টাটকা খাবার তাদের মুখে রুচছে না। কাঁঠাল দিলেও মুখ ফিরিয়ে থাকছে। খাঁচায় জ্যান্ত মুরগি দিলে সাপ-বেজি-বুনো বেড়ালে সাবাড় করে দিচ্ছে। দেখা মিলছে না ধূর্ত শিয়ালের।বন দপ্তরের অফিসারেরা সম্প্রতি কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার সাইড (যেখানে রানওয়ে-সহ ট্যাক্সি ও পার্কিং-বে রয়েছে) ঘুরে পরামর্শ দিয়েছেন, টাটকা নয়, বাসি, গন্ধ বেরিয়ে যাওয়া খাবার রাখতে হবে খাঁচায়। কারণ, দু’দিনের বাসি খাবারের প্রতি নাকি শিয়ালের খুব লোভ। জ্যান্ত নয়, মুরগি কেটে ছাড়িয়ে দু’দিন রেখে তার পরে খাঁচায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শিয়ালকে বাগে পেতে এখন বিমানবন্দরের ভিতরে ১৮টি খাঁচা রয়েছে। তার সংখ্যা বাড়িয়ে ৪০টি করতে বলা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।
আগের থেকে কমলেও কলকাতা বিমানবন্দরে শিয়ালের ‘রানওয়ে ভ্রমণ’ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখনও রানওয়ের উপরে শিয়ালের উঠে আসার খবর প্রতি মাসে গড়ে ১০টা করে মেলে। শহরে নামতে আসা যাত্রিবাহী বিমানের পাইলট এখনও রানওয়ের কাছাকাছি এসে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে বলেন, ‘আই ক্যান সি অ্যান অ্যানিম্যাল অন দ্য রানওয়ে।’ উপর থেকে তা শিয়াল না কুকুর, বেশিরভাগ সময়েই তা ভালো করে ঠাহর করতে পারেন না পাইলট। কখনও সরাসরি বার্তা আসে, ‘দেয়ার ইজ় আ ডগ অন দ্য রানওয়ে।’
এর পরের ঘটনাক্রম বেশ ঝক্কির। পাইলটকে মুখ ঘুরিয়ে আবার উড়ে যেতে বলা হয়। খবর যায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এয়ারলাইন্স অপারেটিং কো-অর্ডিনেশন কমিটি (এওসিসি)-র কাছে। জিপ নিয়ে অফিসার বেরিয়ে পড়েন রানওয়ের দিকে। আর প্রায় ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সেখানে পৌঁছে দেখা যায়, শিয়াল ভাগলবা। ধূ-ধূ করছে রানওয়ে। এওসিসি-র বার্তা পেয়ে ওই পাইলটকে নেমে আসতে বলে এটিসি।
এতে সময় অপচয় তো হয়ই, পোড়ে বেশি জ্বালানি। অন্য উড়ানের নামা-ওঠাতেও দেরি হয়ে যায়। বিমানবন্দরের এক অফিসারের কথায়, ‘টেক-অফের সময়েও একই কারণে দাঁড়িয়ে যেতে হয় উড়ানকে। একই পদ্ধতি মেনে রানওয়ে ইনস্পেকশন করে তার পরে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয় পাইলটকে।’
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, রানওয়ের পূর্ব প্রান্তে, যেখানে এখন সোলার প্যানেল বসানো রয়েছে, তার তলায় মাটিতে গর্ত করে শিয়ালরা জমিয়ে সংসার পেতেছে। সুবিধেমতো সেখান থেকে বেরিয়ে মূলত খাবারের সন্ধানে রানওয়ের কাছে চলে আসছে তারা। বন দপ্তরের পরামর্শ, ওই সোলার প্যানেল এলাকায় ফেন্সিং করলে শিয়াল সেখানেই আটকে যাবে। এয়ার সাইডে পুরোনো ময়লা, খাবার ফেলার একটি ঢিবি রয়েছে। সেটি সরিয়ে বিমানবন্দরের চৌহদ্দির বাইরে পাঠানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কাটতে বলা হয়েছে উঁচু ঘাসও।
একসময়ে শিয়াল ও কুকুর উভয়ই পালা করে রানওয়েতে ঢুকে পড়ছিল। সম্প্রতি কুকুরের প্রবেশ অনেকটা আটকানো গিয়েছে বলে বিমানবন্দর সূত্রের খবর। এক কর্তার কথায়, ‘আগে গাড়ি যাতায়াতের জন্য বিমানবন্দরের ১,৩ ও ৫ নম্বর গেট খোলা হলেই চোখের নিমেষে বাইরে থেকে এয়ার সাইডে ঢুকে আসত কুকুর। সেটা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ আটকেছে। বিমানবন্দরের সীমানায় থাকা ড্রেন দিয়ে গলেও ঢুকত। সেখানে নেট লাগানো হয়েছে।’ এ ভাবে কুকুরের ‘অনুপ্রবেশ’ আটকানো গেলেও, ধূর্ত শিয়াল নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।