National Handloom Award,দুই মাকুর দুই টান! তাঁত বুনে সম্মানিত পূর্বস্থলীর খয়েরউদ্দিন – purbasthali khairuddin shaikh got national handloom award


সূর্যকান্ত কুমার, এই সময়, কালনা
নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা হ্যান্ডলুমের। অনেক তাঁতি ভিন্ন পেশায় চলে গিয়েছেন, অনেকে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে পাড়ি দিয়েছেন ভিন্ রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে যেন সুড়ঙ্গের শেষে আলোর রেখার মতোই ন্যাশনাল হ্যান্ডলুম অ্যাওয়ার্ডের চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেলেন পূর্বস্থলীর লক্ষ্মীপুরের তাঁতি খয়েরউদ্দিন শেখ। খাদি, কটন, জামদানি শাড়ি বুনে এই পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।আগামী ৭ অগস্ট ন্যাশনাল হ্যান্ডলুম ডে-তে নয়াদিল্লিতে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। বছর আটচল্লিশের এই তাঁতশিল্পীর আশা, একদিন কোনও না কোনও ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে হস্তচালিত তাঁত। ফিরবে স্বমহিমায়। পূর্বস্থলীর লক্ষ্মীপুর স্টেশন বাজার এলাকায় বাড়ি খয়েরউদ্দিনের। এক সময়ে ওই এলাকার বহু মানুষ তাঁতের কাজে যুক্ত ছিলেন।

হস্তচালিত তাঁত যন্ত্রের আওয়াজে মুখরিত হয়ে থাকত গোটা এলাকা। বারো বছর বয়সে, ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়ে তাঁতের কাজে হাতেখড়ি খয়েরউদ্দিনের। বাবা অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয়। সংসার চালাতে রোজগারের জন্য চোখ বুজে বেছে নিয়েছিলেন তাঁতের কাজকেই।

খয়েরউদ্দিন বলেন, ‘বাড়ির সামনে এক মহিলার পাশে বসে নকশার কাজ শিখি। এর পর ধীরে ধীরে শুরু করি তাঁতের কাজ।’ তবে তাঁতের কাজে যে পেট চালানো কঠিন, সে কথা মানছেন। একবার কেরালায় গিয়ে ১৯ মাস শ্রমিকের কাজও করে এসেছেন খয়েরউদ্দিন। পরে ফের হাতে তুলে নেন তাঁতযন্ত্র।

বলছেন, ‘যে শাড়িটা বানিয়ে পুরস্কার পাচ্ছি তা খুবই নরম। পরে খুব আরাম। দুই মাকুর দুই টান, তারপর ডিজ়াইন ঘোরানো। এ ভাবেই তৈরি করেছি শাড়িটি। শাড়িজুড়ে নকশা রয়েছে ফুলের উপর। চার মাস ধরে বানিয়েছি। দাম পড়ছে এক লক্ষ টাকা।’ নিজের তাঁতেই এই শাড়ি বুনেছেন।

বলছেন, ‘পুরস্কারের জন্য সমস্ত কৃতিত্বই আগে ন্যাশনাল হ্যান্ডলুম পুরস্কার পাওয়া গৌতম বসাকের মতো মানুষদের জন্য। ওঁরাই আবেদনপত্র এনে দেওয়া থেকে সব কিছু করেছেন। আমি ওঁদের বলতাম, এত দামি শাড়ি পাঠালাম। পুরস্কার না পেলে ফেরত পাব তো? ওঁরা ভরসা জুগিয়েছিলেন।’ গোয়ালপাড়ার তাঁতি গৌতম বসাক বলেন, ‘এ রকম শিল্পীরা যাতে অন্ধকারে থেকে না যান, তার যতটা পেরেছি সাহায্য করেছি আমরা।’

স্ত্রী সাবিনা বিবি, ছেলে জাফিরুল হাসান শেখ ও মেয়ে পারুপাবনি খাতুনকে নিয়ে সংসার খয়েরউদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘ছেলেকে বলেছি তাঁতের কাজই করতে।’ কিন্তু হ্যান্ডলুম এমন বেহাল, তা হলে ছেলেকে উৎসাহী করছেন কেন? খয়েরউদ্দিনের জবাব, ‘আমার বিশ্বাস হস্তচালিত তাঁত একদিন না একদিন স্বমহিমায় ফিরবেই।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *