রণজয় সিংহ ও পার্থ চৌধুরী: একটি খুন অন্যটি ধর্ষণ করে খুনের চেষ্টা। আরজি কর কাণ্ডে কলকাতা জুড়ে, রাজ্য জুড়ে, দেশ জুড়ে প্রতিবাদের রাতেই এই ঘটনা! একটি ঘটনায়, প্রেমের প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ায় বারো বছরের নাবালিকার উপর আক্রমণ করে ২৯ বছরের যুবক। শারীরিক নির্যাতন করার পরে প্রমাণ লোপাটের জন্য সে পাথর দিয়ে আঘাত করে নাবালিকার মুখে। গুরুতর জখম ওই নাবালিকা মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এটি মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের ঘটনা। অন্য ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমানের নান্দুর গ্রামের। সেখানে নৃশংসভাবে গলা কেটে খুন করা হয়েছে এক তরুণীকে।
বুধবার দাদুর বাড়ি যাওয়ার পথে মদ্যপ অবস্থায় বারো বছরের ওই নাবালিকার পথ আটকায় মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের দৌলতপুর বাজার এলাকার যুবক আব্দুর রহমান। নাবালিকাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় সে। সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নাবালিকা। এর পরেই যুবকের রোষের মুখে পড়ে নাবালিকা। নাবালিকাকে সে বলাৎকার করে বলে অভিযোগ। এরপর প্রমাণ লোপাটের জন্য ভারী পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে।
ঘটনার খবরের পরই নড়েচড়ে বসে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলি। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তর পোশাকের রং চিহ্নিত করে ঘটনার ৬ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিস। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। পুলিসসূত্রে জানা গিয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুর থানার অন্তর্গত মালিপাকর এলাকার নাবালিকাকে বেশ কিছু দিন ধরেই নজরে রেখেছিল দৌলতপুর বাজার এলাকার ওই যুবক আব্দুর রহমান। গতকাল ওই নাবালিকা তার দাদুর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। সেই সময় রাতুয়া মাঠ-সংলগ্ন এলাকায় রেললাইনের ধারে নাবালিকাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় অভিযুক্ত। সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেই তার উপরে চড়াও হয় আব্দুর রহমান। পাথর দিয়ে আঘাত করা হয় মাথায়। ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েন নাবালিকা। সেখান থেকে চম্পট দেয় অভিযুক্ত। আশেপাশে উপস্থিত স্থানীয়রা নাবালিকাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। গুরুতর আহত অবস্থায় নির্যাতিত ওই নাবালিকা এখন মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদিকে ঘটনার খবর পেতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ভালুকা ফাঁড়ি এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিস। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে শুরু হয় তদন্ত। ৬ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার হয় অভিযুক্ত আব্দুর রহমান। সমগ্র ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা। বৃহস্পতিবার অভিযুক্তকে পুলিসি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে চাঁচোল মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গতকাল মেয়েদের প্রতিবাদের রাতেই পূর্ব বর্ধমানের নান্দুর গ্রামে নৃশংসভাবে গলা কেটে খুন করা হয়েছে প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা নামে এক তরুণীকে। এখনও কেউ ধরা পড়েনি এই ঘটনায়। দোষীদের দ্রুত শাস্তি দিতে হবে, এই দাবি তুলে বর্ধমান থানা ঘেরাও করেন আদিবাসীরা। এদিন দুপুরে আদিবাসী সংগঠনগুলির তরফে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। আদিবাসী পুরুষ ও মহিলারা জমায়েতে অংশ নেন। মেয়েদের হাতে ছিল তীরধনুক-সহ নানা অস্ত্র। জমায়েত চলাকালীন রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যায়।
আদিবাসী সংগঠনের নেতা মহাদেব টুডু বলেন, ‘ ফুলের মতো নার্সিং কলেজের ছাত্রীকে যেভাবে খুন করা হয়েছে, তাতে আমরা ব্যথিত। আমরা চাই, অবিলম্বে দোষীকে ধরুক পুলিস। কঠোর শাস্তির দাবি করছি। তিনি জানান, তাঁরা রাস্তা অবরোধ করেননি। তবে যদি জমায়েতের জেরে কারো অসুবিধা হয়, সেজন্য তারা ক্ষমাপ্রার্থী। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে নান্দুরের ঝাপানতলা এলাকায়।
আরও পড়ুন: Bangladesh Protest: স্বজনপোষণ ইউনূসের? জেনে নিন, ঘনিষ্ঠ বান্ধবীদের কী ভাবে যুক্ত করছেন সরকারে…
ঘটনার বিবরণে জানা গিয়েছে, মেয়েটির নাম, প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা। সে দু-বছর আগে বেঙ্গালুরু শপিং মলে কাজ করতে যায়। দুদিন আগে সে গ্রামের বাড়ি ফিরে আসে। সন্ধ্যায় পাশেই বাথরুমে যাবার নাম করে ঘর থেকে বের হয়। বেশ খানিকক্ষণ পরে ফিরে না আসায় আশঙ্কা তৈরি হয়। কিছু খোঁজাখুঁজির পরে বাড়ি থেকে ১০০ মিটারের মধ্যেই তার গলাকাটা দেহ পাওয়া যায়। বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। বর্ধমান থানা ও শক্তিগড় থানার পুলিস ঘটনাস্থলে যায়। পুলিস এই রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করেছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)