Jaldapara National Park,বাঁচানো গেল না গন্ডার শাবককে, ফিতাকৃমিতে আক্রান্ত হচ্ছে একশৃঙ্গেরা? – sick rhino cub lost life in jaldapara national park


পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার
বিফলে গেল বনকর্মীদের অক্লান্ত চেষ্টা। বুধবার ভোরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের অসুস্থ গন্ডার শাবক। আসল সংকট যে অনেক গভীরে, তা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন বনকর্তারা। গত আড়াই বছরে কমপক্ষে ১৮টি গন্ডার শাবকের মৃত্যু হয়েছে, যাদের একই ধরনের উপসর্গ ছিল। এই তথ্যে গভীর উদ্বেগ ছড়িয়েছে বন দপ্তরের অন্দরে।প্যারালাইজ়ড হয়ে একের পর এক গন্ডার শাবকের মৃত্যুর পরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বন্যপ্রাণী চিকিৎসকদের পাঁচ জনকে নিয়ে একটি মনিটরিং টিম গঠন করেছে জলদাপাড়া বনবিভাগ। ময়নাতদন্তে প্রতিটি মৃত গন্ডার শাবকের অন্ত্র থেকে মিলেছে প্রচুর পরিমাণে টেপ ওয়ার্ম (ফিতাকৃমি)। Anoplocephala নামে ওই ক্ষতিকারক ফিতাকৃমি সাধারণত ঘোড়াদের দেহে মেলে। তা নিয়ে গবেষণার পরে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বনকর্তারা।

আক্রান্ত গন্ডাররা যেখানে মলত্যাগ করে সেখানেই এই বিশেষ ধরনের ফিতাকৃমির ডিম জমা হতে শুরু করে। কারণ একটি গন্ডার কমপক্ষে টানা দু’মাস একই জায়গায় মলত্যাগ করে। টেপওয়ার্মের ডিমগুলি এর পরে এক ধরনের পোকার শরীরে মিশে গিয়ে নিজেদের জীবনচক্র সম্পন্ন করে। ওই পোকারা ঝোপজঙ্গলে ডিম পাড়তে এলে, সেই সঙ্গে ফিতাকৃমিও বেরিয়ে আসে।

গন্ডাররা সেখানে ঘাস খেতে এলে, গন্ডারের পাকস্থলীতে গিয়ে ফিতাকৃমি অনেকটা সময় নিয়ে বংশবিস্তার করতে শুরু করে। প্রায় আড়াই বছর লেগে যায় এই বংশবিস্তারে। সংখ্যায় বেড়ে যাওয়ার পর গন্ডারের পাকস্থলীতে আলসার তৈরি করে ক্ষুদ্রান্ত্র ছেড়ে বৃহদান্ত্র হয়ে ফুসফুসের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে ফিতাকৃমিরা।

ওই ভাবেই গন্ডারের মতো বড় বন্যপ্রাণীকে ভিতর থেকে ঝাঁঝরা করে দেয় ফিতাকৃমির দল। এর ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে আক্রান্ত গন্ডার। শেষে প্যারালাইজ়ড হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণী সহায়ক নভজিৎ দে বলেন, ‘ভালো তৃণভূমির অভাবে আমরা তো কৃমির বাসা ওই ঝোপ-জঙ্গলগুলিকে পুড়িয়ে ফেলতে পারি না। ফলে বছর বছর সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে। এটা এক-দু’বছরের বিষয় নয়।’

তা হলে গন্ডারদের এই গুরুতর সমস্যা সমাধানের পথ কী?
নভজিত বাবুর সংযোজন, ‘কেউ যদি মনে করেন, এক সপ্তাহের মধ্যে জলদাপাড়ার সব গন্ডারকে কৃমির ওষুধ খাইয়ে সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, তা কিন্তু সম্ভব নয়। কারণ এক দিকে যেমন গন্ডারদের ওষুধ খাওয়ানোটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, ঠিক তেমনই ওষুধ নির্বাচন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আপাতত ‘Pasiquintol’ ও ‘Oxabendazol’ নামে দু’টি কৃমিনাশক ওষুধকে নির্বাচন করেছি।

কিন্তু প্রথম ওষুধটি গর্ভবতী গন্ডারদের প্রচুর ক্ষতি করে দিতে পারে বলে প্রমাণ পেয়েছি। ফলে এখন আমরা ‘Oxabendazol’-এর দিকেই ঝুঁকেছি। কারণ দ্বিতীয়টি অনেক নিরাপদ ও যথাযথ ওষুধ। কিন্তু এখানেও সমস্যা কম নয়। কারণ ডোজ়টা ঠিক কত পরিমাণে হবে, তা নিয়ে গন্ডার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তার পর অসীম ধৈর্য নিয়ে মাঠে নামতে হবে।

কোন কোন গন্ডারকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হলো, তাদের চিহ্নিত করার প্রশ্নও আছে। সব মিলিয়ে এই পরিকল্পনা একটি দীর্ঘমেয়াদি কাজ। কঠিন কাজ। তবুও আমাদের সেই কঠিন কাজটা করতেই হবে। না হলে বিপদ চার দিক থেকে চেপে ধরবে।’

দু’সপ্তাহে প্যারালাইজ়ড হয়ে মৃত ৪টি গন্ডার শাবক

এর বাইরে আরও একটি দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘একই তৃণভূমিতে চড়লেও বুনো হাতি, বাইসন ও সম্বরের মৃতদেহে কিন্তু ওই ফিতাকৃমি মিলছে না। তাই কেন শুধু গন্ডারের দেহে টেপওয়ার্ম বাসা বাঁধছে, তা নিয়েও গবেষণা করতে হবে।’

জলদাপাড়ায় ওই গন্ডার মৃত্যুর ঘটনা জেনে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এশিয়ান রাইনো গ্রুপের চেয়ারম্যান বিভব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে দ্রুত গন্ডার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। একটা বিষয় কিছুতেই আমার মাথায় আসছে না যে, গন্ডার বাদে অন্যান্য তৃণভোজী বন্যপ্রাণীরা কেন ফিতাকৃমিতে আক্রান্ত হচ্ছে না। গভীরে গিয়ে এর অনুসন্ধান করা উচিত। সময় একদম নষ্ট করা যাবে না। জলদাপাড়া কর্তৃপক্ষ চাইলে আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব। কারণ গন্ডারের মত সম্পদের ভবিষ্যৎ ও বসতি আমরা ধংস হতে দিতে পারি না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *