Rg Kar Protest,জাস্টিস! লড়াইয়ে ছাপ শিশুমনে? – rg kar protest movement issue how much impact of childrens minds know details


‘মাম্মাম, ধর্ষণ কী? মনস্টারের মতো খারাপ কিছু?’ পাঁচ বছরের মেয়ের মুখে কথাটা শুনে একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলেন সুতপা। নার্সারি থেকেই মেয়ের স্কুলে চলছে গুড টাচ, ব্যাড টাচের পাঠ, কিন্তু পাঁচ বছরের একটা খুদেকে ধর্ষণের মানে কী করে বোঝাবেন তিনি, বুঝে উঠতে পারছিলেন না হাইস্কুলের শিক্ষিকা সুতপা।এই সমস্যা সুতপার একার নয়। আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে, বলা ভালো দেশজুড়েই যে প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে, টেলিভিশন-সংবাদপত্র-সোশ্যাল মিডিয়া, বাবা-মায়ের টেলিফোনিক কথাবার্তাতেও ঘুরেফিরে ধর্ষণ-খুন নিয়ে আলোচনা দেখছে-শুনছে বাড়ির খুদে সদস্য। স্কুল যাতায়াতের পথে মিছিল, অবরোধে চোখে পড়ছে ধর্ষণ বিরোধী প্ল্যাকার্ড। ফলে সুতপার মেয়ের মতো অনেক খুদেই বাবা-মায়ের কাছে জানতে চাইছে ধর্ষণের অর্থ।

নিজেদের মতো করে বুঝে নিতে চাইছে, ঠিক কী কারণে আজ রাস্তায় নেমেছে মানুষ। হয়তো সবটুকু বুঝছে না তারা, তবু কচি মনে ছাপ ফেলেছে বর্তমান পরিস্থিতি। তাই কখনও খুদেদের আঁকায় ফুটে উঠছে চোখ থেকে রক্ত গড়ানো কোনও তরুণীর ছবি, অথবা রক্তাক্ত হাতের ছাপের মধ্যে লেখা ‘We want justice’।

তবে কি ধর্ষণ-খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর এই মহানগর এক ধাক্কায় অনেকটা ম্যাচিওর করে দিচ্ছে শৈশবকেও? প্রশ্নটা করা হয়েছিল অ্যাডলোসেন্ট ক্লিনিক মেডিক্যাল কলেজের কাউন্সিলার তথা মনোবিদ অমৃতা চক্রবর্তীকে‌। তাঁর মতে বর্তমান পরিস্থিতি বাচ্চাদের উপর দু’ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রথমত, দশের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো বাচ্চারা, যারা বুঝতে শিখেছে গুড টাচ, ব্যাড টাচের তফাত।

এই প্রতিবাদ তাদের শেখাচ্ছে, কোনও ভাবে যৌন হেনস্থার শিকার হলে সেটা লজ্জা পেয়ে লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়, বরং তার প্রতিবাদ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, একেবারে ছোট বাচ্চাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে খুব সতর্ক ভাবে বোঝাতে হবে, কারণ সব কিছু বেশি ডিটেলে বোঝাতে গেলে তাদের ট্রমাটাইজ়ড হয়ে যাওয়া বা ইনসিকিওরড ফিল করার সম্ভাবনা বেশি।

বিষয়টা নিয়ে ভুক্তভোগী কবি তথা সমাজকর্মী অদিতি বসুরায়। সাড়ে পাঁচ বছরের মেয়ের প্রশ্নের জবাবে ধর্ষণের মানে বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন, কারও অনিচ্ছায় জোর করে তাকে ব্যাড টাচ করা, খুব কষ্ট দেওয়া। ছোট্ট মেয়েটা পাশের বাড়ির এক বন্ধুর সঙ্গে খেলা করতে গিয়ে শুনেছিল, ‘জানিস তো, ওই ডাক্তার দিদিটার চোখ দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছিল, খুব কষ্ট পেয়েছিল।’

এটা অদিতির ছোট্ট মেয়ের মনে এতটাই ছাপ ফেলেছিল, সে আঁকার খাতায় চোখ দিয়ে রক্ত গড়ানো একটা মেয়ের ছবি এঁকেছিল। মাঝ রাতে কেঁদে উঠে অদিতিকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘মা, ডাক্তার দিদিটার খুব কষ্ট হয়েছিল নিশ্চয়ই? ও তো নিশ্চয়ই নিজের মাম্মাকে ডাকছিল…’ বুকের মাঝে মেয়েকে জড়িয়ে সে দিন শান্ত করেছিলেন অদিতি। তাঁর কথায়, ‘মেয়েকে বুঝিয়েছিলাম, ডাক্তার দিদিকে কষ্ট দিয়েছে যে দুষ্টু লোক, তার শাস্তি নিশ্চিত করতেই আমরা পথে নামছি। কিন্তু ও তো ছোট, ওর মনে ঢুকে যাওয়া ভয় কী করে দূর করব?’

বিষয়টাকে একটু অন্য ভাবে হ্যান্ডেলের পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবিদ শতভিষা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বাচ্চারা প্রভাবিত হবে, সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু বিষয়টা তাকে এমন ভাবে বোঝাতে হবে, যাতে সে ন্যায়-অন্যায়ের ফারাকটা বোঝে, কিন্তু মনের উপর খুব চাপ না পড়ে। সহজ এবং স্বাভাবিক ভাবে, তার বয়স অনুযায়ী, তাকে include করে আলোচনা করলে সেটা মানসিক প্রসারে সাহায্য করতে পারে। এই রকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাচ্চার চিন্তা-ভাবনা ও মনন শোনার safe space দিতে পারলে, সে নিজের অধিকার এবং সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। যৌন সচেতনতা সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য খুব প্রয়োজন।’

যৌন হেনস্থায় ট্রমাটাইজ়ড বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মী সুব্রত ঘোষও মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের মনের উপর চাপ পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। আর তাই তাঁর মতে, শিক্ষার গোড়া থেকেই এমপ্যাথি বা সহমর্মিতার পাঠ পড়ানো খুব প্রয়োজন। সুব্রতর মতে, ‘ধর্ষণ একটা মানুষকে কষ্ট দেওয়া, বাচ্চাদের জন্য এটুকু বোঝাই যথেষ্ট। তবে তাকে এটা বোঝাতে হবে, কষ্ট দেওয়াটা কাম্য নয়, আর সেই জন্যই সকলে দুষ্টু লোকটার শাস্তি চাইছে। বাচ্চাটার মধ্যে সেই এমপ্যাথি তৈরি করতে হবে, যাতে সে কখনও কাউকে কষ্ট দেওয়া বা আঘাত করার কথা না ভাবে।’

RG Kar Protest: এক হও, বাড়াও হাত! বয়স ভুলেই প্রতিবাদ

নাট্যকর্মী শান্তনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ১১ বছরের ছেলেও ধর্ষণের বিষয়ে বাবার কাছে প্রশ্ন করেছিল। শান্তনীলের বক্তব্য, ‘ক’দিন আগেই আমার সঙ্গে ওষুধের দোকানে গিয়ে কন্ডোম দেখে, সেটা কী জানতে চেয়েছিল ছেলে। আমি চাইলে ওকে বকাঝকা দিয়ে থামিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে ও কোনও বন্ধুকে লুকিয়ে প্রশ্নটা করত বা ইন্টারনেট সার্চ করত, সেটা আমি চাইনি। বরং বায়োলজির রিপ্রোডাক্টিভ চ্যাপ্টারের রেফারেন্স টেনে একেবারে পড়ার মতো করে ওকে বিষয়টা বুঝিয়েছি। পরে ও যখন ধর্ষণের মানে জানতে চাইল, ওকে বুঝিয়েছি, কোনও পার্টনারের অসম্মতিতেও যখন জোর করে কিছু করা হচ্ছে, সেটা রেপ। তবে ধর্ষণের ভয়াবহতার কথা অবশ্যই ওকে বলতে পারিনি। আমি জানি, বয়স বাড়লে ও নিজেই ধীরে ধীরে বিষয়টা বুঝবে।’

তবে, অভয়ার জন্য এই লড়াই বাচ্চাদেরও অনেকটা ম্যাচিওর করে দিচ্ছে, সেটা একবাক্যে মানছেন সকলেই। তাই তো ‘We want a secured future’ প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিলে পা মেলাতে দেখা যাচ্ছে খুদেদেরও। আঁকা, মায়ের হাত ধরে মিছিলে হাঁটাই হয়ে উঠছে ওদের প্রতিবাদের ভাষা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *