Bardhaman News,খুনের আসামিদের প্রতিভা খুঁজে-খুঁজে ট্রেনিং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীর, প্রদর্শনীতে বিপুল সাড়া – kalna resident tapas paul takes initiative for teaching hand craft work to accused prisoners


সূর্যকান্ত কুমার, কালনা
খুনের মতো ঘটনায় বিচারাধীন বন্দিদের সংশোধনের পথ নিয়ে ভেবেছিলেন সদ্য অবসর নেওয়া সরকারি কর্মী তাপস পাল। সরকারি কর্মী তাপসের হাতের কাজ তারিফ কুড়িয়ে নিয়েছিল বিভিন্ন মহলে। নিজের সেই বিদ্যা তিনি শেখাতে চাইলেন কারাগারে বন্দি থাকা অভিযুক্তদের। সেই কাজ করতে গিয়ে খুনের আসামিদের প্রতিভা আবিষ্কার করলেন তিনি। কাজ শেষে বন্দিদের শিল্পকর্ম দেখে কে বলবে মারাত্মক সব অপরাধে বিচার চলছে তাদের।

কালনা উপ সংশোধনাগারের ১৩ জন এমন বন্দিকে বেছে নিয়েছিলেন শিল্পী তাপস পাল। শুক্রবার সংশোধনাগারের ভিতরে বন্দিদের শিল্পকলার প্রদর্শনীও হলো। কেউ তৈরি করেছেন পেনদানি, কেউ তৈরি করেছেন চাবির রিং, পেপার ওয়েট। সেই সব শিল্প সামগ্রী কিনে নিলেন প্রদর্শনীতে উপস্থিত কালনার বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত ১৮ জন। বিক্রির ২৬ হাজার টাকা জমা পড়বে বন্দিদের কল্যাণমূলক কাজের জন্য ওয়েস্টবেঙ্গল প্রিজনার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ডে।

মাসকয়েক আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তাপস। তাঁর নেশা নারকেলের খোল দিয়ে শিল্প সামগ্রী বানানো। তাপস বলেন, ‘চাকরি শেষে ভাবলাম সমাজের জন্য কিছু করি। ঠিক করলাম, সংশোধনাগারে থাকা বন্দিদের হাতের কাজ শেখাব যাতে তারা সমাজে ফিরে আলোর দিশা পায়। অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখলাম আইজি (কারা) এলএন মিনাকে। ঠিক করেছিলাম, দু’মাসের ট্রেনিং দেবো।’ অনুমতি মেলার পর স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে ১৩ জনকে বেছে নেন তাপস।

১৫ মে থেকে ১৫ জুলাই শনি ও রবিবার বাদে রোজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত দু’মাসের ট্রেনিং হয়। তাপস বলেন, ‘যে ক’জন ট্রেনিং নিয়েছে তাদের বেশিরভাগই খুনের আসামি। এক জন নিজের স্ত্রী-সহ একাধিক খুনের ঘটনায় জড়িত। অনেকেরই ধারণা ছিল না এমন কাজ আদৌ করতে পারবে কিনা। কিন্তু, ওদের ভিতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা দেখে ওরাই অবাক হয়ে গিয়েছে। এতটাই আগ্রহ ওদের তৈরি হয়েছিল যে, আমি যাওয়ার আগেই ওরা রেডি হয়ে থাকত।’

ট্রেনিং শেষে তাপস ভাবেন, এই শিল্পসামগ্রীর বিপণন করা না গেলে এর কোনও মূল্য থাকবে না। বিক্রি করে যদি অর্থ আসে তাহলে বন্দিরাও ভাববে ওদের সৃষ্টিরও বাজার রয়েছে। তাপস বলছেন, ‘তাই ফের চিঠি লিখি আইজিকে। তিনি অনুমতি দিলে কালনার মহকুমাশাসক তথা জেল সুপারের ব্যবস্থাপনায় শুক্রবার সংশোধনাগারে প্রদর্শনী কাম সেলের ব্যবস্থা করা হয়। এদের মধ্যে তিন জনকে যাতে পুরস্কৃত করা যায় তার অনুমতিও চেয়েছি।’

এদিন প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সাব মেজর নরেশ দাস বলেন, ‘ওরা বলেছে, কোনওদিন ভাবেনি এমন কাজ করতে পারবে বলে। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা নিজেদের অতীত ভুলে থাকতে পেরেছে।’

ব্যবসায়ী সুব্রত পাল বলেন, ‘অসাধারণ কাজ করেছেন তাপসবাবু। উনি এই উদ্যোগ না নিলে ওদের প্রতিভা সুপ্তই থেকে যেত।’ সাংস্কৃতিককর্মী গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘সংশোধনাগার শব্দটি ওদের ক্ষেত্রে যথার্থ হয়েছে। সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসতে পারবে ওরা।’ পরবর্তীতে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারেও এই কাজ করতে চান তাপস। বলেন, ‘সেখানে এই ১৩ জনকে যাতে মাস্টার ট্রেনার করা যায় তার আবেদনও করব।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *