Drinking Water For Birds,গাছ-পাখিতে বিদ্যুতের সাব স্টেশন যেন ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ – salanpur dab sub station provide drinking water for birds


বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল
বিদ্যুৎ স্টেশন বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধাতব পরিবেশের নিষ্প্রাণ এক ছবি। কিন্তু, এর ঠিক উল্টো ছবি দেখা যাবে সালানপুরের ডাবর সাব স্টেশনে। ১২ বিঘা জমির উপর সেই বিশাল সাব স্টেশন ঘেরা শুধুই গাছে। নিম, আম, দেবদারুর সঙ্গে কলাগাছে যেন ছোটখাটো অভয়ারণ্য। সেই সাব স্টেশনে এখন পাখিদের রাজত্ব।তাদের আশ্রয়ের জন্য গাছে গাছে বাঁধা হয়েছে মাটির কলসি। পাখিদের জলপানের জন্য করা হয়েছে জলাধার। এলাকার বাসিন্দাদের কাছে এই সাব স্টেশন এখন যেন ‘বাঞ্ছারামের বাগান’। আসানসোল বিদ্যুৎ দপ্তরের ডিভিশনাল ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের আওতায় থাকা ৩৩ কিলো ভোল্টের এই সাব স্টেশনটি তৈরি হয়েছিল ২০০৭ সালে। ধীরে ধীরে এর সম্প্রসারণও হয়।

বর্তমানে ১২টি ফিডারের মাধ্যমে সাঁওতালডি থেকে আসা বিদ্যুৎ পৌঁছে যায় সালানপুর, বারাবনির কয়েক হাজার গ্রাহকের ঘরে। এক সময়ে ধু ধু ফাঁকা মাঠের মধ্যে পড়েছিল বিশাল এই সাব স্টেশনটি। তবে এর চেহারা পাল্টে যায় সাব স্টেশন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থার আধিকারিক সব্যসাচী রায়ের হাত ধরে। নিজের অর্থ ব্যয় করে তিনি পাল্টে দিয়েছেন এখানকার পরিবেশ।

কেন নিজের পকেটের টাকা খরচ করে গাছ বসাতে গেলেন? সব্যসাচী বলেন, ‘স্কুলে পড়ার সময় থেকেই গাছের চারা জোগাড় করে এনে বসাতাম। কখনও দু’একটি টিয়াপাখিকে উড়তেও দেখতাম। গাছের ডালে এসে বসত। কিছু প্রতিবেশী পাখি পুষতেন। আমার মনে হতো, খাঁচা নয় পাখিদের জন্য মুক্ত পরিবেশই আদর্শ।’ তখন থেকেই ভাবনা মাথায় কাজ করত সব্যসাচীর।

বলেন, ‘ছোটবেলায় ভাবতাম, সুযোগ পেলে গাছেই পাখিদের বাসা তৈরি করে দেবো। খাবার, জলের বন্দোবস্ত করব।’ সব্যসাচীর সেই স্বপ্ন আজ সফল হয়েছে। বলেন, ‘আজ আমার কাছে সবচেয়ে বড় সম্পদ এখানকার গাছ, পাখি। সাব স্টেশনের চারপাশে এই মুহূর্তে প্রায় ৮০০ গাছ রয়েছে। পাখিদের জন্য পরিকল্পনা করে নিম, আম, কলাগাছ লাগিয়েছি। কিছু গাছ বন দপ্তর থেকে এনেছি। এ বছরে সাব স্টেশনের ভিতরে ও বাইরে আরও প্রায় ৫০০ গাছ লাগালাম।’

আগামী দিনে সাব স্টেশন থেকে রূপনারায়ণপুর ও আসানসোলের দিকে যাওয়ার রাস্তার দু’দিকে প্রচুর গাছ বসানোর ইচ্ছা রয়েছে তাঁর।
গাছের পরিচর্যা, পাখিদের জল ও খাবার দেওয়ার কাজে সব্যসাচীকে সাহায্য করেন তাঁদের সংস্থার কর্মী ধীরেন, কালু, সিরাজুল। বাগান পরিচর্যার জন্য প্রতিদিন প্রায় ঘণ্টা দুয়েক সময় দেন তাঁরা।

Flower Cultivation: অতিবৃষ্টিতে চাষে ক্ষতি, পুজোর আগে ফুলের দামবৃদ্ধির আশঙ্কা চাষিদের

সব্যসাচী বলেন, ‘সব পাখি তো চিনি না তবে হরেক রঙের বিচিত্র পাখি আসে। ওদের কিচিরমিচিরে মন ভরে ওঠে।’ বাগানে একটি ফোয়ারা তৈরি করেছেন তাঁরা। ইচ্ছে রয়েছে, চলতি বছরেই ওই ফোয়ারায় আলো ও ধ্বনির ব্যবস্থা করা। স্থানীয় বহু মানুষের এখন বেড়ানোর জায়গা এই বাগান। বিদ্যুতের সাব স্টেশন এখন প্রকৃত অর্থেই শান্তির নীড়।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং থ্যালাসেমিয়া সোসাইটির রাজ্য সম্পাদক তপন মাহাতা বলেন, ‘সাব স্টেশনের বাগানে বেড়ানোর সময়ে তপন সিনহার সিনেমার সেই বাঞ্ছারামের বাগানের কথা আমাদের মনে পড়ে যায়।’ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার রিজিওনাল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ বাগদি বলেন, ‘এমন পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে আমাদের জেলায় ডাবর সাব স্টেশন অবশ্যই অভিনবত্ব এনেছে। আমরা আজকাল গ্রিন এনার্জির কথা খুব বলি। বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় যদি এ ভাবে সকলে গাছ লাগাই, তাহলেই চারপাশের পরিবেশ অনেকটা পাল্টে যাবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *