জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বেশ কয়েকদিন ধরেই যীশু সেনগুপ্ত(Jisshu U Sengupta) ও নীলাঞ্জনা সেনগুপ্তের (Nilanjana Sengupta) ডিভোর্সের খবরে শোরগোল ইন্ডাস্ট্রি ও নেটদুনিয়া। এই বিচ্ছেদের কারণ হিসাবে উঠে আসছে যীশু সেনগুপ্তের সঙ্গে তাঁর ম্যানেজারের সম্পর্ক। দীর্ঘ ২০ বছরের সংসার ভাঙার কারণেই নাকি সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন নীলাঞ্জনা। এমনকী কলকাতায় এসে খাদানের শ্যুটিংয়ের সময় নিজের লেক গার্ডেন্সের বাড়িতেও থাকছেন না যীশু। শোনা যাচ্ছে ইতোমধ্যেই আইনজীবীর পরামর্শও নিয়েছে নীলাঞ্জনা। অনুরাগী থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির বন্ধু বান্ধব, প্রায় সকলেই এই বিচ্ছেদের খবরে কার্যত হতবাক। কারণ যীশু আর নীলাঞ্জনা বরাবরই ছিলেন একে অপরের পরিপূরক। সেটেই আলাপ তাঁদের।
‘মহাপ্রভু’ সিরিয়ালের হাত ধরে অভিনয়ের দুনিয়ায় পা রাখেন অভিনেতা উজ্জ্বল সেনগুপ্তর ছেলে যীশু সেনগুপ্ত। সেই ধারাবাহিকের দৌলতে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষের ড্রয়িং রুমে। এরপর পরিচালক দীনেন গুপ্তর শেষ ছবি ‘ঋণমুক্তি’ র নায়ক হয়ে বাংলা ছবিতে অভিষেক ঘটে যীশু সেনগুপ্তর। সেই ছবি বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। এরপর বড়পর্দায় যীশুর জার্নি মোটেই সহজ ছিল। সেই সময় টালিগঞ্জে সাফল্যের চূড়ায় প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়। তাই হিরো হওয়ার জন্য বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল তাঁকে। কপালে জুটছিল শুধুই হিরোর ভাইয়ের রোল।
অন্যদিকে সুব্রত সেনের ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ ছবিতে বাংলা সিনেমায় ডেবিউ করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জনা ভৌমিকের মেয়ে নীলাঞ্জনা শর্মা। সেই ছবিতে প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করেন যীশু ও নীলাঞ্জনা। সেখান থেকেই শুরু তাঁদের প্রেমকাহিনী। বেশ কয়েকটি টেলিফিল্মে জুটি বেঁধে কাজ করেন যীশু-নীলাঞ্জনা। বেশ কয়েকটি ছবি হাতে পেলেও টলিউডে নিজের জায়গা পাকা করতে পারছিলেন না নীলাঞ্জনা। পরিস্থিতি বুঝে মুম্বইয়ে ধারাবাহিকের অফার নিয়ে চলে যান নীলাঞ্জনা। অন্যদিকে পর্দায় পার্শ্ব অভিনেতা হিসাবেই কাজ করে চলছিলেন যীশু। কিছু ছোট বাজেটের ছবিতে হিরোর রোল পেলেও তা বক্স অফিসে চলেনি। সেই সময় যীশুর পাশে ছিলেন নীলাঞ্জনা।
আরও পড়ুন- Arjun-Sreeja: বিচ্ছেদের পথে অর্জুন-সৃজা? সব্যসাচীপুত্রের পোস্টে ফের নয়া ইঙ্গিত…
২০০৪ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন যীশু-নীলাঞ্জনা। সেই সময় নায়কের ভাই বা ছেলের ভূমিকাতেই যীশুকে বারবার কাস্ট করা হত। ধীরে ধীরে ঋতুপর্ণ ঘোষের চোখে পড়েন যীশু। ঋতুপর্ণের একাধিক ছবিতে নানা চরিত্রে কাজ করে নয়া পরিচিতি পান যীশু। ‘নৌকাডুবি’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, ‘আবহমান’, ‘দ্য লাস্ট লিয়ার’ থেকে ‘চিত্রাঙ্গদা’, একের পর এক ছবি করতে থাকেন যীশু। নানাস্তরে স্বীকৃতি পান অভিনেতা। বানিজ্যিক ছবি করা ছেড়েই দিয়েছিলেন কিন্তু শুধুমাত্র কয়েকটি ভিন্নধারার ছবি করলে তো সংসার চলে না।
হাল ধরলেন নীলাঞ্জনা। তৈরি করলেন যীশুর ও তাঁর প্রযোজনা সংস্থা। অভিনয় ছেড়ে প্রযোজনা সংস্থাকেই নিজের সম্পূর্ণটা দিলেন। এককথায় যীশুকে প্রযোজক বানিয়েছিলেন স্ত্রী নীলাঞ্জনা। তাঁর বুদ্ধিতেই বৈষয়িক হয়ে ওঠেন নীলাঞ্জনা। দুজনের প্রযোজনা সংস্থা হলেও যীশু যখন অভিনয় নিয়ে ব্য়স্ত থাকতেন সেই সময়, প্রায় পুরো সময়টাই নীলাঞ্জনা দিয়েছেন ব্যবসা ও সংসার সামলাতে। তাঁদের প্রথম সিরিয়াল ‘অপরাজিত’ ছিল সুপারহিট। দ্বিতীয় সিরিয়াল ছিল ‘তোমায় আমায় মিলে’। ময়রার স্ত্রীর আইপিএস হয়ে ওঠার গল্পের নামকরণ করেছিলেন ঋতুপর্ণ নিজে। সেই ধারাবাহিকও ছিল হিট। এই ধারাবাহিকেরই সিক্যুয়েল ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’, যা এখনও চলছে রমরমিয়ে। ‘সঙ্গে সৃজিত’ টক-শোও ছিল তাঁদের কাজ। ঠিক এক বছর আগে একসঙ্গে তাঁরা শুরু করেছিলেন ‘লাভ বিয়ে আজকাল’ ধারাবাহিক। যদিও এই বছরের এপ্রিলে শেষ হয়ে যায় সেই ধারাবাহিক।
ছোটপর্দার সঞ্চালক হয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন যীশু। কিন্তু একসময় সেই সঞ্চালনাও হাতছাড়া হয় অভিনেতার। দিনের পর দিন মুম্বইয়ে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছেন যীশু। আর কলকাতায় বসে তাঁর ফিন্যান্স সামলেছেন নীলাঞ্জনা। যীশু নিজেই নানা সাক্ষাত্কারে বলেছেন যে নীলাঞ্জনাই তাঁর দুই মেয়ের নজর রাখেন, প্রযোজনা সামলান কারণ তিনি সময় দিতে পারেন না। বোঝাপড়ায় একে অপরের পাশে যাঁরা ছিলেন ২০ বছরেরও বেশি সময়, তাঁরা মিটিয়ে দেবেন একে অপরের ঋণ? সত্যিই কি সাফল্যের সিঁড়ি চড়তে গিয়েই পা ফসকালো অভিনেতার? প্রশ্ন দানা বাঁধছে অনেক। নীলাঞ্জনা তাঁর পদবী ছেঁটে ফেলেছেন, ছবি মুছে ফেলেছেন, কিন্তু এখনও নীরব যীশু।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)