ফরাক্কার অংশুমান শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি ২০১৯ সালে এলাকায় বৃক্ষরোপণেরও উদ্যোগ নেন। কিন্তু সেই গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণে দীর্ঘ মেয়াদী নজরদারির দরকার। এরপরেই খোঁজ চলে শান্তিনিকেতনের অনুকরণে একটা স্কুল তৈরি করারও। লাল মাটি, তারমধ্যে লিচু গাছের বাগান। আদিবাসী গ্রামে শিক্ষার চল প্রায় নেই বললেই চলে। নজর পড়তেই শুরু হয় শ্যামলাপুর গ্রামে অনির্বাণ গাছ স্কুল।
বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূর হলেও প্রতিদিন সকালে গিয়ে হাজির হন অংশুমান ও তাঁর সঙ্গীরা। সকাল সাড়ে ছটা থেকে শুরু হয় পাঠাশালা। গাছ তলায় মায়েদের করা চাটাইয়ে বসেই শিক্ষাদান চলে সন্তানদের।
দুপুরে স্কুলে মিড ডে মিল দেওয়া হয়। সেই কারণে সকালে মুড়ি, কাচা ছোলা, কোনও দিন ফল বা লুচি ঘুগনি দিয়ে বাচ্চাদের জলখাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে। শুধু তাই নয় শান্তিনিকেতনের আদলেই তাদের মাটির কাজ, টেরাকোটার কাজ, মুখোশ তৈরিও শেখানো হয়। সপ্তাহে একদিন করে মা-বাবাদেরও এই শিক্ষাদানের কাজ চলে। ছেলেমেয়েরা এই পাঠশালায় পড়াশোনা করায় খুশি অভিভাবকরাও।
এমনই এক পড়ুয়ার মা ফুলিনা কিশকু বলেন, ‘এই পাঠশালায় আমার মেয়ে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। এখানে খুব ভালো পড়াশোনা করানো হয়। অনেক রকম হাতের কাজও শেখানো হয়। যাতে এই সব কাজ করে ওরা আরও বড় জায়গায় পৌঁছতে পারে। বর্তমানে সাতজন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন এই পাঠশালায়। তাঁরা ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও বিনা পারিশ্রমিকেই বাচ্চাদের পড়ান।’
সহকারি শিক্ষক বিপ্লব মন্ডলের কথায়, খোলা আকাশের নীচে বাচ্চাগুলোকে পাঠদান করেন। মন থেকে আলাদা আনন্দ অনুভব করি। বৃক্ষরোপনের মধ্যে দিয়ে আমাদের এই উদ্যোগ শুরু। পড়াশোনার পাশাপাশি নানা রকম হাতের কাজ শিখিয়েও ওদের শেখার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তোলা হয়।
অংশুমান বলেন, ‘শান্তিনিকেতনে পড়ার সময়ই গাছতলায় পড়াশোনার শিক্ষা ব্যবস্থা আমাকে খুব প্রভাবিত করেছিল। সেই ব্যবস্থাকে আমার এলাকায় প্রয়োগ করার চেষ্টাতেই এই প্রয়াস। পাঁচজন বাচ্চা নিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে ১০৫।’
তাঁর সংযোজন, শহুরে শিক্ষার গুণমান যাতে এই প্রত্যন্ত গ্রামের বাচ্চাদের প্রদান করা যায়, সেই কারণে বিনামূল্যে শিক্ষা সামগ্রীও প্রদান করা হয়। এই পাঠশালা থেকে পড়াশোনা করে আগামী দিনে বাচ্চারা যাতে প্রকৃত সমাজ তৈরি করতে পারে ও সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য।