বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর আর ৭৩ দিন বাকি। প্রতিমা তৈরির তোড়জোড় শুরু হওয়ার কথা জোরকদমে। কিন্তু প্রতিমা তৈরির অন্যতম উপাদান গঙ্গামাটিই অমিল আসানসোলে। ফলে শহরের কুমোরটুলি নামে খ্যাত মহীশিলার প্রতিমা শিল্পীরা চরম সঙ্কটে পড়েছেন। একইসঙ্গে সমস্যায় রয়েছেন রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, চিত্তরঞ্জন এবং সালানপুরের প্রতিমা শিল্পীরাও।সাধারণত শিল্পাঞ্চলের এই পটুয়াপাড়াগুলোয় দুর্গা প্রতিমা তৈরির বহু আগে থেকে গঙ্গামাটি আনা হয় পূর্ব বর্ধমানের কালনার একাধিক ঘাট থেকে। সেখানে মাটি কেটে নৌকায় ঘাটে আনা হয়। তার পর ট্র্যাক্টরে সেই মাটি এসে পৌঁছত আসানসোলে। কিন্তু এবার এই প্রক্রিয়ায় বাধা তৈরি করছে পুলিশ বা বিএলআরও বলে অভিযোগ করছেন মহীশিলার প্রতিমা শিল্পীরা।
কালনার মালতিপুর মোড় ঘাট সমেত একাধিক ঘাট থেকে মাটি কাটতে গেলেই বাধা দিচ্ছে সেখানকার পুলিশ-প্রশাসন। বক্তব্য, গঙ্গার মাটি আর কাটা যাবে না। মহীশিলার প্রতিমা শিল্পী সুরজিৎ পাল বলেন, ‘গত কয়েক দশক ধরে কালনার মালতিপুর মোড় ঘাট থেকে আমাদের এখানে গঙ্গামাটি আসত। এটা আমরা টাকা দিয়ে কিনতাম। এবার মাটি কেটে ট্র্যাক্টরে আনতে গেলেই ওখানে পুলিশ ও ব্লক প্রশাসন ধরছে। মাটি না আসায় আমরা কাজই সে ভাবে করতে পারছি না। এই মাটিতেই প্রতিমা সৃষ্টি হয়। প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ, অবিলম্বে সমস্যা না মেটানো গেলে আমরা চরম সমস্যায় পড়ব।’
আর এক শিল্পী অভিজিৎ রুদ্র পাল বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট টাকা দিয়ে মাটি কিনি। কিন্তু তাও পাচ্ছি না। শুনেছি দুর্গাপুর পর্যন্ত কিছু কিছু গাড়ি আসছে। তারপরেই পুলিশ ওই গাড়িগুলো আটকে দিচ্ছে। আমরা চাই, আসানসোল পুরসভা, জেলা প্রশাসন বিষয়টিতে নজর দিন। ওই জেলার সঙ্গে কথা বলুন। তাহলে আমাদের সমস্যা মিটবে। কয়েক ট্রাক মাটি এলেই আমরা প্রতিমা শিল্পীরা ভাগ করে কাজটা শুরু করে দিতে পারি। শুধু দুর্গা প্রতিমা নয়, এর পর লক্ষ্মী, কালী প্রতিমাতেও এই মাটি আমরা ব্যবহার করি।’
সালানপুরের প্রবীণ শিল্পী জিতেন পালের কথায়, ‘কালনার ঘাট নয়, কাটোয়ার গঙ্গা থেকেও মাটি আসে। এবার তা হচ্ছে না বলে বেজায় সমস্যায় পড়েছি।’ এখনও রানিগঞ্জ, জামুড়িয়ার শিল্পীরা গঙ্গামাটি পাননি বলে জানা গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কালনা ১-এর বিএলআরও সৈয়দ মাসুদুল আনোয়ার বলেন, ‘বর্ষাকালে জেলাশাসকের নির্দেশে অথোরাইজড ঘাটগুলোতেও মাটি কাটা বন্ধ থাকে। অবৈধ ভাবে মাটি কাটা হলে আমরা ব্যবস্থা নিই। গত ৪ মাসে মালতিপুর ঘাট সমেত ৪টি ঘাটে যারা অবৈধ ভাবে মাটি কাটছিল, তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছি।’
বিএলআরও জানান, প্রতিমা তৈরির জন্য মাটি নেওয়ার অনুমতি পেতে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে শিল্পীদের। কালনার এসডিপিও রাকেশ চৌধুরীও জানিয়েছেন, বেআইনি ভাবে মাটি কাটা হলে পদক্ষেপ করা হবে। তিনি বলেন, ‘কোথাও নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে বলে নজরে এলেই আমরা কেস করি।’
এ প্রসঙ্গে আসানসোল পুরসভার ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হক বলেন, ‘দুর্গাপুজো বাংলার সবার কাছেই বড় উৎসব। সেখানে ঠাকুরের প্রতিমা তৈরির মাটি আনার জন্য কারও বাধা দেওয়া উচিত নয়। যদি প্রশাসন মনে করে এর জন্য রয়্যালটি লাগবে তাহলে সেটা নিয়ে মাটি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হোক। আসানসোল মহকুমা বা কর্পোরেশন এলাকায় পুলিশ গঙ্গামাটির গাড়ি আটকালে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে অনুরোধ করব দ্রুত বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে যাতে শিল্পীদের কোনও অসুবিধা না হয়।’
তাঁর কথায়, আসানসোলে শুধু মহীশিলাতেই তৈরি হয় কয়েকশো প্রতিমা। এছাড়া আরও হাজারখানেক প্রতিমা তৈরি হয় মহকুমার বিভিন্ন জায়গায়। বলেন, ‘প্রতিমা শিল্পীরা দুর্গাপুজোর জন্যেই অপেক্ষা করে থাকেন। এর উপরেই তাঁদের সংসার বেঁচে রয়েছে।’
প্রতিবেদন সহায়তা: সূর্যকান্ত কুমার, কালনা