Ration Scam : ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট’ দেখিয়ে ম্যানেজ গ্রাহকদেরও! – ration scam case adjustments for reducing to rice white from wholesaler to distributor and ration dealers


বরাদ্দ ১০ কুইন্টাল, চাহিদাও তাই। কিন্তু রেশন দোকানে পৌঁছল ৫ কুইন্টাল আটা। তা হলে, গ্রাহকরা কী পাবেন? আর আটা না পেলে গ্রাহকেরা অশান্তি জুড়বেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চালকল-আটাকল মালিক বাকিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বিপুল অঙ্কের এই দুর্নীতি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তদন্তকারীরা মনে করছেন এই দুর্নীতি এতটাই নিখুঁত ভাবে করা হয়েছিল যে সাদা চোখে তা বিশেষ ধরা পড়েনি।সূত্রের খবর, যে পরিমাণ আটা কম আসত ডিলারদের কাছে, তার বিনিময়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের থেকে তাঁরা টাকা পেয়ে যেতেন। এ ক্ষেত্রে এক কেজি গমের জন্য ২১ টাকা দেওয়া হতো। অন্যদিকে, আটাকল মালিক থেকে ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার— প্রত্যেকেই খাতায় কলমে ১০ কুইন্টাল আটার জন্যই নির্দিষ্ট কমিশন তুলতেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বিলি হতো ৫ কুইন্টাল আটা। বাকি ৫ কুইন্টালের হিসেব কী করে মেলানো হতো?

খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকেরা বলছেন, প্রথম গরমিল করা হতো গ্রাহক সংখ্যায়। কারণ, ভুয়ো রেশন কার্ডের পাশাপাশি বহু অনিয়মিত গ্রাহকও রয়েছেন। এর বাইরেও অনেক গ্রাহক আছেন, যাঁরা রেশনের আটা তোলেন না। বদলে তাঁরা ডিলারদের কাছ থেকে দাম বাবদ টাকা নিয়ে নেন। এর পরেও কিছু গ্রাহকের জন্য আটা কম পড়লে তাঁদের পরে কিছু বেশি আটা দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করে নেওয়া হতো।

এভাবেই চলত পুরো কারবার। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেআইনি এই লেনদেনগুলিকে দেখানো হয়েছে, ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট’ হিসেবে। আদালতে জমা দেওয়া ডায়েরিটি নদিয়ার জিকে অ্যাগ্রো নামের একটি আটাকল থেকে ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর বাজেয়াপ্ত করে ইডি। একই দিনে আরও একটি খাতা বাজেয়াপ্ত হয় নদিয়ারই এনপিজি ফ্লাওয়ার মিল থেকে। ওই আটাকলটি বাকিবুরের বলে ইডি সূত্রের খবর।

ডায়েরির পাতাতে ডিস্ট্রিবিউটরদের নামে আলাদা হিসেব রয়েছে। সেখানে শান্তিপুর বিএমবি সমিতি নামের এক ডিস্ট্রিবিউটরকে ২০২১ সালের নভেম্বরে চার বারে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে বলেও লেখা রয়েছে। এই সমিতির নামে ডিস্ট্রিবিউটরশিপ থাকলেও তা দেখাশোনা করতেন পেশায় সরকারি স্কুলের শিক্ষক শুভজিৎ কুণ্ডু। প্রতিটি লেনদেনে তাঁর সই রয়েছে।

এই বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি, জবাব দেননি হোয়াটসঅ্যাপেরও। লাল ডায়েরিতে লেখা রয়েছে, ডিপি চ্যাটার্জি নামে নাকাশিপাড়ার এক ডিস্ট্রিবিউটরের সঙ্গে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে কয়েক লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু সংস্থার পক্ষে অজয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা কোথায় টাকা নিলাম? উল্টে লরি ভাড়া-লেবার চার্জ বাবদ আমাদেরই আটা কলকে টাকা দিতে হয়েছে।’

Ration Scam : আটা-গমে ‘জল’ মিশিয়ে হেরাফেরি ২০ হাজার কোটির

কিন্তু সেই টাকা তো দেওয়ার কথা সরকারের? আমতা আমতা করে অজয় বলেন, ‘তা তো নিশ্চয়ই। কিন্তু আটাকল মালিকরা তা মানে না। জোর করে নিয়ে নেয়।’ তা হলে অভিযোগ করেননি কেন? ‘করেছি তো, কতবার। কিছুই হয়নি’— জবাব অজয়ের। তিনি বলেন, ‘দেখুন ভুয়ো রেশন কার্ড নিয়ে দুর্নীতি হতে পারে। তবে আমরা তা করিনা। সে কথা ইডি- খাদ্য দপ্তর সকলকে জানিয়েছি।’ উদ্ধার হওয়া বাকিবুরের খাতাতে আবার রয়েছে আরও বিশদ হিসেব।

প্রশ্ন উঠছে, এই টাকা কি শুধু আটাকল-ডিস্ট্রিবিউটর-ডিলারদের মধ্যেই বাটোয়ারা হয়েছে? ইডি সূত্রের খবর, এই টাকা গিয়েছে আরও কয়েকজন প্রভাবশালীর কাছেও। সে জন্যই এটাকে ‘অর্গানাইজ়ড ক্রাইম’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (চলবে)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *