টিন-এজ প্রেগন্যান্সি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরে ‘কনসালটেশন অফ এডোলেশন সেল অ্যান্ড চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটি’র মিটিংয়ে নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বার হার কমাতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকদের উপলব্ধি, নাবালিকার বিয়ে রুখতে না পারলে কমানো যাবে না নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বার হার।ফলে নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করতে ভিলেজ চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটিগুলিকে আরও সক্রিয় করার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। ওই কমিটিতে গ্রামের মোড়ল, পুরোহিত, সিভিক ভলান্টিয়ার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও পঞ্চায়েত সদস্যদের যুক্ত করা হচ্ছে। এলাকায় কোনও নাবালিকার বিয়ের কথাবার্তা শুরু হলেই যাতে স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন বা শিশু সুরক্ষা দপ্তরের কর্মীরা দ্রুত পৌঁছে যেতে পারেন, সেই কারণে এই সিদ্ধান্ত।
এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরী, অতিরিক্ত জেলাশাসকের কেম্পা হোন্নাইয়া, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিনাকী দত্ত, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কন্যাশ্রীরা।
কেন উদ্বেগ? জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গত এক বছরে জেলায় নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা ১০,৭৫৫ জন। জেলায় নাবালিকা বিয়ের হার অন্য জেলার তুলনায় বেশি বলেই এই ঘটনা, মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি, নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা এবং মাতৃ-মৃত্যুর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমেছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক বলেন, ‘স্কুলে কন্যাশ্রী ক্লাব, বন্ধুমহল তৈরির ফলে অনেকটা সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। বাল্যবিবাহ রুখতে গ্রাম লেভেল কমিটিগুলিকে আরও সক্রিয় করা হচ্ছে। কতটা কাজ হলো, কী সমস্যা হচ্ছে, কী ভাবে সমাধান করা যাবে তা নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পর্যালোচনা করতে হবে। যে কোনও মূল্যে বাল্যবিবাহ আটকাতে হবে।’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘অল্প বয়সে মা হলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। জেলায় ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মেয়ে রক্তাল্পতায় ভোগে। এই রক্তাল্পতা নিয়ে গর্ভধারণ করলে সদ্যোজাতের নানা সমস্যা হতে পারে। গর্ভপাতের সময়ে সামান্য রক্তপাতে মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য দপ্তর ও জেলা প্রশাসন মিলে আরও কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্কুলের বাচ্চাদের যে আয়রন ট্যাবলেট দেওয়ার হয় তা নিয়ম করে খেতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন
হতে হবে।’
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২১টি ব্লকের মধ্যে সবং, গড়বেতা ১, গড়বেতা ২, গড়বেতা ৩, শালবনি, খড়্গপুর১, চন্দ্রকোনা১, চন্দ্রকোনা ২ ও কেশিয়াড়ি, এই ৯টি ব্লকে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা কিছুটা বেশি। জেলার মধ্যে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি গড়বেতা ৩ ব্লকে। প্রায় ২৭ শতাংশ।
জেলা প্রশসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘২০২১ সালে মাতৃ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬৪। পরের দু’বছর সংখ্যাটা অনেক কমেছে। কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া আটকাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এলাকা চিহ্নিত করে বাল্যবিবাহ রোধে বাড়তি উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন।’