Buddhadeb Bhattacharya,বিজেপি সম্পর্কে একেবারে ঠিক ছিল ওঁর বিশ্লেষণ – buddhadeb bhattacharya had analyzed bharatiya janata party very well


ইউসুফ তারিগামি
(সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, কাশ্মীরের প্রাক্তন বিধায়ক) কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে কিছু বলতে গিয়ে প্রথমেই মনে আসছে গত শতাব্দীর আটের দশকের গোড়ায় আমাদের পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি বৈঠকের কথা৷ সে সময়ে কমরেড ভট্টাচার্য, অন্য কয়েক জন কমরেড ও আমি কেন্দ্রীয় কমিটিতে ‘আমন্ত্রিত’ হিসেবে প্রথমবার মনোনীত হয়েছিলাম৷ দেশের জটিল রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে বামপন্থার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এত ভালো বিশ্লেষণ করতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছাড়া অন্য কোনও সতীর্থ কমরেডকে আমি দেখিনি৷আজ স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, দিনের পর দিন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঠিক যে ভাবে বিজেপি-কে বিশ্লেষণ করেছিলেন, আজ ঠিক সে ভাবেই বিজেপি এগিয়ে গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ তৈরি করে ফেলেছে৷ বুদ্ধবাবুই প্রথম অনুমান করেছিলেন, দেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবধারায় ব্যাপক হারে পরিবর্তন ঘটাবে বিজেপি এবং যার জেরে আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি৷

সতীর্থ কমরেডদের সঙ্গে কী ভাবে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয়, সে ব্যাপারে কোনও দিন কোনও ‘রেসিপি’র বই লেখা হলে তার সেরা লেখক হতে পারতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পার্টির কোনও বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য দিল্লিতে পা রাখামাত্রই তিনি ভিন্‌ রাজ্যের কমরেডদের সম্পর্কে খোঁজ নিতে শুরু করতেন। জিজ্ঞেস করতেন প্রত্যেকের পরিবারের ব্যাপারে৷ নিজে যেমন খুব ভালো বক্তা ছিলেন, তেমনই ছিলেন মনোযোগী শ্রোতা৷ বিশ্লেষণী ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। যে কোনও মতবাদের পক্ষে-বিপক্ষে অবলীলায় একাধিক শানিত যুক্তি পেশ করতে পারতেন কমরেড ভট্টাচার্য। তবে নিজের যুক্তি পেশ করার আগে বাকি প্রত্যেকের কথা শুনতেন মন দিয়ে৷

কমরেড ভট্টাচার্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বেশ কয়েক বার দলীয় কাজে আমাকে সেখানে যেতে হয়েছিল৷ তখনও দেখেছি প্রশাসনিক কাজের ব্যস্ততা ও চাপের বাইরে প্রতিদিন ঠিক সময় বের করে তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন৷ দিল্লিতে দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময়ে কখনও ওঁকে মুখ্যমন্ত্রী-সুলভ ব্যক্তিত্বের মোড়কে গুটিয়ে থাকতে দেখিনি৷ এক অর্থে উনি ছিলেন স্পেশ্যাল কমরেড, যাঁর জীবনে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছিল দলের নির্দেশে রাজ্যবাসীর প্রতি ন্যায় ও কর্তব্যপালনের নামান্তর৷

দলের প্রতি একজন কমরেডের কতটা কর্তব্যনিষ্ঠা ও ভালোবাসা থাকলে নিজের শারীরিক অসুস্থতা উপেক্ষা করে ১৮ ঘণ্টার ট্রেন জার্নির ধকল সয়ে দিল্লি যাওয়া যায় পার্টির বৈঠকে অংশ নিতে! এ সব ক্ষেত্রে সেরা উদাহরণ কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ দিনের পর দিন এই কাজ তিনি করে গিয়েছেন হাসিমুখে৷ শেষে বুদ্ধদেবের শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে দল তাঁকে বিশ্রামে পাঠায়৷

‘ভরা থাক স্মৃতিসুধায়’, আজ শেষযাত্রা, দেহদান এনআরএসে

কমরেড ভট্টাচার্যর সঙ্গে আমার শেষবার দেখা কলকাতাতেই। আজ সে দিনটার কথা খুব মনে পড়ছে৷ প্রকৃত আদর্শবান কমরেড বুদ্ধদেবের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের স্মৃতি আমার পক্ষে কোনও দিন ভোলা সম্ভব নয়৷ পুরোনো সব দিনের কত কথা সে দিন হয়েছিল! সেই সময়েও তাঁর চোখে একজন তরুণ কমরেডের স্বপ্ন দেখেছিলাম৷ তখনও ভাবতেন, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট আবার ক্ষমতায় ফিরবে, সাধারণ মানুষ একদিন তাদের ভুল ঠিকই বুঝতে পারবে৷

সে দিন আমি উঠে আসার সময়ে কমরেড ভট্টাচার্য আমাকে জানিয়েছিলেন, তিনি আর সিগারেট খান না৷ এক সময়ে এই সিগারেট ছাড়ার জন্য আমি বুদ্ধদেবকে কত উৎসাহ দিয়েছি! তিনি সব শুনতেন মন দিয়ে, তার পর বলতেন নিজের সিগারেট-প্রেমের কথা, এ ব্যাপারে অসহায়তার কথা৷ এহেন মানুষ, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, সতীর্থ কমরেড, কাজের মানুষ-কাছের মানুষ বুদ্ধদেবকে সিগারেট ছাড়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম৷ সে দিন আবার দেখা করার জন্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। সেই অনুরোধ আর রাখতে পারলাম না।

লাল সেলাম, কমরেড৷ (সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন: অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *