এ দিন সকালে দুই পুলিশকর্তার সাংবাদিক বৈঠকের পরে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ ও ‘সংগ্রামী যৌথমঞ্চ’-এর তরফ থেকে আলাদা ভাবে ইমেল পাঠানো হয়। যদিও সুপ্রতিম সন্ধেয় আবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, দু’টি সংগঠনের নবান্ন অভিযানের আবেদনই বাতিল করা হয়েছে। আজ ইউজিসি নেট-ও রয়েছে। তার জন্য অনেক পরীক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রেও পৌঁছতে হবে। তাঁদের যাতে কোনও সমস্যায় না-পড়তে হয়, সেজন্যও ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের কর্তারা।
কেন এই মিছিলকে বেআইনি বলছে পুলিশ?
মনোজ বলেন, ‘নবান্ন একটি সংরক্ষিত জায়গা। এই তল্লাটে সব ধরনের মিছিল-মিটিং-সমাবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারা (পূর্বতন ভারতীয় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা) জারি রয়েছে সেখানে। ফলে পাঁচ জনের বেশি জমায়েতের ক্ষেত্রে পুলিশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে।’
সুপ্রতিমের যুক্তি, তারপরেও মঙ্গলবার দু’টি সংগঠনের তরফ থেকে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে— এটা জানার পরপরই হাওড়ার পুলিশ কমিশনার ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ ও ‘সংগ্রামী যৌথমঞ্চ’-এর আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোথা থেকে মিছিল আসবে, কত গাড়ি থাকবে, কত সমর্থক অভিযানে আসবেন— এ সব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল।
তবে এ দিন দুপুর পর্যন্ত সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্যই দেওয়া হয়নি। দুই পুলিশকর্তা এও জানান, নবান্ন বাদ দিয়ে হাওড়া বা কলকাতার যে কোনও জায়গায় এই সংগঠনগুলি যদি কর্মসূচি করতে চায়, তা হলে পর্যাপ্ত পুলিশ তার ব্যবস্থা করবে বলেও তাদের জানানো হয়। তবে এই প্রস্তাবেও সাড়া মেলেনি। সুপ্রতিম জানান, এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেরও কিছুটা অপব্যাখ্যা হচ্ছে।
তাঁর কথায়, ‘সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ কোনও বলপ্রয়োগ করবে না। তার সঙ্গে এটাও বলা হয়েছে, তার মানে এই নয় যে, রাজ্য আইনসম্মত বিধিনিষেধ কার্যকর করতে পারবে না।’ সেই নিয়ম মেনেই দুই সংগঠনকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল।
সন্ধেয় আবার সাংবাদিক বৈঠকে সুপ্রতিম বলেন, ‘দু’টি ইমেল এসেছে পুলিশের কাছে। একটি ইমেল পাঠিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ। কিন্তু তারা কোনও অনুমতি চায়নি। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের নিয়ম মেনে কর্মসূচি সংক্রান্ত যে সমস্ত জরুরি তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়, যেমন তাঁরা কোন পথে এগোবেন, কী কর্মসূচি, কোথায় অবস্থান করবেন— সেই সব তথ্যও জানানো হয়নি।’
তাঁর সংযোজন, ‘দ্বিতীয় ইমেলটি এসেছিল সংগ্রামী যৌথমঞ্চের তরফে। সেই ইমেলে নিয়ম মেনে অনুমতি চাওয়া হলেও তাদেরও অনুমতি দেওয়া হয়নি। কারণ, নবান্নের কাছে ওই ধরনের কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।’ সুপ্রতিম জানিয়েছেন, দুই সংগঠনকেই বলে দেওয়া হয়েছে, মঙ্গলবার রাজ্যে নেট রয়েছে। তাছাড়া এটা একটা পূর্ণ কর্মদিবস। তাই পরীক্ষার্থী এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
তারপরেও যেহেতু অভিযান চলবে, সেক্ষেত্রে পুলিশ কী করবে?
কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, নবান্নের সামনে এবং কলকাতা ও হাওড়ার সংলগ্ন এলাকায় যাতে কোনও রকম অশান্তি না-হয়, তা নিশ্চিত করতে সব মিলিয়ে আট হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। এরমধ্যে কলকাতা পুলিশের প্রায় ছ’হাজার এবং হাওড়া পুলিশের ২১০০ কর্মী-আধিকারিক রাস্তায় নামবেন। সিনিয়র অফিসাররাও থাকবেন নজরদারিতে।
যাতে কোনও ভাবেই অশান্তি না-হয়, তার জন্য সবরকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে। নেট পরীক্ষার্থী বা যে সব সাধারণ মানুষকে কাজের প্রয়োজনে বেরোতে হবে, তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, তার জন্যও পুলিশ সজাগ থাকবে। নেট পরীক্ষার্থীরা যে কোনও দরকারে ১০০ ও ১১২— এই দু’টি নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন।