জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সকাল থেকে রাত, গোটা রবিবার শহর কলকাতা দখল করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে সারারাত রাস্তায় ধর্ণা দিলেন স্বস্তিকা-সোহিনী-বিদিপ্তা থেকে শুরু করে অসংখ্য সাধারণ মানুষ। এদিনই আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে অবমাননাকর মন্তব্য করে বসেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক ও অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। তার জেরেই তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব ত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তাঁকে ধিক্কার জানান বিদিপ্তা, ঋত্বিক চক্রবর্তী থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই। তবে এবার তাঁর সঙ্গে মঞ্চে অভিনয় করতে অনিচ্ছা জানিয়ে দিলেন সুজন নীল মুখোপাধ্যায়।
চেতনার “মাগন রাজার পালা” নাটকে দুই মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন সুজন নীল মুখোপাধ্যায় ও কাঞ্চন মল্লিক। রবিবার কাঞ্চনের মন্তব্যের পরে সোমবার অভিনেতা সুজন লেখেন, ‘আমার আর কাঞ্চন অভিনীত নাটকের আমন্ত্রিত অভিনয় বাতিল হল’। এরপর সুজন নীল মুখোপাধ্যায় আরও লেখেন, ‘মাগন আর রাজা, আর জুটি বেঁধে মঞ্চে নামবে না। বেশ কষ্ট হচ্ছে কিন্তু বাস্তব বা মানুষের নিদান আসল। সেটা গ্ৰহণ করতে হয়। উল্টো দিকে এটাও সত্যি, কাঞ্চন মল্লিকের এই নাটকে যে অবদান, তা চিরকাল মনে গেঁথে থাকবে। আমরা একসাথে পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা ভারতবর্ষ জুড়ে ৫৫ টি মতো অভিনয় করেছি। সে অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। কাঞ্চন ছাড়া মাগন হয় না, ওর অতুলনীয় অভিনয় এই নাটকের প্রাণ ছিল। আমার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি। এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের মুহূর্তে এই নাটক স্তব্ধ হল। অথচ এই নাটকে দুই চোর মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই শিক্ষা দেয় যে,আসল চোরেরা সমাজে কোথায় বাসা বেঁধে লুকিয়ে আছে?এই সময়ের এক সংক্রামক বয়ান। আলবিদা,মাগন…আবার যদি নতুন কোন ভোরে দেখা হয়ে যায়, আবার চুরি করব! যেমন মঞ্চে করেছি…এত বছর। কি ????কি আবার, মানুষের মন’।
অন্যদিকে সুদীপ্তা চক্রবর্তী লেখেন, ‘মাননীয় বিধায়ক শ্রী কাঞ্চন মল্লিক, এটা আপনি কী বললেন? কর্মবিরতিতে থাকা ডাক্তার রা সরকারী চাকরি করেন বলে তাঁদের কর্মস্থলে দিনের পর দিন ধরে ঘটে যাওয়া সরকারের অন্যায় কাজ নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলতে পারবেন না? সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে হতাশা বা উষ্মা প্রকাশ করতে গেলে একজন সরকারি চাকুরিজীবী র মাইনে নেওয়া যাবে না? বিচারের দাবিতে মিছিলে গেছেন বলে তাঁদের পুজোর আগে প্রাপ্য বোনাস নিয়ে খিল্লি করে বলবেন “বোনাস টোনাস যে হয়, সেটা নেবেন তো, না নেবেন না?”?’চাকরি’ শব্দটা তো আপনি আক্ষরিক অর্থে নিয়ে নিয়েছেন মশাই!সরকারি হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী নৃশংস ভাবে ধর্ষিত ও খুন হয়ে যাওয়া তিলোত্তমার মা বাবা কে ‘মেয়ে আত্মহত্যা করেছে’ বলল কেন– এই প্রশ্ন করার আগে সরকারের দেওয়া পুরস্কার ফেরত দিয়ে দিতে হবে? না, মানে, বিবেকের তাড়নায় কেউ ফেরত দিতেই পারেন। কিন্তু সেটাই পূর্ব শর্ত নাকি? দেওয়ালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি ঝুলিয়ে রেখে এই নির্লজ্জ কমেডি করার আগে একবার ও ভাবলেন না? আপনার কমেডি অভিনয়ই কিন্তু মানুষের মনে একদিন আপনার পাকাপাকি স্থান দিয়েছিল। আমি ও তার ফ্যান। কিন্তু আজ যেটা করলেন, ওটা কমেডি ও হয়নি, অভিনয় ও হয়নি। ওটা কিছুই হয়নি। আপনার শুভ বুদ্ধি র উদয় হোক শিগগিরই, এই কামনা করি। এই সরকারি পুরস্কার অনুষ্ঠান গুলোয় আমার বহু বছর যাওয়া হয়ে ওঠে না। আচ্ছা, ওখানে পুরষ্কার দেবার আগে কি এই গুলো বলে দেওয়া হয়?মানে পুরষ্কার পাবার পরের কী করা উচিত আর কী নয়, এই গুলো কী ও কয় প্রকার? না, মানে জানতে চাইছি আর কি।
পাশাপাশি তিনি আরও লেখেন, ‘এক সময়ের বন্ধু/সহকর্মী কাঞ্চন মল্লিক, তোকে ত্যাগ দিলাম। অনুপ্রেরণার লকারে চোখ, কান, মাথা, মনুষ্যত্ব, বিবেক,বুদ্ধি,বিবেচনা,শিক্ষা সব ঢুকিয়ে রেখে চাবি টা হারিয়ে ফেলেছিস মনে হয়। চাবিটা খুঁজে পেলে খবর দিস বন্ধু। তখন আবার কথা হবে, আড্ডা হবে’। বিদিপ্তা লেখেন, ‘ছিঃ কাঞ্চন মল্লিক ছিঃ’। অনন্যা চট্টোপাধ্যায় লেখেন, ‘আপনি এই কথাগুলো বলতে পারলেন? একবার নিজের কথাগুলো কানে শুনেছেন?শুনে কি লজ্জা পেয়েছেন? আপনারা জনগণের অভিভাবক। আপনাদের উপর থেকে মানুষের বিশ্বাস, ভরসা সরে যেতে দেবেন না এভাবে। একা হয়ে যাবেন একদিন। দায়িত্ব নিয়ে কথা বলুন। পার্টি করলেই সবাই খারাপ মানুষ হয়ে যায় না। এই বিশ্বাসের জন্ম দিন। আপনি জননেতা’। ঋত্বিক চক্রবর্তী কাঞ্চনকে ব্যঙ্গ করে কটাক্ষ করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)