এদিকে, পাঁচটি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের ডাকে আজ, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ব্যক্তিগত চেম্বার ও ক্লিনিকে নন-ইমার্জেন্সি রোগী দেখা বন্ধ রাখবেন চিকিৎসকরা।
এর জন্য জনতার কাছে আগাম ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন তাঁরা। ওই যৌথ মঞ্চের তরফে আয়োজিত নাগরিক কনভেনশনেই এদিন আবার আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সিবিআই হেফাজতে নিয়ে জেরার দাবি উঠেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে গলা মিলিয়ে সেখানে দাবি তোলা হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগেরও।
তবে এরই মধ্যে আরজি করের মর্মান্তিক ঘটনার যে অকুস্থল, সেই চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার রুমের পাশেই কেন পূর্ত দপ্তর চুপিসাড়ে নির্মাণ কাজে হাত দিয়েছে শনিবার থেকে, তা নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, তা হলে কি তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিসন্ধি নিয়েই বিভাগীয় প্রধান সেখানে নির্মাণকাজ চালু করে দিলেন ঘটনার পরের দিনেই? যদিও পুলিশের দাবি, এই কাজ পূর্বপরিকল্পিত ও পূর্বনির্ধারিতই ছিল। অবশ্য তা মানতে নারাজ আন্দোলনরত চিকিৎসকরা।
মূলত এই নির্মাণ কাজের প্রতিবাদেই চিকিৎসক সমাজের কাছে আজ আট ঘণ্টা রোগী দেখা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ। কেননা, বিষয়টি পূর্ব নির্ধারিত থাকলেও কেন ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর সেই কাজ বন্ধ করা হলো না, সে প্রশ্নও উঠছে। যদিও এ ব্যাপারে আরজি করের নতুন অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল বলেন, ‘আমি মঙ্গলবারই জয়েন করেছি। যা জানতে পারলাম, এই নির্মাণ কাজ অকুস্থলের কাছে নয়, কিছুটা দূরে। এবং ডিউটি রুম ও টয়লেট তৈরির এই নির্মাণ কাজ জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনেই হয়েছে।’
এদিকে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে শহরে এদিনও পথে নামেন বুদ্ধিজীবীরা। মঙ্গলবার বিকেলে শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় থেকে আরজি কর পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন বিদ্বজ্জনেদের একাংশ। সেই মিছিলে যোগ দেয় বেশ কয়েকটি সংগঠন। এ ছাড়াও এদিন মিছিল-আন্দোলনের কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শ্যামবাজার থেকে বেলগাছিয়া-টালা এলাকা। বেশ কয়েকটি সংগঠন এদিন মিছিল করে আরজি কর হাসপাতালের সামনে জমায়েত করে।
‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে’ অপর্ণা সেন মিছিলে না হেঁটে সরাসরি পৌঁছে যান আরজি করে। পৌঁছানো মাত্রই হাসপাতালের বাইরে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি তাঁকে লক্ষ্য করে আপত্তিকর স্লোগান দিতে শুরু করেন। মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অপর্ণা অবশ্য তাৎক্ষণিক ভাবে এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করেননি। তিনি ভিতরে ঢুকে যান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার পর অপর্ণা বলেন, ‘আমি কলকাতার এক জন নাগরিক হিসেবে এখানে এসেছি। আন্দোলনের যে দাবি, তার একশো শতাংশের সঙ্গে আমি একমত।’ পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘পুলিশের জবাবদিহি করার প্রয়োজন রয়েছে। কেন নির্যাতিতাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে তখনই এটাকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে ঘোষণা করল? কীসের ভিত্তিতে এই ঘোষণা? কেন মৃতার পরিবারকে ফোন করে জানানো হলো যে সে আত্মহত্যা করেছে? কার নির্দেশে এমনটা করেছে? কেন পুলিশ তড়িতড়ি এত ব্যস্ত হয়ে উঠল ময়নাতদন্ত করার জন্য?’
মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী পল্লব কীর্তনিয়া, সমাজকর্মী মীরাতুন নাহার, মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র-সহ অনেকেই। মিছিল থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও ওঠে। এদিন কেন্দ্রীয় সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা (সিজিএইচএস)-এর অন্তর্গত সল্টলেকের বৈশাখী কেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও আরজি কর হাসপালে তরুণী চিকিৎসকের হত্যা ও চরম নিগ্রহের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান।
একই ইস্যুতে বেলগাছিয়ার রাজ্য প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স ফোরামের তরফেও একটি প্রতিবাদ পদযাত্রা আয়োজিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এদিকে আরজি করের পরিস্থিতি যথাসম্ভব দ্রুত স্বাভাবিক করতে এদিন কাজে যোগ দিয়েই অধ্যক্ষ কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক ডাকেন। সেখানে প্রত্যেক বিভাগীয় প্রধানকে বলা হয় ইমার্জেন্সি-সহ অন্যান্য পরিষেবা যাতে সচল থাকে, সে বিষয়ে সক্রিয় হতে হবে। প্রয়োজনে অধ্যক্ষ নিজেও রোগী পরিষেবার কাজে নামবেন। রোগী দেখার কাজে কাঁধ মেলাতে বলা হয়েছে নন-ক্লিনিক্যাল শাখার চিকিৎসকদেরও।