কারণ, পূর্ব মেদিনীপুরকে ভাগ করে প্রশাসনিক জেলা করতে গেলে অনেক আইনি জটিলতা রয়েছে। যা সময়সাপেক্ষ। সরকার মনে করছে, ৪ হাজার ৭৮৫ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এই জেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সামাল দেওয়া একজন পুলিশ সুপারের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়াও সাইবার ক্রাইম ও মহিলা থানার সংখ্যাও বাড়ানো প্রয়োজন। নতুন পুলিশ জেলা হলে যা সহজে সম্ভব হবে।
তাই স্বরাষ্ট্র দপ্তর আপাতত তমলুক, হলদিয়া এবং কাঁথি পুলিশ জেলা তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে। যদিও এই জেলার চারটি মহকুমা তমলুক, হলদিয়া, এগরা এবং কাঁথি। এলাকার নিরিখে সবচেয়ে বড় মহকুমা কাঁথি। আয়তনে ১২৫১.২১ বর্গ কিলোমিটার। এই মহকুমার ৯টি ব্লককে নিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ জেলা করা প্রয়োজন বলে মনে করছে প্রশাসন।
এখানেই রয়েছে দিঘা, তাজপুর, মন্দারমণির মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে সারা বছরই দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মৎস্যবন্দর। ৬৫.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রতটও এই মহকুমায়। তাই স্থানীয় মানুষের সঙ্গে পর্যটকদেরও নিরাপত্তার স্বার্থে কাঁথিকে পৃথক পুলিশ জেলা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আবার হলদিয়া মহকুমার গুরুত্ব রয়েছে অন্য ক্ষেত্রে। এই বন্দর শহর শিল্পনগরী হিসেবে রাজ্যে পরিচিত। এই মহকুমার মধ্যেই অবস্থিত খেজুরি ও নন্দীগ্রাম। গ্রামীণ এলাকা হলেও দুটিই রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাপ্রবণ। বেশ কয়েক বছর ধরেই দফায় দফায় অশান্ত হয়েছে পুরো এলাকা। সম্প্রতি ওই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে রেয়াপাড়া ও তেখালি দুটি নতুন থানা তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি রামচক এবং সোনাচূড়াতেও দুটি আউটপোস্ট বানানো হয়েছে। থানা ভাগের অন্যতম কারণ হিসেবে হলদিয়া মহকুমা সদর দপ্তর থেকে এই অঞ্চলের ৭০ কিলোমিটার দূরত্বকে তুলে ধরেছিল স্বরাষ্ট্র দপ্তর। এই পুলিশ জেলার সঙ্গে এগরা মহকুমার একটি অংশও প্রস্তাবে যুক্ত করা হয়েছে। বাকি অংশটি জেলা সদর তমলুককে ঘিরে আলাদা পুলিশ জেলা হিসেবে গড়ে উঠবে।
২০০৭ সালে জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। বামেদের বিরুদ্ধে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নেমেছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। সেই আন্দোলনের জেরে পুলিশ গুলি চালালে ১৪ জন নিহত হন। এরপর সেখানকার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয় ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে।
এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী যোগ দেন বিজেপিতে। সেবারের নির্বাচনে মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। ভোট পর্ব মিটে গেলেও তারপর থেকে দফায় দফায় অশান্তি ছড়ায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। সরকার মনে করছে, এই জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে বিকেন্দ্রীকৃত পুলিশি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। যা সম্ভব পৃথক পুলিশ জেলা তৈরি করলেই।