অনেকে যেন মোক্ষম সময়ের প্রতীক্ষাতেই ছিলেন। এত দিন যে ভয়-ভীতি তাঁদের মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছিল, সেই জুনিয়র ডাক্তাররা এ বার প্যান্ডোরার বাক্স খুলেছেন। ঝুলি থেকে বার করে আনছেন প্রভাবশালী চিকিৎসক অভীক দে’র একের পর এক অনিয়মের ছবি।তেমনই একটি ছবি হাতে এসেছে ‘এই সময়’-এর হাতে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গেস্ট হাউসে হবু স্ত্রীর সঙ্গে আইবুড়ো ভাত খাচ্ছেন অভীক দে। যে ছবি দেখে সংগঠন থেকে সাসপেন্ড হওয়া অভীক দে সম্পর্কে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতাদেরই বলতে হচ্ছে, এমনটা না হলেই ভালো হতো।
সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মাথায় টোপর পরা অভীক ও তাঁর হবু স্ত্রীর সামনে হাজার পদ সাজানো। মুখে লাজুক হাসি। সেই আইবুড়ো ভাতের আয়োজক ছিলেন মেডিক্যাল কলেজে তাঁর অনুগামী ‘ভাই’রা। মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার, অধ্যাপক চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রী ও পিজিটিদের কাছে ‘দাদা’ ছিলেন অভীক। ‘দাদা’র আদেশ পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ত তাঁর ‘ভাই’য়েরা। যদিও তেমনই ২০ জন ‘ভাই’য়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিয়ে হয় অভীকের। ১৬ ডিসেম্বর বর্ধমানের একটি অভিজাত হোটেলে রিসেপশন হয়েছিল অভীক দে’র। তার আগে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ‘ভাই’দের উদ্যোগে মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবনের গেস্ট হাউসে ঘটা করে পালিত হয় আইবুড়ো ভাতের ভোজ। দুপুর ও রাতে ভূরিভোজের আয়োজনও হয়েছিল। মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বক্তব্য, কতটা প্রভাব থাকলে তবেই মেডিক্যাল কলেজের গেস্ট হাউসে এ ভাবে কারও দু’বেলা আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান করা যায় তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
বর্ধমান মেডিক্যালের এক পিজিটি অবশ্য বলেন, ‘এতে অবাক হওয়ার কোনও কারণ নেই। এই মেডিক্যাল কলেজে থ্রেট কালচারের জনককে আইবুড়ো ভাত খাওয়ানোর জন্য এলাহি আয়োজনের ব্যবস্থা তো করতেই হবে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, তার মধ্যে কতটা আন্তরিকতা ছিল। সেখানেও কোনও ভয় কাজ করেছিল কিনা।’
আর এক পিজিটি মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, ‘থ্রেট কালচার যিনি চালু করেছিলেন, তাঁর আইবুড়ো ভাত গেস্ট হাউসে করা তো অস্বাভাবিক কিছু নয়।’ অভীক দে’র বিষয়ে বেজায় অস্বস্তিতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিদিনই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে।
আইবুড়ো ভাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে জয়েন করেছি মার্চ মাসের একেবারে শেষের দিকে। ফলে তার আগে প্রশাসনিক ভবনের গেস্ট হাউসে কী ভাবে কারও আইবুড়ো ভাত খাওয়ানো হলো তার উত্তর আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’
অভীক দে’র রিসেপশনে হাজির ছিলেন বর্ধমান জেলা তৃণমূলের বহু নেতা। উপস্থিত ছিলেন তিন জন মন্ত্রীও। সেদিনের রিসেপশন পার্টিতে অভীকের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেছিলেন সন্দীপ ঘোষও।
পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি স্বরাজ ঘোষ বলেন, ‘আমন্ত্রিত হিসেবে ওর জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালনের দিন আমি মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিলাম। কলেজে আমাদের ছাত্র পরিষদের ইউনিট থেকে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল। পার্টিকর্মী হিসেবে সেখানে থাকাটা কোনও অন্যায় হয়েছে বলে আমি মনে করি না।। ছবি তোলাও অপরাধ নয়। তবে আইবুড়ো ভাতের ক্ষেত্রে বলতে পারি, ও ভাবে ওখানে না করলেই ভালো হতো।’