মৌমিতা চক্রবর্তী: আরজি কর-কাণ্ডে যখন উত্তাল রাজ্য থেকে দেশ। সেই সময় ধীরে ধীরে উঠে আসছে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মক্ষেত্রে নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষের উপর যৌন হেনস্তার খবর। সম্প্রতি মালয়ালম চলচ্চিত্র জগতে যৌন হেনস্থার ঘটনা নিয়ে ‘হেমা কমিশন’একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। এরপরেই গত রবিবার টলিউডে কাজের পরিবেশ ঠিক রাখার দাবি জানিয়ে ইম্পা, আর্টিস্ট ফোরাম, ফেডারেশন ও টেলি অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে চিঠি দিয়েছে উইমেনস ফোরাম ফর স্ক্রিন ওয়ার্কাস প্লাস (Womens’ Forum for Screen Workers+)। শুক্রবার ইন্ডাস্ট্রিতে হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে তৎপর হল ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (FCTWEI)।
আরও পড়ুন- R G Kar Incident: অপপ্রচার চলছে! সেমিনার রুমের ছবি দেখিয়ে পুলিসের দাবি, কোনও বহিরাগত ছিলেন না…
যৌন হেনস্তা এবং অশালীন-অনৈতিক আচরণের ঘটনা রুখতে রক্ষাকবচ হিসেবে ‘সুরক্ষা বন্ধু’ কমিটি তৈরি করল ফেডারেশন। ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস জানান যে ‘সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে শতাব্দী-প্রাচীন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে বিব্রতকর, অনৈতিক, লজ্জাজনক অভিযোগ উঠছে কয়েকজন মহিলা অভিনয় শিল্পী ও কলাকুশলীদের কাছ থেকে। এই অভিযোগ বিরল ও ব্যতিক্রম হলেও চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কিছু ব্যক্তি যে অনৈতিক ও অশালীন ব্যবহার করেছেন তা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। বিভিন্ন গিল্ডের সদস্যদের মধ্যে থেকে মহিলা প্রতিনিধিদের নিয়ে ফেডারেশন একটি কমিটি বা নির্বাহী সমিতি তৈরি করা হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রের যেকোনও জায়গায়, শুটিং বা প্রি পোডাকশন, পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ করতে গিয়ে মহিলা সদস্য যদি কোনওরকম লিঙ্গবৈষম্যমূলক আচরণ, অশালীন ইঙ্গিত বা আচরণ, যেকোনও প্রকার অরক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়েন বা যেকোনও বৈদ্যুতীন মাধ্যম (যেমন মোবাইল ফোন ইত্যাদি) ব্যবহার করে তাঁদের কেউ উত্যক্ত করার চেষ্টা করে তাহলে তৎক্ষণাত সেই সদস্য সুরক্ষা বন্ধু কমিটিতে অভিযোগ জানাতে পারবেন। লিখিতভাবে বা ইমেলের মাধ্যমে যেখানে অভিযোগ জানানো যাবে ওই কমিটিতে’।
ফেডারেশন কলকাতা পুলিসের মুখ্য নগরপাল ও ডিরেক্টর জেনারেল-এর কাছে কমিটি গঠনের বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। পুলিশের সহায়তা পাওয়ার আশা করছেন তারা। ফেডারেশনের তরফে জানানো হয় যে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে যে কেউ পুলিসের কাছে অভিযোগ দাখিল করতে পারবে। সুরক্ষা বন্ধু কমিটির সদস্যরা কমিটির অন্তর্ভুক্ত আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনাও করবে। শহরের বেশকিছু প্রথিতযশা আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন তারা। কেস টু কেস প্রতিটি বিষয় নিয়ে তারা অভিযোগ দায়ের করবেন। এমনকী আইনজ্ঞের পরামর্শ নিতে যে আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন তা কোনও অভিযোগকারিণী আর্থিক কারণে করতে অসমর্থ হলে ফেডারেশন তার ব্যয়ভার বহন করবে।
এখানেই শেষ নয়, যতক্ষণ না সত্য উদঘাটিত হচ্ছে অপরাধীর আইনি শাস্তি ঘোষণা হচ্ছে ‘সুরক্ষা বন্ধু’ অভিযোগকারিণীর সমস্ত নিরাপত্তা ও কাজের উপযুক্ত পরিবেশের জন্য পুলিশি সহায়তা চাইতে পারেন। এমনকী মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে কোঅর্ডিনেশন চলছে বলে জানায় ফেডারেশন। কর্মক্ষেত্রে কোনও জায়গাতেই কারও সঙ্গে কোনওরকম অশালীন ইঙ্গিত, বৈষম্যমূলক আচরণ হলে, কেউ উত্যক্ত করার চেষ্টা করলে তৎক্ষণাৎ সেই সদস্য ‘সুরক্ষা বন্ধু’র সঙ্গে যেকোনও সদস্য যোগাযোগ করতে পারবে যে কেউ। চিকিৎসায় সহায়তার প্রয়োজন হলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ সহায়তা করবে বলেও জানিয়েছেন। একইসঙ্গে EIMPA-এর সভাপতি এবং আর্টিস্ট ফোরামকে সামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ফেডারেশনের তরফে। একইসঙ্গে ফেডারেশনের এই পদক্ষেপ চলচ্চিত্র শিল্পের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করবে বলেও মত তাঁদের।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)