অপরিচ্ছন্ন পুকুরের জল থেকে ছড়াচ্ছে ব্রেন-ইটিং অ্যামিবা! – kolkata several hospitals recently treated patients with brain eating amoeba infection


অনির্বাণ ঘোষ
কেউ আচমকা মৃগীর খিঁচুনিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কারও বা ঘাড় হয়ে যাচ্ছে শক্ত, সঙ্গে প্রলাপ। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে দেখা যাচ্ছে, এনকেফালাইটিসের এই সব লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মস্তিষ্ক নিছক সংক্রমণ ও প্রদাহের কবলেই পড়েনি, ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে তাঁদের মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোই।নেপথ্যে রয়েছে বিরল ও কুখ্যাত মস্তিষ্কখেকো বা ব্রেন-ইটিং অ্যামিবার সংক্রমণ। অজ্ঞাত কারণে এই সংক্রমণ এখন চোখে পড়ার মতো বেড়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ভয়ের হলো, এই সংক্রমণে মৃত্যুহার খুব বেশি, ৩০-৪০% ক্ষেত্রে বাঁচানো যায় না রোগীকে।

সম্প্রতি কলকাতার বেশ কয়েকটি হাসপাতালে মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবার সংক্রমণ নিয়ে আসা রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। অর্ধেকের বেশি রোগী সুস্থও হয়েছেন। কিন্তু পুরোপুরি সেরে উঠতে লম্বা সময় লাগবে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, বেলেঘাটা আইডি, ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেস-কলকাতাতেও (আইএনকে) এই ধরনের বেশ কিছু রোগীর সম্প্রতি চিকিৎসা হয়েছে। এখন এসএসকেএমেও দু’ জন চিকিৎসাধীন এই অসুখে। ওই হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি ব্রেন-ইটিং অ্যামিবা সংক্রমণের চিকিৎসা হয়েছে।

এসএসকেএমের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক যোগীরাজ রায় বলছেন, ‘আগে হয়তো চার-পাঁচ বছরে এই সংক্রমণ একজনের ধরা পড়তো। এখন সেটাই মাসে দু’-তিনটে হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ ওই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অলোকেশকুমার কোলে জানাচ্ছেন, সম্প্রতি তাঁদের বিভাগেই অন্তত সাত জন এবং নিউরো-মেডিসিন বিভাগে দু’ জনের রোগ ধরা পড়েছে।

মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ আশিস মান্না জানাচ্ছেন, ব্রেন-ইটিং অ্যামিবার চারটি প্রজাতি রয়েছে যার মধ্যে একই গোষ্ঠীভুক্ত নাগ্লেরিয়া ফাউলেরি এবং অ্যাকান্থামিবার সংক্রমণই বেশি হয়। এখন যেগুলি হচ্ছে, সেগুলি মূলত অ্যাকান্থামিবার সংক্রমণ।

যোগীরাজ জানাচ্ছেন, সেটা একদিক থেকে মন্দের ভালো। কেননা, নাগ্লেরিয়াতে মৃত্যুহার প্রায় ৮০-৯০% হলেও অ্যাকান্থামিবার ক্ষেত্রে বড়জোর ৩০-৪০% ক্ষেত্রে এড়ানো যায় না প্রাণহানি। আজকাল ডায়গনস্টিক ব্যবস্থায় উন্নতির কারণে রোগটা ধরা পড়ছে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নাগ্লেরিয়ার মতো অ্যাকান্থামিবাও আদতে একটি নিউরো-প্যাথোজেনিক ইনফেকশন। অর্থাৎ, প্রভাবিত হয় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র। ফলে গোড়ার দিকে সংক্রমণের জেরে জ্বর, মাথাব্যথা, বমির উপসর্গ দেখা গেলেও পরে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, ভুল বকা, মানসিক বিভ্রান্তি, খিঁচুনি, জ্ঞান হারানোর মতো উপসর্গ দেখা যায়।

সেই সব লক্ষণ দেখে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকরা ম্যানেঞ্জাইটিস বা এনকেফালাইটিস বলে সন্দেহ করছিলেন। কিন্তু রোগীদের মেরুদণ্ড থেকে নেওয়া সুষুম্নারস বা সেরিব্রো-স্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা করে অ্যাকান্থামিবার অস্তিত্ব মিলতে শুরু করতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে চিকিৎসক মহলের একাংশে।

কেননা, এই সংক্রমণের নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই বলে জানাচ্ছেন অলোকেশ। ফলে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করতে হয়। তিনি জানান, মূলত অগভীর পুকুর, ডোবার জলে স্নান করলে কিংবা অপরিচ্ছন্ন সুইমিং পুলে স্নান করলে ১০ লক্ষের মধ্যে একজনের এই সংক্রমণ হতে পারে। স্নানের সময়ে নাক দিয়ে ঢুকে পড়ে ওই অ্যামিবা একসময়ে ‘খেতে’ শুরু করে মস্তিষ্কের টিস্যু।

যদিও গত এক বছরে অন্তত ছ’ জন ব্রেন-ইটিং অ্যামিবার শিকার রোগীর চিকিৎসা করার পর আইএনকে-র ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ এ শোভনা বলছেন, ‘বাস্তবে দেখা যায়, ২০% রোগীর ক্ষেত্রে যথাযথ কারণটা চিহ্নিতই করা যায় না। আমাদের ছ’ জন রোগীর মধ্যে একজনের ক্ষেত্রেই সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার কথা জানা গিয়েছিল। বাকিরা কোথা থেকে সংক্রমিত হয়েছেন, জানা যায়নি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *