Justice For Rg Kar,পিছোল শুনানি, তবু পথের দখল জনতার – justice for rg kar protest reclaim the night continue across west bengal


এই সময়: পিছিয়ে গেল সুপ্রিম-শুনানি। কিন্তু জাস্টিসের দাবিতে রাত দখলের আন্দোলন অব্যাহত। দাবি একটাই, আরজি করের নির্যাতিতার ন্যায় বিচার চাই। ৯ অগস্ট তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পরে ২৫ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। সেই ঘটনায় অপরাধী কি একা সঞ্জয় রায়ই, নাকি আরও কেউ এবং প্রকৃত দোষীদের সাজা হবে কবে— এই প্রশ্ন নির্যাতিতার পরিবার থেকে শুরু করে গোটা দেশের।জবাব পেতে আজ, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে নির্ধারিত শুনানির দিকে নজর ছিল প্রত্যেকের। কিন্তু এ দিন সন্ধেয় শীর্ষ আদালতের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হলো, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় আজ অনুপস্থিত থাকায় তাঁর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে কোনও নির্ধারিত মামলার শুনানি হবে না।

শুনানি না-হলেও সূত্রের খবর, শীর্ষ আদালতের আগের নির্দেশের প্রেক্ষিতে আরজি করের তদন্ত নিয়ে একটি রিপোর্ট আজই সুপ্রিম কোর্টে জমা দেবে সিবিআই। সর্বোচ্চ আদালতে আজকের নির্ধারিত শুনানির দিকে তাকিয়েই নির্যাতিতার ন্যায় বিচারের দাবিতে বুধবার রাত দখলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই শুনানিই স্থগিত হয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লেও রাত দখলের কর্মসূচি থেকে পিছু হটল না জনতা। কারণ, এই লড়াই তো জাস্টিসের দাবিতে।

ঠিক যে দাবিতে তিন সপ্তাহ আগে ১৪ অগস্ট রাতে বেনজির রাত দখলের কর্মসূচি দেখেছিল কলকাতা-সহ গোটা রাজ্য। এ দিনও আলো নিভিয়ে মোমবাতির শিখায় বিচারের দাবিতে পথে নামলেন সাধারণ নাগরিকরা। পিছু হটল রাজনীতির দাপট। আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের ডাকে বুধবার প্রথমে রাত ন’টা থেকে দশটা পর্যন্ত আলো নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়েছিল। শহর থেকে মফসসলের জেলা— সর্বত্র সেই প্রতিবাদে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দিয়েছেন সাধারণ নাগরিকরা।

রাস্তায় বেরিয়ে আরও একবার দৃপ্ত কণ্ঠে তাঁরা জানিয়েছেন, ‘সব মানুষের একটাই স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর।’ কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে শতাধিক জায়গায় রাত দখলের ডাকে সাড়া দিয়ে জমায়েত করেছেন হাজার হাজার মানুষ। আন্দোলনকারীদের ডাকে সাড়া দিয়ে এ দিন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। যা সেট করে দেয় প্রতিবাদের মুখটা। নির্যাতিতার ন্যায় বিচার চেয়ে শুধু তিলোত্তমা কলকাতা কেন, প্রতিবাদের ঢেউ রাজ্যের সর্বত্রই।

বহরমপুরে তিন কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে মানব বন্ধন সেই স্পিরিটেরই সাক্ষী। কেউ হুইল চেয়ারে, কেউ লাঠি হাতে, কেউ কোলে সন্তানকে নিয়ে, কেউ বা অন্যের কাঁধে ভর করেও নেমে পড়লেন রাস্তায়। কারও হাতে মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট অন করা, কারও হাতে গিটার, কেউ আবার শুধুই মুষ্টিবদ্ধ হাতে স্লোগান তুললেন বিচারের দাবিতে। যেখানে মেয়েদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এর আগে ১৪ অগস্ট রাতে এক অভূতপূর্ব রাত দখলের সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ।

এ দিনের কর্মসূচিতে সামিল হতে নির্যাতিতা তরুণী-চিকিৎসকের বাবা-মা পৌঁছে গিয়েছিলেন আরজি করে। সেখানে নির্যাতিতার মা বলেন, ‘আমাদের যেমন নিদ্রাহীন রাত কাটছে, তেমন ভাবেই যেন অপরাধীদেরও চোখে ঘুম না আসে।’ সুপ্রিম কোর্টে শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরাও। ১৪ অগস্ট রাতে মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচির দিনই আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছিল বহিরাগতরা। তা নিয়েও শীর্ষ আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য।

সে দিনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না-হয়, তা নিশ্চিত করতে গোটা আরজি কর চত্বরের ভিতরে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং বাইরে পুলিশের রণসজ্জা ছিল চোখে পড়ার মতো। আগের বারের মতো রাত দখলের কর্মসূচিতে এ বারও ভেঙেছে বয়সের বেড়াজাল। এ দিন শ্যামবাজারের রাত দখলের কর্মসূচিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছিল সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ক্লাস ওয়ানের ছাত্রী আদ্রিকা অধিকারী।

সে এত কিছু বোঝে না। যেটুকু বোঝে তাতে আদ্রিকা বলে, ‘আমি শুনেছি, একটা বড় পাপ হয়েছে। দুষ্টু লোকেদের তাই শাস্তি চাই।’ যাদবপুর এইটবিতে ছিলেন প্রথম রাত দখলের ডাক দেওয়া রিমঝিম সিনহা। তাঁর কথায়, ‘আরও একটা রাত দখলের সাক্ষী আমরা। এই দু’টো রাত দখলের মধ্যে কিন্তু তেমন কিছুই বদলায়নি। বদলেছে শুধু মানুষের চুপ করে থাকার প্রবণতা। আজ আর কারও ডাকে নয়, মানুষ শুধুই বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমছেন।’

যাদবপুর থেকে রিমঝিম পরে যান অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসেও। যাদবপুরে এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে ভিড়ের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক মহিলা। সমবেত জনতাই তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। নাগেরবাজারের রাত দখলে গিয়েছিলেন ৭৫ বছর বয়সী প্রবীণা শান্তিলতা মুখোপাধ্যায়। ভালো করে হাঁটতেও পারেন না। তাই ছেলের হাত ধরে নেমেছিলেন রাস্তায়।

RG Kar Protest: ‘অপরাধীরা ঘুমহারা হোক’, আরজি করের প্রতিবাদ মঞ্চে নির্যাতিতার মা-বাবা

শান্তিলতা বলেন, ‘আমরা কোনও রাজনৈতিক দল করি না। আমাদের দফা এক, দাবিও এক— সেটা হলো শুধু বিচার, বিচার এবং বিচার। কবে পাব সেই বিচার?’ এই প্রশ্নটাই শুধু শোনা যাচ্ছে সমবেত নাগরিকদের সকলের মুখে। অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য, মমতা শঙ্কর, আবীর চট্টোপাধ্যায়দের মতো চেনা মুখেরাও ছিলেন এই প্রতিবাদে।

শুধু আলো নিভিয়ে প্রতিবাদই নয়, চিকিৎসকরাও এ দিন জনতার ডাকে সাড়া দিয়ে রাজ্যের প্রায় ১০৩টি জায়গায় রাত দখলের কর্মসূচিতে ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে দিল্লি, বিহার, প্রয়াগরাজ, মুম্বই, হায়দরাবাদে চিকিৎসক সমাজ একই ভাবে রাস্তায় নেমে রাত দখল করেছেন। আরজি করের নির্যাতিতার দাবিতে এ দিন উত্তর ভারতের লাদাখের লেহ-তেও মোমবাতি, মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে বিশাল মিছিল হয়েছে। অগুনতি মানুষের অক্লান্ত মিছিলের ভাষা হয়তো আলাদা, স্লোগান একটাই, ‘বিচার যত পিছোবে, মিছিল ততই বাড়বে। উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *