খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকেরা বলছেন, প্রথম গরমিল করা হতো গ্রাহক সংখ্যায়। কারণ, ভুয়ো রেশন কার্ডের পাশাপাশি বহু অনিয়মিত গ্রাহকও রয়েছেন। এর বাইরেও অনেক গ্রাহক আছেন, যাঁরা রেশনের আটা তোলেন না। বদলে তাঁরা ডিলারদের কাছ থেকে দাম বাবদ টাকা নিয়ে নেন। এর পরেও কিছু গ্রাহকের জন্য আটা কম পড়লে তাঁদের পরে কিছু বেশি আটা দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করে নেওয়া হতো।
এভাবেই চলত পুরো কারবার। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেআইনি এই লেনদেনগুলিকে দেখানো হয়েছে, ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট’ হিসেবে। আদালতে জমা দেওয়া ডায়েরিটি নদিয়ার জিকে অ্যাগ্রো নামের একটি আটাকল থেকে ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর বাজেয়াপ্ত করে ইডি। একই দিনে আরও একটি খাতা বাজেয়াপ্ত হয় নদিয়ারই এনপিজি ফ্লাওয়ার মিল থেকে। ওই আটাকলটি বাকিবুরের বলে ইডি সূত্রের খবর।
ডায়েরির পাতাতে ডিস্ট্রিবিউটরদের নামে আলাদা হিসেব রয়েছে। সেখানে শান্তিপুর বিএমবি সমিতি নামের এক ডিস্ট্রিবিউটরকে ২০২১ সালের নভেম্বরে চার বারে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে বলেও লেখা রয়েছে। এই সমিতির নামে ডিস্ট্রিবিউটরশিপ থাকলেও তা দেখাশোনা করতেন পেশায় সরকারি স্কুলের শিক্ষক শুভজিৎ কুণ্ডু। প্রতিটি লেনদেনে তাঁর সই রয়েছে।
এই বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি, জবাব দেননি হোয়াটসঅ্যাপেরও। লাল ডায়েরিতে লেখা রয়েছে, ডিপি চ্যাটার্জি নামে নাকাশিপাড়ার এক ডিস্ট্রিবিউটরের সঙ্গে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে কয়েক লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু সংস্থার পক্ষে অজয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা কোথায় টাকা নিলাম? উল্টে লরি ভাড়া-লেবার চার্জ বাবদ আমাদেরই আটা কলকে টাকা দিতে হয়েছে।’
কিন্তু সেই টাকা তো দেওয়ার কথা সরকারের? আমতা আমতা করে অজয় বলেন, ‘তা তো নিশ্চয়ই। কিন্তু আটাকল মালিকরা তা মানে না। জোর করে নিয়ে নেয়।’ তা হলে অভিযোগ করেননি কেন? ‘করেছি তো, কতবার। কিছুই হয়নি’— জবাব অজয়ের। তিনি বলেন, ‘দেখুন ভুয়ো রেশন কার্ড নিয়ে দুর্নীতি হতে পারে। তবে আমরা তা করিনা। সে কথা ইডি- খাদ্য দপ্তর সকলকে জানিয়েছি।’ উদ্ধার হওয়া বাকিবুরের খাতাতে আবার রয়েছে আরও বিশদ হিসেব।
প্রশ্ন উঠছে, এই টাকা কি শুধু আটাকল-ডিস্ট্রিবিউটর-ডিলারদের মধ্যেই বাটোয়ারা হয়েছে? ইডি সূত্রের খবর, এই টাকা গিয়েছে আরও কয়েকজন প্রভাবশালীর কাছেও। সে জন্যই এটাকে ‘অর্গানাইজ়ড ক্রাইম’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (চলবে)