ফলাফলের এই ট্রেন্ড দেখেই অভিষেক এ দিনের সভায় বলেন, ‘যাঁরা এই নির্বাচনে পঞ্চায়েত প্রধান, পুরসভার চেয়ারম্যান পদে থেকেও মানুষকে বোঝাতে অক্ষম হয়েছেন, যাঁদের এলাকায় প্রত্যাশিত ফল হয়নি, আমরা সেখানের টাউন সভাপতি এবং পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। একই ভাবে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা হবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না।’
তৃণমূলের একদল নেতা পঞ্চায়েত-পুরভোটে যতটা খাটাখাটনি করেন, তাঁদের কর্মকাণ্ড লোকসভা-বিধানসভা ভোটে অন্যরকম হয়ে যায় বলে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মূল্যায়ণ। প্রতিটি ভোটে দলের সমস্ত নেতা-কর্মীর যাতে একই ধরনের সক্রিয়তা থাকে, তার জন্য উদ্যোগী হতে চাইছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘পুরসভা নির্বাচনে টিকিট পাবেন, জিতবেন, কিন্তু লোকসভা ও বিধানসভায় দল প্রত্যাশিত ফল করবে না! যত বড় নেতার ছত্রচ্ছায়ায় আপনি থাকুন, আপনার বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। পঞ্চায়েতে টিকিট পাবেন, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান-উপপ্রধান হবেন, আপনি আপনার ভোটে জিতবেন আর বিধানসভা, লোকসভা নির্বাচনের সময়ে ভাববেন—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসে একটা মিটিং করবে। (তাতেই) প্রার্থী জিতবে। গায়েগতরে যে পরিশ্রম আপনি আপনার (পুর-পঞ্চায়েত) নির্বাচনে করেন, সেই পরিশ্রম প্রত্যেকটি নির্বাচনে করতে হবে।’
পুর ও পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের অনেক নেতা যে পরিশ্রম করেছেন, লোকসভা-বিধানসভায় সেটা করলে জোড়াফুলের ফলাফল আরও ভালো হতে পারত বলেও তৃণমূল নেতৃত্বের মূল্যায়ণ। উল্লেখ্য, পুরুলিয়া, বালুরঘাটের মতো আসনে অল্প ব্যবধানে বিজেপি জয়ী হয়েছে।
গত ১২ জুন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ‘স্বল্প বিশ্রাম’-এ যাওয়ার কথা বলেছিলেন অভিষেক। তখন অনেকেরই কৌতূহল ছিল, এই সময়টায় তিনি কী করবেন। এদিন অভিষেক নিজেই বলেন, ‘এই যে এক-দেড় মাস কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আপনারা আমাকে দেখেননি, তার কারণ পর্যালোচনার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আগামী তিন মাসের মধ্যে এর ফল আপনারা দেখবেন। আমি এক কথার ছেলে, কথা দিয়ে কথা রাখি।’
কী ফল দেখতে পাওয়া যাবে?
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর অভিষেক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হন। এই দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সংগঠনের সমস্ত স্তরে পদাধিকারীদের কাজের অ্যাপ্রেইজ়াল শুরু করেছেন তিনি। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে আগামী তিন মাসের মধ্যেই পারফরম্যান্সের নিরিখে পদক্ষেপ করতে চাইছেন অভিষেক।
তাঁর কথায়, ‘আগামী দিনের লড়াই আরও বৃহত্তর। আমাদের ২০২৬-এর জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। পুরসভায় যাঁরা দায়িত্বে আছেন, পঞ্চায়েতে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের কর্মীদের কথা ভাবতে হবে। নিজের কথা ভাবলে চলবে না।’ এদিন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সভায় বলেন, ‘যাঁরা নির্বাচিত হয়ে মানুষকে সেবা দেবেন না, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখব না। মানুষকে পরিষেবা দেওয়া আমাদের কাজ। গাড়িতে ঘোরার থেকে পায়ে হেঁটে ঘোরা ভালো।’