Baligori Gram Panchayat,নেই গাড়ি, স্মার্ট ফোন, চাষের কাজ সামলে সাইকেল চালিয়ে পঞ্চায়েতে যান তৃণমূল প্রধান দীনবন্ধু – tarakeswar baligori gram panchayat pradhan dinabandhu mati go to panchayat with by bicycle


রাজ্যের শাসক দলের জনপ্রতিনিধি বা নেতা-নেত্রীদের একাংশের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে অস্বস্তি তৃণমূলের অন্দরেই। এই আবহেই ব্যতিক্রম শাসক দলেরই এক জনপ্রতিনিধি। নাম দীনবন্ধু মাটি। হুগলির তারকেশ্বর ব্লকের বালিগড়ি এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তিনি।কেন তিনি ব্যতিক্রমী?
জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মকর্তা তো অনেক দূরের ব্যাপার। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হতে পারলেই যেখানে চালা ঘর বদলে যায় দোতলা, তিন তলা বাড়িতে, এসইউভি ছাড়া দু’পা এগোনোই যায় না, সেখানে দীনবন্ধুর সাথী একখানা পুরোনো সাইকেল। স্মার্ট ফোনও নেই তাঁর।

রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ‘নীতি’, ‘আদর্শ’ ভোলেননি। কংগ্রেসে যোগ দিয়ে গৃহ শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। পরে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। কিন্তু আজও এলাকায় তিনি ‘মাস্টারমশাই’ নামে পরিচিত। প্রতিদিন সকাল হলেই কোদাল হাতে নেমে পড়েন চাষের জমিতে। বেলা দশটা বাজলেই জয়পুর গ্রামের বাড়ি থেকে সাইকেলে চেপে বেরিয়ে পড়েন তিনি। প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যান পঞ্চায়েত অফিসে।

এলাকায় মাটির মানুষ বলেই পরিচিত দীনবন্ধু। পঞ্চায়েতের কাজ সামলে বাড়ি ফেরার পথে মানুষের সঙ্গে জনসম্পর্ক বজায় রাখা তাঁর রুটিন মাফিক কাজ । দীনবন্ধু বাবুর বাবা মধুসূদন বাবু ছিলেন প্রান্তিক চাষি। চাষের জমি থেকে যা উপার্জন হতো তাই দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা শিখিয়েছেন। অভাবের সংসারে বড় হন দীনবন্ধু।

মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করার পর নিজের পড়াশোনা চালাতে শুরু করেন ছাত্র পড়ানো। তৎকালীন সময়ে অনেকে বেতন দিতে পারতেন না। তবে তাতে কিছু মনে করতেন না তিনি। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর কলেজে পড়ার সময় ধীরে ধীরে পা বাড়াতে থাকেন ছাত্র রাজনীতিতে। বি কম পাসের পর অ্যাকাউন্টেন্সে অনার্স করে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয় তাকে। প্রথমে কংগ্রেস ও পরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত বলাইলাল শেঠের হাত ধরেই রাজনীতিতে যোগদান। পরবর্তীতে কংগ্রেসের সেবা দলের তারকেশ্বর ব্লকের সদস্য হন।

রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর আন্দোলন করতে গিয়ে দশ দিন জেল খাটতে হয়েছিল তাঁকে। পুলিশের খাতায় নামের পাশে লাল কালির দাগ পড়ায় আর চাকরির কোন সুযোগ হয়নি। ১৯৯৮ সালে রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানে তৎকালীন কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরবর্তীতে জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে নতুন দল গঠন করেন মমতা। তখন থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন তৃণমূল কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী।

এরপর তৃণমূলের জয়পুরের বুথ সভাপতি দায়িত্ব সামলানোর পর অঞ্চল কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। কৃষাণ ক্ষেতমজুরের ব্লক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জয়লাভ করার পর বর্তমানে বালিগড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। বাড়িতে রয়েছে তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী।

প্রধান বলেন, ‘আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। বাবা চাষবাস করতে, বর্তমানে আমি নিজেও চাষ করি। অনেক গরিব মানুষ আছেন, তাঁরা অনেক সমস্যার মধ্যে পড়েন। তাঁদের জন্য কষ্ট হয়। সেই জন্যই আমি যতটা পারি মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। কী ভাবে মানুষের পাশে থাকতে হয় তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই শিখেছি।

পঞ্চায়েতের দায়িত্ব সামলে বাড়ি ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া দায়িত্বও পালন করেন তিনি। সাইকেলে চড়ে জনসংযোগ করেন এলাকার মানুষের সঙ্গে। কারও পড়াশোনার বই না থাকলে বা বিয়ে না হলে আর্থিক দিক দিয়েও সাহায্য করেন তাঁদের।’ বিজেপি-র তারকেশ্বর ব্লকের কনভেনর তারকনাথ সাউ জানান, যিনি ভালো লোক তাঁকে তো ভালো বলতেই হবে। উনি আর পাঁচ জনের মতো নন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *