Nabanna Abhijan,গেরুয়া উত্তরীয়, ‘ডায়রেক্ট’ স্লোগান! মিছিলে এরা কারা – bjp workers and supporters were present nabanna abhijan campaign


মণিপুস্পক সেনগুপ্ত
হাতে-হাতে জাতীয় পতাকা। মুখে-মুখে স্লোগান ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’। তবুও আরজি করের ঘটনায় চেনা প্রতিবাদের ছন্দটা যেন উধাও। তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে নাগরিক সমাজ গত আড়াই সপ্তাহ ধরে লাগাতার শাম্তিপূর্ণ মিছিল-জমায়েত করছে রাজ্যের সর্বত্র। সেই তালিকায় জুনিয়র-সিনিয়র ডাক্তার, আইনজীবী, শিল্পী, স্কুল-কলেজের ছাত্র-শিক্ষক থেকে সমাজের সব অংশের মানুষই সামিল হয়েছেন।‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকে মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানের মিছিলে শহর জুড়ে ‘জাস্টিস’ ধ্বনি উঠলেও তা যেন অনেকটা রাজনৈতিক স্লোগানের মতোই কানে বাজল অনেকের। স্বভাবতই, প্রশ্নটা আরও জোরালো হলো, ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র-সমাজ’-এর প্রতিবাদীরা কি নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা?

নামে অরাজনৈতিক হলেও এ দিন বকলমে যে গেরুয়া শিবিরই নবান্ন অভিযান করতে চলেছে, সে দাবি আগেই একসুরে করেছিল তৃণমূল ও বামেরা। এমনকী, সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য পুলিশের কর্তারাও কার্যত জানিয়ে দেন, ‘ছাত্র সমাজ’ নিছক কোনও ছাত্র সংগঠন নয়। মিছিলের আয়োজকদের সঙ্গে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক যোগসাজশ রয়েছে। বিজেপি অবশ্য সেই দাবি মানতে চায়নি।

তারপরেও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাই নবান্ন অভিযান করতে চলেছে। তাতে বিজেপির নৈতিক সমর্থন থাকবে। কিন্তু বিজেপির সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে না। এ দিন ‘ছাত্র সমাজ’-এর নবান্ন অভিযানে বঙ্গ-বিজেপির প্রথম সারির নেতা-নেত্রীদের মিছিলে হাঁটতে দেখা না গেলেও দলের কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যার প্রেক্ষিতে তৃণমূল আরও সুর চড়িয়ে ‘ছাত্র সমাজ’-এর এ দিনের কর্মসূচিকে বিজেপির কর্মসূচি বলেই দাবি করেছে।

রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা এই নবান্ন অভিযানে সামিল হননি। সবাই বিজেপির কর্মী। কারণ, শহর জুড়ে প্রতিবাদের নামে যে গুন্ডামি চালানো হলো, তা সাধারণ ছাত্র সমাজের কাজ হতেই পারে না। এটা বিজেপি করেছে।’ রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের দাবি, বিজেপির পাশাপাশি সিপিএমের একাংশও এদিন ‘ছাত্র সমাজ’-এর নবান্ন অভিযানে সামিল হয়েছিল।

তবে এই আন্দোলনে বামেদের কোনও ভূমিকা নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর কথায়, ‘সিপিএম তো আগেই ঘোষণা করেছিল, এর মধ্যে ওরা নেই। তৃণমূলের সঙ্গে বামেদের সেটিং রয়েছে।’

‘ছাত্র সমাজ’ নামে ওই সংগঠনের নেতারা নিজেদের বিজেপির মদতপুষ্ট বলে মানতে চাননি। তবে নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে দলীয় পতাকা নিয়ে আসতে নিষেধ করেন। শুভজিৎ ঘোষ, পুলকেশ পণ্ডিত, গৌতম সেনাপতি এবং প্রীতম সরকার নামে ‘ছাত্র সমাজ’-এর ওই চার নেতাকে সোমবার রাতেই নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

এই কর্মসূচিকে ঘিরে এ দিন সকাল থেকে ৬, মুরলীধর সেন লেনে বিজেপির রাজ্য দপ্তরে ছিল ঢালাও প্রস্তুতি। অভিযানের জেরে রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার আগেই রাজ্য বিজেপি নেতারা মুরলীধর সেন লেনের পার্টি অফিসে ঢুকে পড়েন। দুপুর সাড়ে এগারোটার পর থেকে সেখান থেকে দলে দলে বিজেপি কর্মী জাতীয় পতাকা হাতে কলেজ স্কোয়ারে ভিড় করতে শুরু করেন।

এমনকী, বিজেপি নেতা অর্জুন সিং, কৌস্তভ বাগচিকেও ‘ছাত্র সমাজ’-এর মিছিলে হাঁটতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের অনেকের গলায় গেরুয়া উত্তরীয়, আর কারও কপালে গেরুয়া তিলক এ দিন বারবার জানান দিচ্ছিল ‘নবান্ন অভিযান’-এর নেপথ্যে আসলে কারা আছেন। এ দিনের মিছিলে বারবার স্লোগান ওঠে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে।

মিছিল থেকে শোনা যায়, — ‘বুক পেতেছি গুলি কর, জাস্টিস ফর আরজি কর’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডায়রেক্ট অ্যাকশন’-এর মতো স্লোগানও। এই সব স্লোগানের সঙ্গে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের স্লোগানের মিলও দেখছেন অনেকে।

বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ দিন একসুরে ঘোষণা করেন, ‘ছাত্র সমাজ’-এর যাঁরা এই আন্দোলন করতে গিয়ে গুরুতর চোট পেয়েছেন এবং পুলিশের কেস খেয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসা এবং আইনি লড়াইয়ে সহায়তা করবে পদ্মের বঙ্গ-নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের সবরকম লজিস্টিক সাপোর্ট এবং রণকৌশল বাতলে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতারাই।

এ দিন আন্দোলন শুরুর আগেই শুভেন্দু অধিকারী হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সের তিনতলার ভিআইপি রেস্ট হাউসে ঘাঁটি গাড়েন। সেখানে বসেই তিনি ‘ছাত্র সমাজ’-এর সঙ্গে বিজেপির যোগসূত্র কার্যত স্পষ্ট করে দিয়ে বলেন, ‘সোমবার ছাত্র সমাজ বলেছিল, কোনও রাজনৈতিক দলের নেতারা যেন না থাকেন। আমরা পাশে থেকেও তাই অংশ নিইনি। কিন্তু ভলান্টিয়ারের কাজ করেছি। আমরা ২ লক্ষ জলের পাউচ, মেডিক্যাল এইড, টেম্পোরারি মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স বুথ, ভলান্টিয়ার— যা যা ওদের সাহায্য দরকার, তার ব্যবস্থা করেছি।’

Trinamool Congress: বনধের নেপথ্যে পরিকল্পিত অভিসন্ধি, দাবি তৃণমূলের

নাগরিক সমাজের একটা বড় অংশ মনে করছেন, এ দিন ‘ছাত্র সমাজ’কে শিখণ্ডী খাড়া করে বিজেপি যা করল, তাতে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনই বাধাপ্রাপ্ত হবে। এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘সাধারণ মানুষের আন্দোলনে রাজনীতির রং লাগিয়ে আখেরে তৃণমূলের সুবিধা করে দিল বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের নির্দেশেই একটা গণ-আন্দোলনকে ভাঙার চেষ্টা করছেন শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদাররা। এটাই দিদি-মোদী সেটিং।’

এতদিন যে জুনিয়র ডাক্তাররা আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন চালাচ্ছেন, তাঁরাও এই নবান্ন অভিযানে সামিল হননি। তবে এ দিনের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তাঁদের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক হোক বা অরাজনৈতিক, ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হওয়া যে কোনও আন্দোলনকারীর উপর প্রশাসনিক ও পুলিশি বর্বরতা গণতন্ত্রের অপমান। এই পুলিশি তৎপরতা ১৪ অগস্ট রাতে আরজি কর চত্বরে দেখা গেলে হয়তো হাসপাতালের ইমার্জেন্সি এমন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতো না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *