বাংলা ভাগের যে কোনও চেষ্টা হলে তিনি যে তা করতে দেবেন না, সোমবার বিধানসভায় তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বঙ্গভঙ্গের পক্ষে সওয়াল করা বিজেপি নেতাদের বিধানসভায় এসে ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়ার চ্যালেঞ্জও জানিয়েছিলেন তিনি।এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী অবস্থানকে আরও জোরালো করতে তাঁর দল তৃণমূল বিধানসভায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাবও আনতে চলেছে। আগামী সোমবার এই প্রস্তাব আনা হবে বলে মঙ্গলবার তৃণমূলের পরিষদীয় দল সূত্রে জানা গিয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এই প্রস্তাব সংক্রান্ত আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রীও অংশ নিতে পারেন।
মঙ্গলবার পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় নিজের কক্ষে বলেন, ‘বাংলায় বিজেপি বারবার পরাজিত হচ্ছে। প্রতিহিংসা মেটাতে রাজ্যকে টুকরো টুকরো করার চেষ্টা করছে। রাজ্যের মানুষ যে এর বিরুদ্ধে একজোট, সেই বার্তা দিতেই আমরা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব আনছি বিধানসভায়। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গোটা বাংলা একজোট। বিজেপির যাঁরা বাংলা ভাগের দাবি তুলছেন, তাঁরা ফ্লোরে আসুন। নিজেদের বক্তব্য জানান।’ বিজেপির পরিষদীয় দলের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী সোমবারের আলোচনায় তারা অংশ নেবে।
খাতায়কলমে বিজেপিও বঙ্গভঙ্গ বিরোধী। সাম্প্রতিক বঙ্গভঙ্গ বিতর্কের প্রেক্ষিতে দলের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, বাংলা ভাগ তাদের অ্যাজেন্ডা নয়। তাতে অবশ্য বিজেপিতে বঙ্গভঙ্গ-পন্থীদের বক্তব্যে রাশ টানা যায়নি। সোমবার রাতেই কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বাংলায় জনবিন্যাসের ভারসাম্য রাখতে ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের সুরে মালদা, মুর্শিদাবাদকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার দাবি তুলেছেন।
তার আগে নিশিকান্তকে সমর্থন জানিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ এবং বহরমপুরের বিজেপি বিধায়করাও। তবে এই পর্বে বঙ্গভঙ্গ বিতর্কের সূত্রপাত হয় বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সৌজন্যে। সম্প্রতি তিনি উত্তরবঙ্গকে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে রেখেই নর্থ-ইস্টের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তাঁকে সমর্থন জানান দার্জিলিং-এর বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তাও।
এই আবহে বিধানসভায় তৃণমূলের আনতে চলা বাংলা ভাগ বিরোধী প্রস্তাবের আলোচনায় বিজেপি অংশ নেবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভার বাইরে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের তৈরি করা পশ্চিমবঙ্গ অবিভক্ত থাকবে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের প্রতি বঞ্চনা এবং পশ্চিমবঙ্গের জনবিন্যাস পাল্টে যাওয়া নিয়ে আমরা চিন্তিত। রাজ্যের ৭২টি জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিএসএফকে ফেন্সিং তৈরির জন্য জমি দিচ্ছে না। সোমবারের আলোচনায় আমরা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দেবো।’
রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যও এ দিন দিল্লিতে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ‘বিজেপির যাঁরা বাংলা ভাগ চাইছেন, সেটা তাঁদের বিচ্যুতি।’ কিন্তু প্রকাশ্যে বঙ্গভঙ্গের পক্ষে সওয়াল করা মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ, বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র এবং কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মাদের ওইদিন বিধানসভায় কী অবস্থান হবে, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। এই বিতর্কে মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এ দিন গৌরীশঙ্কর এবং সুব্রতর পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন।