১৭৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বসতভিটেতেই এখন থাকেন কর পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম। সেই পরিবারেরই অন্যতম কর্তা পার্থ কর। বয়স ষাট পেরিয়েছে। লেখালেখি, ছবি তোলার পেশার সঙ্গে যুক্ত তিনি। পার্থর আফশোস, ‘প্রথমবার এই ঘটনাটা যখন জানলাম, কীভাবে যে নিজেদের রাগ, দুঃখ ব্যক্ত করব সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না।’
রাধাগোবিন্দ করের নামাঙ্কিত সেই প্রতিষ্ঠানেরই নামই যে এ ভাবে এক জঘন্য কারণে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি কর পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম। পার্থর কথায়, ‘এখন বেতড়ের বাড়িতে সব মিলিয়ে আমরা ৩০ জন বসবাস করি। প্রত্যেকেই মর্মাহত, ব্যথিত। রাত দখলের যে ডাক মেয়েরা দিয়েছেন, সেই প্রতিবাদে আমরাও সামিল হয়েছি। বাড়ির কাছেই একটি জমায়েতে আমরা থাকব।’
এই কারণে বুধবার সকাল থেকেই কর বাড়িতে চলেছে পোস্টার লেখার কাজ। পার্থর স্ত্রী গার্গী কর বলছেন, ‘রাধাগোবিন্দ করের পরিবার হিসেবেই নয়, আমি একজন মা। মা হিসেবে আমি চাই এই ঘটনার যথাযথ বিচার হোক। অন্যত্র হলেও আমরা একই ভাবে প্রতিবাদ করতাম।’
কয়েক বছর আগে আরজি কর হাসপাতালের শতবর্ষ উদযাপনে শেষ বার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল কর পরিবারের। পার্থর কথায়, ‘আমরা ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কখনও কিছু চাইনি। কিন্তু এখন একটাই জিনিস চাই। এই ঘটনার যেন বিচার হয়। কেউ যেন ছাড় না পেয়ে যায়।’
হাওড়ার রামরাজাতলা স্টেশন থেকে মিনিট পনেরো হাঁটাপথ দূরত্বে বেতড়ের বিখ্যাত কর বাড়ি। ১৮৫০ সালের ২৩ অগস্ট এই বাড়িতেই জন্ম হয়েছিল রাধাগোবিন্দ করের। মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পড়ার পরে তিনি পাড়ি দেন স্কটল্যান্ডে। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডাক্তারি ডিপ্লোমা করে, ১৮৮৬ সালে ফিরে এসেছিলেন দেশে।
নেমে পড়েছিলেন আর্তের সেবায়। বিলেত থেকে ফিরে তিনি বুঝেছিলেন শুধু বাংলায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের বই-ই যথেষ্ট নয়। দেশীয় মেডিক্যাল স্কুল ও কলেজের প্রয়োজন। সেই থেকে বীজ বোনা শুরু হয়েছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের। এই কলেজ স্থাপনের জন্য দোরে দোরে ভিক্ষে পর্যন্ত করেছিলেন রাধাগোবিন্দ। বহু চেষ্টার পরে স্থাপিত হয় আজকের আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।