বৃহস্পতিবার ভোরে ঝাড়গ্রাম শহর সংলগ্ন ধরমপুর গ্রাম থেকে দু’টি শাবক-সহ পাঁচটি বুনো হাতির দল ঝাড়গ্রাম শহরের বিদ্যাসাগরপল্লি এলাকায় ঢুকে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা অনুপ মল্লিক (৫৪)কে সামনে পেয়ে ওই দলে থাকা একটি পুরুষ হাতি তাঁকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় মারে। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। এর পরে খুনি হাতিটি সবাইকে তাড়া করে একসময়ে ধরমপুরের জঙ্গলে ঢুকে যায়।
শাবকদের নিয়ে দু’টি মাদি হাতি ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের বিপরীতে এবং ঝাড়গ্রামের জেলাশাসকের নবনির্মিত কার্যালয়ের সামনে থাকা পাঁচিল ঘেরা ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এ রকম পরিস্থিতিতে ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমামের নেতৃত্বে রেঞ্জ অফিসার, বিট অফিসার, বনকর্মী এবং হাতি তাড়ানোর জন্য হুলাপার্টির তিনটি টিম নিয়ে আসা হয় ঘটনাস্থলে। বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ ধরমপুরের কাটাজঙ্গলে ঘুমপাড়ানি গুলি করে কাবু করা হয় খুনি হাতিকে। সেখান থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে জোয়ালভাঙার জঙ্গলে ছাড়া হয় তাকে।
অন্য দিকে, ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ সংলগ্ন এলাকায় শাবক সমেত হাতিদের দেখতে ভিড় জমে যায়। হুলা পার্টি হাতি তাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। বিকেল ৫.১৫ মিনিট নাগাদ হাতির দলটি পাঁচিল থেকে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করলে বন দপ্তর ফের সেখানে আটকে রাখে হাতিগুলিকে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে থাকা একটি পরিত্যক্ত বাড়ির উপর থেকে হাতির পিঠে প্রায় ছ’ফুটের একটি জ্বলন্ত লোহার শলাকা বিদ্ধ করে দেওয়া হয়। হাতিটি যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে।
আগুন জ্বলতে থাকলেও সহজে পিঠ থেকে ছুঁচলো লোহার শলাকাটি পড়ে যায়নি। প্রায় মিনিট পাঁচেক এ রকম অবস্থায় থাকার পর হাতিটির পিছনের দু’টি পা অসাড় হয়ে যায়। এর পর আর হাতিটির সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। যন্ত্রণায় ছটফট করার পাশাপাশি চিৎকার করতে করতে হাতিটি কোনও মতে নিজের শুঁড় দিয়ে পিঠে বিদ্ধ হওয়া জ্বলন্ত লোহার শলাকাটিকে বের করে। তারপর থেকে পিছনের দু’টি পা মাটিতে ঘষে ঘষে এগোতে থাকে।
হাতিটির এই পরিস্থিতির জন্য হুলাপার্টিকে দায়ী করে উত্তেজিত জনতা চড়াও হয়। বন দপ্তরের একটি গাড়ির কাচও ভাঙা হয়। ঘটনাস্থলে থাকা ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। রাতে জখম হাতিটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। অন্য দিকে, দু’টি শাবক সমেত তিনটি হাতিকে রাতেই জঙ্গলে পাঠিয়ে দেয় হুলাপার্টির লোকেরা। হাতির পিঠে জ্বলন্ত লোহার শলাকা বিদ্ধ করল কে, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।