাকে ফ্যামিলির সবকিছু মেনটেন করতে হয়। বাবা-মা অসুস্থ। তো সেই হিসেবে এখন আমার কাছে ব্যালেন্স খুবই কম। সম্ভব না। – আচ্ছা ঠিক আছে। কোনও ব্যাপার না। থ্যাঙ্ক ইউ। – থ্যাঙ্ক ইউ।

ভুয়ো বিজ্ঞপ্তিতে প্রতারিত হয়েও চাকরি জুটল ছাত্রীর

এই কল রেকর্ড সমেত নিজের অভিযোগপত্র মেমারি থানায় জমা দিয়েছেন তনভি। পরীক্ষা যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয় অভিযোগপত্রে তার অনুরোধও করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার বলেন, ‘পোস্ট গ্র্যাজ়ুয়েশন করতে নিট-পিজি পরীক্ষায় বসার আবেদন করেছিলাম নির্দিষ্ট সময়েই। অগস্টে সেই বিষয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা হওয়ার কথা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ আমার মোবাইলে অচেনা একটি নম্বর (৭৪৪৯৮৬৭৩৮৯) থেকে ফোন আসে। বাইরে থাকায় কথা শুনতে সমস্যা হচ্ছিল। আমি পরে বাড়ি ফিরে ৯টা ৫০ নাগাদ ওই নম্বরে ফোন করি। স্বচ্ছ প্রবেশিকা পরীক্ষার ব্যাপারে সত্যিই আশঙ্কা হচ্ছে। সিবিআই যেখানে তদন্ত করছে, কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তার পরেও এই চক্রটি যে সমান ভাবে সক্রিয় সেটা পরিষ্কার এই ঘটনায়।’

বিষয়টি জেনে অ্যাসোসিয়েশন ফর হেল্‌থ সার্ভিস ডক্টর সংগঠনের রাজ্য কমিটি রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে চিঠি দিয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, ‘প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে, ফোনটি এ রাজ্যের মধ্যে থেকে আসেনি। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়েই খতিয়ে দেখছি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *