Durgapur News,একাধিক নদীর জল বেড়ে প্লাবিত শিল্পাঞ্চল, চালু ত্রাণ শিবির – asansol and durgapur industrial areas were inundated by rising waters of several rivers


এই সময়: ২৪ ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে বানভাসি গোটা শিল্পাঞ্চল। জল বেড়েছে গাড়ুই, কুনুর, অজয় নদীতে। আসানসোল ও দুর্গাপুর পুরসভার পক্ষ থেকে বিশেষ ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। শুক্রবার সকালে দুর্গাপুর পুরসভার মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় জলমগ্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। দুর্গতদের উদ্ধার করে খাবারের ব্যবস্থা করেন তিনি।অনিন্দিতা বলেন, ‘ভয়াবহ পরিস্থিতি দুর্গাপুরে। চারদিকে শুধু জল। আমরা সবার কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি।’ দুর্গাপুর পুরসভার প্রায় ১২টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা জলের নীচে। ভয়াবহ পরিস্থিতি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেনগেট এলাকা। এখানে তামলা নালার জলে ডুবে গিয়েছে আশপাশের এলাকা। জল ঢুকেছে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। জলে আটকে পড়েন ১২ জন।

বেলার দিকে বোট নিয়ে জলবন্দিদের উদ্ধার করেন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের রাতুড়িয়ায় একটি বাড়িতে দেওয়াল চাপা পড়ে আহত হন এক ব্যক্তি। বেনাচিতির ঋষি অরবিন্দ নগর, বিদ্যাসাগরপল্লি, শ্রীনগরপল্লি, ৫৪ ফুট এলাকায় নিকাশি নালা উপচে রাস্তায় জল জমে যায়। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লির প্রায় প্রতিটি বাড়িতে জল ঢুকেছে।

অন্য দিকে, আসানসোল রেলপাড়ের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ফিরে আসে ২০২১-এর স্মৃতি। রেলপাড়ের মধ্যে থাকা গাড়ুই নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এদিন সন্ধ্যায় কল্যাণপুরে ব্রিজের উপরে গাড়ুই নদীর জলে ভেসে যায় একটি গাড়ি। রাত পর্যন্ত গাড়িটির খোঁজ মেলেনি। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দা অসীম ঘোষাল বলেন, ‘আমরা বারণ করেছিলাম। কিন্তু সম্ভবত চালক নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে জলের তোড়ে গাড়ি নিয়ে ভেসে যায়। গাড়িতে চালক ছাড়া আর কেউ ছিল কি না জানা যায়নি।’ গাড়ুই নদী লাগোয়া ঘনবসতিপূর্ণ বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকে পড়ে নদীর জল। বহু মানুষকে স্কুল ও ক্লাবে আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করে প্রশাসন।

পাশাপাশি শহরের দিলদারনগর, কল্যাণপুর, সেন র‍্যালে রোড, হটন রোড, চেলিডাঙার মতো বেশি কিছু এলাকার ব্রিজ ও রাস্তা জলের নীচে চলে যায়। আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের নির্দেশে ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হক, মেয়র পারিষদ ইন্দ্রাণী মিশ্র, বরো চেয়ারম্যান মুজাম্মিল শাহজাদা নজরদারি চালান নিজেদের এলাকায়। জলমগ্ন হয়ে পড়ে জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, কুলটির নিয়ামতপুরের বিভিন্ন এলাকা। রানিগঞ্জের মহাবীর কোলিয়ারির যাদবপাড়া ডিএভি পাবলিক স্কুল সমেত বেশ কয়েকটি বাড়িতে জল ঢুকে যায়।

হোসেননগরেও জল জমে। বৃষ্টিতে দামোদরের উপরে থাকা একটি অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো ভেঙে পড়ে। আসানসোলের মহকুমাশাসক (সদর) বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘রেলপাড়ের জাহাঙ্গির মহল্লা, রানিগঞ্জের হোসেননগর ও কুলটির ৬৬ ও ৭০ নম্বর ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এই সব জায়গা থেকে ৫০ জন মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয় রাখা হয়েছে।’

খনি এলাকা অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর ও উখড়ার ছবিও প্রায় এক। এখানে জল বেড়েছে কুনুর নদীর। উখড়ায় শুকোবাঁধ ভেঙে বেরিয়ে গিয়েছে প্রচুর মাছ। বৃষ্টির মধ্যেই মাছ ধরতে নেমে পড়েন এলাকার মানুষ। কাজোড়া গ্রাম রেল স্টেশনের সাইডিংয়ে ধস নামে। এ ছাড়া ধস নেমেছে খাসকাজোড়ায় ১০ নম্বর পিটের পিছনে প্রায় ৫০ মিটার এলাকায়। অন্ডাল স্টেশন লাগোয়া আন্ডারপাস জলের নীচে চলে যাওয়ায় উত্তরবাজার ও দক্ষিণবাজারে যাতায়াতের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

রণডিহায় পড়ে গিয়েছে একাধিক কাঁচাবাড়ি। এখানে চাষের জমিও জলে ভেসেছে। মানকরে খড়ি নদীর জলে ভেসে গিয়েছে মারো গ্রাম। বাসিন্দাদের অভিযোগ, খড়ি নদী সংস্কার না হওয়ায় জলধারণ ক্ষমতা কমেছে। টানা বৃষ্টিতে দামোদরের জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার বিকেল থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ২০ হাজার কিউসেকেরও বেশি জল ছাড়া হয়।

জলমগ্ন হয়েছে দামোদরের অন্য পাড়ের বাঁকুড়াও। প্রশাসন সূত্রে খবর, বৃষ্টিতে এখনও পর্যন্ত জেলার প্রায় ১২টি ব্লক কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩৪০টি বাড়ি। জেলা জুড়ে খোলা হয়েছে ১০টি ত্রাণ শিবির। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় দেড়শো জন মানুষ। বৃষ্টিতে সবচেয়ে জলমগ্ন হয়েছে বিষ্ণুপুর মহকুমার বিভিন্ন ব্লক।

নাগাড়ে বৃষ্টি, দক্ষিণবঙ্গে জলের তলায় রাস্তা-সেতু

কোতুলপুর ব্লকের ব্রহ্মডাঙা, বিবেকানন্দপল্লি সমেত একাধিক গ্রাম জলমগ্ন। বিভিন্ন এলাকা থেকে সাতটি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। শুক্রবার জলমগ্ন এলাকাগুলো খতিয়ে দেখেন কোতুলপুরের বিডিও দেবরাজ ঘোষ। জলে ভেসে যাওয়ায় এদিন কোতুলপুর-জয়রামবাটী রুটে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।

কামারপুকুর-জয়রামবাটী রাস্তায় হলদি নদীর উপর কালভার্ট জলমগ্ন হয়ে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন জায়গায় একাধিক কজওয়ে এই মুহূর্তে জলের নীচে। বাঁকুড়া ২-নম্বর ব্লকে মানকানালি সেতুর উপর দিয়ে বইছে গন্ধেশ্বরী নদীর জল।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *