Senior Home Care Services,পয়সা দিয়ে আড্ডা কিনছেন নিঃসঙ্গ প্রবীণরা – organizations are working to help elderly person in kolkata


বারাসতের দশরথ সাহা ক্যান্সারে আক্রান্ত। রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার দশরথের স্ত্রী হার্টের রোগী। সাহা দম্পতির দুই ছেলে। দুই ছেলে কর্মসূত্রে থাকেন হংকং ও বিহারে। ইচ্ছে থাকলেও ঘুরে বেড়ানোর ক্ষমতা হারিয়েছেন দশরথ। বই পড়ে, স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করেই সময় কাটে তাঁর। ছেলেদের সঙ্গে কথা হয় ফোনে। কিন্তু কর্মব্যস্ততায় তাঁদেরও বারবার বিরক্ত করতে খারাপ লাগে। তাই গল্প করতে ইচ্ছে করলেই ডাক পড়ে এক সংগঠনের সদস্যদের।বিশাখা ঘোষের স্বামী মারা যান ২০১৫ সালে। ছেলেরা থাকেন ভিন রাজ্যে। ফাঁকা বাড়িতে পড়াশোনা করে, বাগান করেও হাতে বেশ খানিকটা সময় থেকে যায়। ব্যস্ত সন্তানদের ফোন করতে অস্বস্তি হলেও এক সংগঠনের সদস্যদের ইচ্ছে হলেই ডেকে নেন বিশাখা। প্রয়োজনে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়া, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিসের কাজও করে দেন তাঁরাই।

নিউ ব্যারাকপুরের দুলিন দাম হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। দুই ছেলেই প্রবাসী। সময় কাটাতে প্রবীণ দম্পতির সম্বল ওই সংগঠনের সদস্যরা। গল্প করার জন্য তাঁদের অপেক্ষায় বসে থাকেন তাঁরা। মুড়ি, চা খেতে খেতে চলে আড্ডা। ভালোমন্দ রান্না করলেও তাঁদের সঙ্গেই চলে খাওয়া-দাওয়া।

সময় যত আধুনিক হচ্ছে, একাকিত্বে ভরছে জীবন। ছেলেমেয়েরা কর্মসূত্রে বা বিবাহসূত্রে প্রবাসী। কেউ দু’বছরে একবার আসেন, আবার কেউ ৬ বছরেও আসতে পারেন না। সীমিত ছুটিতে বাড়ি এলেও বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ছেলেমেয়েরা। আর মেয়েদের শ্বশুরবাড়ি বাপের বাড়ি দুই দিকেই সামাল দিতে হয়। সম্বল ভিডিয়ো কল।

কিন্তু তাতে নাতি-নাতনিদের কোলে বসিয়ে গল্প শোনানো কিংবা খাওয়ানোর শখ মেটে কই! বাবা-মাকে রেখে বাইরে গিয়ে চিন্তায় থাকেন ছেলেমেয়েরাও। অনেকেই নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যেতে চান না। অথচ মিস করেন বাড়ির সবাই মিলে বসে টেবিলে চায়ের আড্ডা, গল্পগুজব।

তাই এখন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা এমন কিছু সংগঠনের খাতায় নাম লিখিয়েছেন যাঁরা এই সমস্ত পরিবারের জন্য বাজার করে দেওয়া থেকে শুরু করে তাঁদের সঙ্গে গল্প করা, মেডিক্যাল হেল্প সবই করে থাকেন। এ রকম কিছু সংস্থা এখন দাপিয়ে কাজ করছে কলকাতা ও বিভিন্ন জেলায়। দশরথ সাহা বলেন, ‘ওদের সঙ্গে গল্প করতে বেশ লাগে। প্রায়ই বাড়ি এসে খোঁজ নেয়।’

বিশাখার কথায়, ‘ছেলেমেয়ে তো এখন ওরাই। খোঁজ নেয়, সমস্ত কাজ করে দেয়। আমাকে কিছুই ভাবতে হয় না।’ ওই সংগঠনের ছেলেমেয়েরা এসে যাতে বিশ্রাম নিতে পারেন, কিংবা শরীর খারাপ হলে যাতে পাশে থাকতে পারেন, তাই ওঁদের জন্য একটি ঘরও রেখেছেন বিশাখা।

‘সাথে আছি’, ‘অটাম লিভস’, ‘মাইতিস’-এর মতো বেশ কিছু সংস্থা বিভিন্ন ভাবে বয়স্ক লোকজনকে সাহায্য করে থাকে। মাইতিস নামে সংস্থাটি কলকাতা-সহ হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, দুর্গাপুর, আসানসোল, রাঁচি-সহ বেশ কিছু জায়গায় অফিস খুলেছে। সংস্থায় প্রায় আড়াই হাজার মেম্বার। শুধু মেডিক্যাল ইস্যু নিয়ে সাহায্য করাই নয়, বয়স্ক মানুষকে আনন্দ দিতে তাঁরা নানারকম অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন।

অটাম লিভস-এর নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বয়স হলে অনেকেই অনেক রকম সমস্যায় পড়েন। কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে সেই কাজ করতে তাঁদের অসুবিধায় পড়তে হয়। তাই আমরা সবরকম ভাবে তাঁদের সাহায্য করি।’ সাথে আছি-র তরফে দিব্যেন্দু রায় জানান, ‘পাড়াগুলোর চরিত্র বদল হয়ে গিয়েছে। ‘পাড়ার ছেলে’ বলে কাউকে এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। বয়স্করা শুধু মানসিক ভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন তাই নয়, অসুস্থতার সময়েও দিশাহারা অবস্থা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে গুরুত্ব বেড়েছে এই ধরনের সংস্থার।’

দিব্যেন্দু বলেন, ‘যাঁরা ওল্ড এজ কেয়ার বা সিনিয়র সিটিজেন কেয়ারের উপরে কাজ করছেন তাঁরা বাড়িতে ডাক্তার নিয়ে যাওয়া, হাসপাতালে ভর্তি করানো, হাসপাতালে ভর্তির পরে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, ডাক্তার দেখাতে বা কোনও ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কাকু-কাকিমাদের পাশে থাকেন। পেনশন তোলা, মিউনিসিপ্যালিটির ট্যাক্স জমা করার মতো নানা অফিসিয়াল প্রয়োজনেও প্রবীণ নাগরিকদের সাহায্যে সবসময় আমরা আছি।’

এদের জন্যই বাইরে থেকেও কিছুটা হলেও মা-বাবা, দাদু-দিদার জন্য স্বস্তিতে সন্তানরাও। সংস্থাগুলি জানিয়েছে, এই পেশায় তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বছর ৪৫ এর মহিলা-পুরুষরাও কাজ করেন। প্রত্যেকেরই আধার কার্ড ও অন্যান্য পরিচয়পত্রের কপি জমা নেওয়া হয়। পাশাপাশি সংস্থা থেকেও পরিচয়পত্র দেওয়া হয়।

প্রবীণদের অন্দরমহলে যেহেতু এদের যাতায়াত, তাই নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই তাঁদের পরিচয়পত্র ও ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয়। বেতন শুরু হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা থেকে। অনেক সংস্থা আবার শিফটিং ডিউটি হিসেবেও বেতন দেয়। এর জন্য সংস্থাগুলি পারিশ্রমিক হিসেবে ওই সমস্ত পরিবারের থেকে কাজের অনুপাতে মাসে এক হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা নেয়। তবে তা পরিষেবার উপর নির্ভর করে।

বয়স্ক নাগরিকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে ২০০৯ সালে কলকাতা পুলিশের তত্ত্বাবধানে ‘প্রণাম’ নামে এক সংগঠনের সূচনা হয়। একা থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিরাপত্তার জন্য একগুচ্ছ ব্যবস্থা নিয়েছে কলকাতা পুলিশও।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *