মৃত যুবকের নাম বিক্রম ভট্টাচার্য (২৮)। পেশায় গাড়িচালক হুগলির কোন্নগরের ওই তরুণ মা ও দিদাকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। তাঁর পরিবার সূত্রের খবর, এ দিন ভোরে বাড়ির কাছেই বেঙ্গল ফাইন মোড়ে রাস্তার ধারে যখন তিনি বসেছিলেন, তখন একটি ডাম্পার এসে তাঁর পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। তড়িঘড়ি তাঁকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়।
কিন্তু অভিযোগ, আরজি করে আনার পরে প্রায় তিন ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় পড়ে থেকে সেখানেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম ওই তরুণ আরজি করে ভর্তি হয়েছিলেন সকাল ৯.১০ নাগাদ। প্রয়োজনীয় সব রকম চিকিৎসার পাশাপাশি পায়ের এক্স-রে এবং মাথার সিটি স্ক্যানও করা হয়।
দেখা যায়, মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাতের পাশাপাশি দু’পায়ের অন্তত তিনটি হাড় ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। হয়েছে প্রবল রক্তক্ষরণও। সব রকম জীবনদায়ী চিকিৎসা দেওয়া সত্ত্বেও তাতে সাড়া দেননি আহত ব্যক্তি। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
যদিও এই মৃত্যু নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ এক্স প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ‘সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানা গেল, আরজি করে বিনা চিকিৎসায় মৃত ২৮ বছর বয়সি যুবক! অভিযোগ, সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত পেশেন্ট পড়েছিল। তার পরও তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। কোন্নগরে অ্যাক্সিডেন্ট হয় ওই যুবকের। দুই পায়ের উপর দিয়ে লরি চলে যায়। শ্রীরামপুর থেকে রেফার করা হয় কলকাতায়। কিন্তু চিকিৎসা হয়নি।’
এ দিন বিকেলে মৃত তরুণের বাড়িতে যান কোন্নগর পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন দাস ও স্থানীয় কাউন্সিলার বাবলু পাল। স্বপনও বিনা চিকিৎসায় মর্মান্তিক মৃত্যুর অভিযোগ তোলেন। তাঁর আশঙ্কা, ‘জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে আরও অনেক মানুষের প্রাণ না চলে যায়!’
পরে সাংবাদিক বৈঠকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। সরকার জানে, জুনিয়র চিকিৎসকরা একটা দাবিতে আন্দোলন করছেন। রাজ্য সরকার কেন তাঁদের সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান বা তাঁদের দাবি পূরণ করছে না? তাঁদের তো প্রত্যক্ষ কোনও রাজনৈতিক দাবি নেই। জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন করলেও সিনিয়র ডাক্তাররা তো চিকিৎসা ব্যবস্থা সচল রাখছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার করার জন্য রাজ্য সরকার এসব বলছে।’
একই সুর শোনা গিয়েছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের তরফে। তাদের বক্তব্য, ইমার্জেন্সি পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা হয়েছে সর্বত্র। এর জন্য সিনিয়র ডাক্তাররা উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন।