জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: টেকনিশিয়ানের কর্মবিরতিতে বন্ধ হয়ে গেল প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়(Prosenjit Chatterjee) ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যের ছবির শ্যুটিং। এই ছবির পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে(Rahool Mukherjee) নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছে চর্চা। একবার তাঁর উপর কর্মবিরতির নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ডিরেক্টরস গিল্ড(Director’s Guild)। পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও শনিবার সকালে আচমকাই কর্মবিরতিতে চলে যান টেকনিশিয়ানরা(Technician)। কী কারণে বন্ধ হল ছবির শ্যুটিং, তা নিয়ে ধোঁয়াশা। টেকনিশিয়ানদের এহেন আচরণে প্রতিবাদে নেমেছেন পরিচালকরা। সেখানেই নিজের খারাপ লাগার কথা ও ক্ষোভ জানালেন প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায় ও দেব (Dev)।
শনিবার সকাল সকালই টেকনিশিয়ানে পৌঁছে যান প্রসেনজিত্, দীর্ঘক্ষণ তাঁকে বসে থাকতে হয় ভ্যানেই। শ্যুট শুরু কেন হচ্ছে না, তাও জানতে পারেননি তিনি। অবশেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ৪০ বছরের বেশি এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে কোনও বিরোধিতা নেই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে একজন হোক বা ১০০ জন প্রযোজক, সবাই টেকনিশিয়ানদের কথা মাথায় রেখেই কাজ শুরু করে। আজ এখানে যাঁরা যাঁরা উপস্থিত রয়েছেন তাঁদের মধ্যে কেউ আমার থেকে বেশি এই টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োর বা এই ইন্ডাস্ট্রির খারাপ সময় দেখেনি। গোটা স্টুডিয়োতে ৪-৫ জনকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি, আর্টিস্টরা এসে কাজ করত। তার বেশি কাউকে দেখা যেত না। আজ তো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা চাই আরও বৃদ্ধি পাক। এখন প্যান ইন্ডিয়া কাজ হচ্ছে। অনেকে আসতে চাইছেন, অনেকে হয়তো কাজ করতে পারছেন না। এখানে আমাদের একটা কাজ আটকে গেল। আমার মনে পড়ে না যে কখনও সকাল ৯টায় কল থাকলে আমি ৫ মিনিট লেটে গিয়েছি। কারণ আমার মনে হয়, প্রতিটা মিনিটের দাম গুনতে হয় প্রযোজককে। বাংলা সিনেমার সঙ্গে যুক্ত সবাই চায় ভালো কাজ করতে কিন্তু আজ যেটা হল সেটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না’।
অভিনেতা আরও বলেন, ‘পরিচালককে প্রথমে কর্মবিরতি নিতে বলা হল, পরবর্তীতে অফিসিয়ালি সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হল, তারপর কেন আজ শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়া হল, তার কারণই জানি না। আমাদের কাছে কোনও উত্তর নেই। একজন পরিচালক ৯-১০ মাসে একটা চিত্রনাট্য তৈরি করে, তাঁকে এইভাবে অপমান করা হচ্ছে। কাজটাই বন্ধ করে দিল। কাজের সঙ্গেও তো আলোচনা হতে পারে। আগে বহুবার কাজের মাঝেই আলোচনা হয়েছে। এটা কাম্য নয়’।
প্রসেনজিতের সঙ্গে সহমত, দেব বলেন, ‘এই টেকনিশিয়ান স্টুডিয়ো রাজ্যসরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে বানিয়েছে যাতে কাজ আরও বাড়ে, যাতে আরও অভিনেতারা, টেকনিশিয়ানরা কাজ পান। অথচ সেই টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োতেই আজ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হল। কারণ কেউ জানে না। এবার প্রশ্ন হল, এই টেকনিশিয়ান স্টুডিয়ো আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কেন বানিয়েছেন? অবশ্যই আরও ভালোভাবে কাজ করার জন্য। আজকে সেখানেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হল। এবার বার্তা যাবে যে আমরা টেকনিশিয়ান বিরোধী’।
দেব আরও বলেন,’আজ এখান থেকে আমি আর বুম্বাদা চ্যালেঞ্জ করছি, আমি তো ১৭ বছর কাজ করছি আর বুম্বাদা ৪৫ বছর মানে আমার জন্মের আগে থেকে কাজ করছে। সেখানে একটা ঘটনা দেখান যে আমি বা বুম্বাদা কোনও টেকনিশিয়ানের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি’। পাশ থেকে প্রসেনজিত্ বলেন, ‘আমরা তো পরিবারের মতো’। সেই কথা টেনে নিয়ে দেব বলেন,’ আমরা সবসময় পরিবারের মতো থাকতে চেয়েছি। এরপর যদি আমাদের টেকনিশিয়ান বিরোধী বলা হয় তাহলে এর থেকে কষ্টজনক কিছু হবে না। আমি জানি এই ইস্যুটা নানাভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এখানে রাজনৈতিক রঙ লাগতে পারে। তবে আমি নিশ্চিত করে বলছি, এখানে কোনও রাজনৈতিক রঙ নেই। আমরা আমাদের ও টেকনিশিয়ানদের জন্যই এখানে আছি। কাজ বাড়াতে হবে, এটা কোনও রাজনৈতিক লড়াই নয়। আমি সবাইকে অনুরোধ করব এটার সঙ্গে রাজনীতি জড়াবেন না। আমরা চাই কথা বলে সুস্থ পরিসরে কাজ শুরু করতে’।
আরও পড়ুন- Shah Rukh Khan | Farah Khan: মা নেই! শাহরুখের কাঁধে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ফারহা…
প্রসেনজিত্ বলেন, ‘সিনেমার সঙ্গে যুক্ত সকলেই তো শিল্পী, তারা অনেক বেশি ইমোশনাল। আবেগ এখানে বড় ফ্যাক্টর। শিল্পী হিসাবে আমি গত ৯ দিন ধরে দোলাচলে আছি। সকালবেলা উঠে একটা সিন পড়ছি, ভাবছি পরেরদিন শ্যুট, এরপরেই দেখছি পরিচালক বদলে যাচ্ছে। এভাবে যদি আমাদের ইমোশন নিয়ে খেলা চলে, আমরা যদি ভালোবাসা হারিয়ে ফেলি, তাহলে তো আর কোনও কিছুই সৃষ্টি করতে পারব না। আমরা যদি সৃষ্টি করতে না পারি তাহলে দর্শকরাও আমাদের দেখবে না। শেষ অবধি তো সিনেমাটাই থেকে যায়’।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)