Buddhadeb Bhattacharya,তিন সিদ্ধান্তের জেরে ৩ আন্দোলন সামলাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বুদ্ধদেব – buddhadeb bhattacharya failed to handle singur tata land protest


তিনটি আন্দোলন এবং তিনটি সিদ্ধান্ত। পাহাড়ের উচ্চতা থেকে মাত্র তিনবছরের মধ্যে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষপদে থাকা এক ব্যক্তিত্বকে নামিয়ে এনেছিল খাদের অতলে। আর প্রতিটি আন্দোলনের নেপথ্যেই ছিল জমির মালিকানা এবং অধিকার নিয়ে জমে থাকা বারুদের স্তূপ।২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৩৫টি আসন পেয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ক্ষমতায় আসার একমাসের মধ্যে সিঙ্গুরে টাটার জমি নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, টাটার সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে কথাবার্তা বললে শুরুতেই ঝামেলা মিটে যেতে পারত। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথমপর্বে কোনও আলোচনা করতে রাজি হননি মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

বরং ভোটের জেতার পরে তাঁর ‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০’ মন্তব্য সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকেও ক্ষেপিয়ে তোলে। বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের সমর্থন পেয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। পুলিশ প্রশাসনের একাংশের মতে, ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের রাস্তা আটকে আন্দোলন করার সময়েও প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে বুদ্ধবাবু কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নেন।

আসলে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতেই ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। সে বছরের ডিসেম্বর মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। যার রেশ ছড়িয়ে পড়ে দেশভর। পরবর্তীতে সেই ধাক্কা আর সামলাতে পারেননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন চলার সময়েই পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে শুরু হয় জমি রক্ষার লড়াই। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নামে সেই আন্দোলন হলেও পরে তা চলে যায় বিরোধী দল তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে।

এমনকী, মাওবাদীরাও যুক্ত হয়ে পড়েন জমি রক্ষার লড়াইতে। প্রবল প্রতিরোধের মুখে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন। কিন্তু এরপরেও রাস্তা কেটে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ পুলিশ সেখানে গুলি চালালে ১৪ জন নিহত হন। এতেই রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এলাকার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আন্দোলনকারীদের হাতে।

প্রশাসনিক প্রধান ছাড়াও দলীয় পদে থাকলেও নিজের দল সিপিএমকে সামলাতে পারেননি তিনি। অপারেশন সূর্যোদয়ের নামে এলাকা দখল করতে গিয়ে ফের সরকারকে সমস্যায় ফেলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। এরপরেই চরম ভুল সিদ্ধান্ত নেন স্বয়ং বুদ্ধবাবু। আক্রান্ত নন্দীগ্রামের বাসিন্দাদের প্রতি তাঁর ‘দে হ্যাভ বিন পেইড ব্যাক বাই দেয়ার ওন কয়েন’ মন্তব্য যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। বলা যেতে পারে, রাজ্যবাসীকেই নিজের বিপরীত অবস্থান নিতে বাধ্য করেন তিনি।

২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে মাওবাদীদের নেতৃত্বে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে গিয়েছিল মাওবাদীদের তাণ্ডব। সিপিএমের খাসতালুক হিসেবে পরিচিত একের পর এলাকা দখল করে নিতে থাকে তারা। ২০০৯ সালের জুন মাসে লালগড়ের ধরমপুরে ঢুকে পড়ে মাওবাদী স্কোয়াড সদস্যরা।

‘আমার এখন মনে হচ্ছে সিঙ্গুরে শিল্প হলে…’, বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পর আক্ষেপ মাস্টারমশাইয়ের

সে সময়ে দলের জেলা কমিটির এক প্রভাবশালী সদস্য সরাসরি বুদ্ধবাবুকে বলেন, ‘আপনি অনুমতি দিলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী একরাতের মধ্যে এলাকা পরিষ্কার করে ফেলবে।’ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘যে কাজ পুলিশের করার কথা, সেটা আপনাদের করতে হবে না।’

এরপর থেকে স্কোয়াড মেম্বারদের আর আটকানো যায়নি। কিষেণজির নেতৃত্বে পুরো এলাকায় রীতিমত সাম্রাজ্য বিস্তার করে ফেলে মাওবাদীরা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *