বুধবার বিকেলে ঘটনাটি পশ্চিম বর্ধমানের কুলটি থানার নিয়ামতপুর ফাঁড়ির অন্তর্গত লছিপুর এলাকায়। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন রাত পর্যন্ত মৃতের পরিবারের তরফ থেকে লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে মৌখিক ভাবে পরিবার গোটা ঘটনাটা জানিয়েছে। তার প্রেক্ষিতে পুলিশ একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর বারোর ওই বালক স্থানীয় একটি দোকান থেকে টাকা চুরি করেছে— এই অভিযোগ তুলে এ দিন সকাল থেকে দোকানদার ও তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য ছেলেটির খোঁজ করছিল। ওই বালকের বাবা পেশায় দিনমজুর, কোনও রকমে সংসার চালাতেন। মৃতের পরিবারের দাবি, রায়না, বুলু, সুভাষ, বৃন্দা ও উত্তম নামে স্থানীয় কয়েকজন তাঁদের বাড়িতে এসে বারো বছরের ওই বালকের খোঁজ করছিল। তারা বলছিল, ছেলেটি নাকি দোকান থেকে ২২০ টাকা চুরি করেছে।
নাবালকের বাবা তাঁর ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে এসে বলেন, সে কারও টাকা চুরি করেনি। সেই সময়ে তার মা ও অন্য কয়েকজন পড়শিও বেরিয়ে আসেন। তাঁদের সামনে থেকেই ওই নাবালককে টানতে টানতে নিয়ে যায় অভিযুক্তদের কয়েকজন, চড়-থাপ্পড়ও মারতে থাকে। সেই সময়ে নাবালকের বাবা তাদের বাধা দিতে যান। অভিযোগ, তখন সুভাষ, উত্তমরা ছেলেকে ছেড়ে বাবাকে বেধড়ক মারতে থাকে।
বালকের মা, দাদা ও কয়েকজন পড়শি বাধা দিতে গেলেও শোনেনি তারা। শাবলের আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে অচৈতন্য অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন বালকটির বাবা। ওই অবস্থাতেই তাঁকে ফেলে চলে যায় অভিযুক্তরা। জখম অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল ও পরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ওই বালকের মা বলেন, ‘আমার ছোট ছেলে এ দিন সকালে যখন দোকানে যায়, তখন ওকে একবার ওরা (বুলু, সুভাষ, উত্তমরা) ধরেছিল। আমার ছেলে বলে ও টাকা চুরি করেনি। এরপরে বিকেল আবার ওরা এসে চড়াও হয়। আমাদের কোনও কথাই ওরা শুনল না।’ ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় বাসিন্দা সন্ধ্যা বাউরির কথায়, ‘আমিও বারবার বলছিলাম, ওই ছেলে টাকা চুরি করতে পারে না। কিন্তু ওরা আমারও কোনও কথা শোনেনি। প্রথমে ছেলেটাকে টেনে নিয়ে গিয়ে মারছিল। তারপরে ওর বাবা বাধা দিলে তাঁকেও শাবল দিয়ে মারা হয়।’
কুলটি থানার ইনস্পেক্টর-ইন-চার্জ কৃষ্ণেন্দু দত্ত বলেন, ‘একটা গন্ডগোল হয়েছিল নিয়ামতপুর এলাকায়। তাতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের তরফে পুলিশকে মৌখিক ভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। একজনকে আটক করা হয়েছে। ঠিক কী কারণে গোলমাল, এর সঙ্গে আর কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’