এ দেশে ব্রিটিশরা প্রথম আদালত তৈরি করে এ বঙ্গেই, কলকাতায়। বর্তমান রেড রোডের ধারে ফোর্ট উইলিয়ামে ছিল প্রথম সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা টাউন হলেও এক সময়ে হাইকোর্টের কাজকর্ম চলত। পরবর্তীতে ১৮৬৪ সালে বর্তমান কলকাতা হাইকোর্ট ভবন তৈরি হয়। পরে দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তর হলেও ব্রিটিশদের তৈরি বহু অট্টালিকার সঙ্গে সাহেবদের থেকে শেখা কথাবার্তা, আদবকায়দা স্বাধীনতার সাড়ে সাত দশক পরেও হাইকোর্টে এখনও চালু রয়েছে।
কয়েক বছর আগে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টিএস রাধাকৃষ্ণন লিখিত ভাবে নিম্ন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীদের তাঁকে ‘মাই লর্ড’ না বলে ‘স্যর’ সম্বোধনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। সম্প্রতি ফের হাইকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমও একই ভাবে ‘মাই লর্ড’ সম্বোধন না করে তাঁকে ‘স্যর’ সম্বোধনের পরামর্শ দিয়েছেন। দু’জনেরই মূল ভাবনা—ঔপনিবেশিক রীতিনীতি, ভাবধারা থেকে বেরোনো।
কিন্তু আইনজীবীরা বলছেন, বাস্তবে হাইকোর্টে বহু রীতিনীতি চলে, এমন শব্দ-চয়ন করা হয়—যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার অনুসরণেই। জরুরি হলো মানসিকতার পরিবর্তন। নতুন নতুন আইন কলেজের এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে আগের অনেক অপ্রয়োজনীয় রীতি-রেওয়াজ থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে পারবেন বলে বিশ্বাস বর্ষীয়ান আইনজীবীদের অনেকের। বিচারপতিরাও যদি প্রত্যেকে একই রকম ভাবে ঔপনিবেশিক চিহ্ন, শব্দ, প্রথা বিলোপে নিয়মিত পদক্ষেপ করেন এবং পরামর্শ দেন, তা হলেও উপকার হবে বলে মনে করেন অনেকে।
আইনজীবীরা মনে করাচ্ছেন, দিল্লি হাইকোর্টে থাকাকালীন বিচারপতি এস মুরলীধর তাঁকে ‘মাই লর্ড’ সম্বোধন বন্ধ করতে পেরেছিলেন। এজলাসে বসার সময়ে প্রথামতো আর্দালিদের চেয়ার এগিয়ে দেওয়ার প্রথাও তিনি বন্ধ করেছিলেন। পরবর্তীতে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে এবং ওডিশা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি থাকাকালীনও বিচারপতি মুরলীধর দিল্লিতে সূচনা করা পরিবর্তন অনুসরণের ব্যবস্থা করেছিলেন।