Buddhadeb Bhattacharya,সংসদে সিপিএমের মুখ হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়েছিলেন বুদ্ধদেব – buddhadeb bhattacharya rejects cpim parliamentary face proposals


সর্বভারতীয় স্তরে সিপিএমের সংসদীয় মুখ হওয়ার সুযোগ পেয়েও সে পথে হাঁটতে চাননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হয়েও লালুপ্রসাদ যাদব, মুলায়ম সিং যাদব, মায়াবতী, দিগ্বিজয় সিং, ফারুক আবদুল্লাহ, রাজনাথ সিং-সহ দেশের বহু তাবড় রাজনীতিবিদ পরে সাংসদ হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী পদ হারানোর পর লোকসভা বা রাজ্যসভায় গিয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু লালু-মুলায়মের সেই পথে হেঁটে রাজ্যসভায় যেতে চাননি বুদ্ধদেব।২০১১ সালে বামফ্রন্ট বাংলায় ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বুদ্ধদেবকে রাজ্যসভায় সংসদীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ দিতে চেয়েছিল সিপিএম। তবে তা সঙ্গে সঙ্গে খারিজ করে দেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যসভার টিকিট না পেয়ে কংগ্রেস, বিজেপি-সহ বিভিন্ন দলের বহু নেতা যখন দলবদল পর্যন্ত করেছেন, সেখানে দলের সংসদীয় মুখ হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

অথচ সিপিএম নেতৃত্ব যে সময়ে বুদ্ধদেবকে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখনও তিনি তেমন ভগ্নস্বাস্থ্য হয়ে পড়েননি। সিওপিডি-র সমস্যা থাকলেও তখনও বুদ্ধদেব জেলায় জনসভা করতে যেতেন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেও যেতেন প্রতিদিন। সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ এখনও মনে করে, নিজেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে না নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যদি রাজ্যসভায় যেতেন, তা হলে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও সংসদে বামেদের গুরুত্ব বজায় থাকত তাঁরই রাজনৈতিক উচ্চতার কারণে।

২০১২ সালের মার্চে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যসভার পাঁচটি আসন খালি হয়। সেই সময়ে বিধানসভার সমীকরণ অনুযায়ী চারটি আসনে নিশ্চিত ছিল জোড়াফুলের জয়। একটি আসনে সিপিএমের জয় নিশ্চিত ছিল। ২০১১ সালে রাজ্যসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সীতারাম ইয়েচুরিকে সংসদে পাঠিয়েছিল সিপিএম। তারপর, ২০১২ সালে কে যাবে?

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যর কথায়, ‘যতদূর মনে পড়ছে, রাজ্যসভা নির্বাচনে কে প্রার্থী হবে, তা নিয়ে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আলোচনা চলছিল ২০১২-র জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে। সম্ভবত মদন ঘোষ প্রস্তাব দেন যে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে রাজ্যসভার প্রার্থী করা হোক। এই প্রস্তাবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর একাংশ সায় দিয়েছিল।’

বৈঠকে যে বুদ্ধদেবকে রাজ্যসভায় যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা অস্বীকার করছেন না সেই সময়ে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য থাকা প্রবীণ এক নেতা। এখনও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ওই নেতার কথায়, ‘রাজ্যসভায় যাওয়ার প্রস্তাব শুনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, আমি অন্য রাজ্যের কিছু নেতার মতো নই। নতুন কাউকে রাজ্যসভায় পাঠানো হোক।’

তখনই তৎকালীন এসএফআই নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করেছিলেন বুদ্ধদেব। কিন্তু রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সেই নাম খারিজ করে দিয়ে সিটু নেতা তপন সেনের নামে শিলমোহর দেয়। বুদ্ধদেবকে রাজ্যসভায় পাঠানোর প্রস্তাবের পিছনে তৎকালীন সিপিএম নেতৃত্বের কী অঙ্ক ছিল? আসলে তিনি তখন সংসদে গেলে সংসদীয় টিমের নেতা হতেন, সিপিএমের মুখও হতেন।

এই রাজনৈতিক সমীকরণের পাশাপাশি আরও একটি ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করেছিলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের তখনকার নেতারা। সিপিএমের প্রবীণ এক নেতার কথায়, ‘সাংসদ হলে বুদ্ধদেবকে দিল্লিতে থাকতে হতো। ফলে দিল্লি এইমসে ওঁর চিকিৎসাও করা যেত।’

DYFI সম্পাদক থেকে মুখ্যমন্ত্রী, কট্টর পথ কখনও নয়

প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নিজে বা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা কখনও এই ইতিবৃত্ত প্রকাশ করেননি। এ মাসেই বুদ্ধদেবের স্মরণসভার আয়োজন করতে চলেছে সিপিএম। আগামী ২৩-২৫ অগস্ট কল্যাণীতে সিপিএমের বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠক। প্রাথমিক ভাবে ২২ অগস্ট স্মরণসভা করার কথা ভাবা হয়েছে।

দিন কয়েকের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সেই স্মরণসভায় বুদ্ধ-জীবনের এমন অনেক অজানা ইতিবৃত্ত স্মৃতিচারণা হিসেবে প্রকাশ্যে আসতেই পারে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *