Rg Kar Movement,নজরানা ভালো হলেই পদোন্নতির চিঠি পাকা! – allegations of corruption raised health administration amid of rg kar movement


অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে তিনি পার করে ফেলেছেন পাক্কা ৯টা বছর। তিনটে হাসপাতাল ঘুরে বর্তমানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত তিনি। কিন্তু এত দিনেও পদোন্নতির শিকে ছেঁড়েনি। অথচ তাঁর চেয়ে ঢের জুনিয়র অন্তত তিন জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর গত দু’বছরে পদোন্নতি পেয়ে প্রফেসর হয়ে গিয়েছেন।পদোন্নতি পাওয়া ওই তিন জনের একজন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ছিলেন। সাড়ে চার বছরের মাথায় পদোন্নতি পেয়ে প্রফেসর হিসেবে রামপুরহাট মেডিক্যালে যোগ দেন তিনি। তবে এমনই ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি তাঁর। হিসেব চোকাতে হয়েছে কাঞ্চনমূল্যে। ঠিক সময়ে প্রোমোশনের ফাইলে যাতে সই হয়ে যায়, সে জন্য ঠিক জায়গায় মরিয়া হয়ে নজরানা হিসেবে লাখ তিনেক টাকা দিতে তিনি কার্পণ্য করেননি।

যদিও রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিস ক্যাডারে এটা আদৌ কোনও বিরল নজির নয়। বরং শিক্ষক-চিকিৎসকরা বলছেন, প্রায় ৩০-৪০% পদোন্নতির ক্ষেত্রে এমনটাই এখন দস্তুর। জেলার একটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কথায়, ‘ফেলো কড়ি, পাও প্রোমোশন। নইলে হাত কামড়ে পুরোনো পদ আঁকড়ে বসে থাকো। এই রেওয়াজটা চালু হয়েছিল অনেক আগে, বাম আমলে। তখনকার দুর্নীতিগ্রস্তরা এভারেস্ট বেস ক্যাম্পের রাস্তাটা চিনিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। আর এখনকার দুর্নীতিগ্রস্ত গোষ্ঠী ওই রাস্তায় হেঁটে একেবারে শৃঙ্গ জয় করে ফেলেছে!’

দেশে চিকিৎসা-শিক্ষার নিয়ামক সংস্থা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি)-এর নিয়ম বলছে, আরএমও থেকে পদোন্নতির ধাপগুলি হলো যথাক্রমে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং প্রফেসর। আরএমও থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হতে অন্তত এক বছর কাজ করতে হয় সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসেবে। অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে অন্তত চার বছর কাজ এবং সঙ্গে বড় জার্নালে অন্তত দু’টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পারলে তবেই অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে প্রোমোশনের আবেদন করা যায়।

আর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে অন্তত তিন বছর কাজ এবং সঙ্গে বড় জার্নালে অন্তত চারটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পারলে তবেই প্রফেসর পদে প্রোমোশনের জন্য কেউ বিবেচিত হতে পারেন। যদিও কোনও ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট সময় মেনে পদোন্নতির নজির খুব একটা নেই।

তবে এই ভুলভুলাইয়া থেকে বেরনোর শর্টকাটও আছে। ঠিক যেমন একটু বেশি বয়সে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হওয়া মেদিনীপুর মেডিক্যালের অ্যানাটমির শিক্ষক-চিকিৎসক নিজে থেকেই টাকা দিতে চেয়েছিলেন, বছর পাঁচেকের মধ্যে যাতে তিনি অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হয়ে যেতে পারেন। হয়েওছিলেন। তাঁর গবেষণাপত্রগুলি বেরিয়েছিল অনামী সব জার্নালে। তবে লাখ দুয়েক টাকার লেনদেন মিটিয়ে ফেলেছিলেন আগেভাগেই।

স্বাস্থ্য ভবনের একটি সূত্রের দাবি, যোগ্যতা অর্জন করেও অন্তত ৭০০ শিক্ষক-চিকিৎসক পদোন্নতির মুখাপেক্ষী হয়ে রয়েছেন গত এক বছরে। এর মধ্যে পদোন্নতির আবেদন করেছেন অন্তত ৩০০ জন, যাঁদের সেলফ অ্যাপ্রাইজ়াল এবং ইন্টারভিউ হয়ে গিয়েছে। পদোন্নতির জন্য কাজের অভিজ্ঞতা, গবেষণাপত্রের সংখ্যার পাশাপাশি সেলফ অ্যাপ্রাইজ়াল ও ইন্টারভিউয়ে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করা হয়।

বারাসত মেডিক্যাল কলেজের এক অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বলছেন, ‘এই ইন্টারভিউয়ের ২৫ নম্বরটাতেই জালিয়াতি করা হয়। সেখানেই চলে পয়সার খেলা। শুধু ক্যাশে নয়, অনেক সময়ে ঠিক লোকের কাছে এসি, ফ্রিজ, টিভি, গাড়ির মতো কাইন্ড পৌঁছে দিয়ে কাজ হাসিল করতে হয়।’
পছন্দমাফিক বদলি ৫-৮ লাখ টাকায়!

অন্যথায় কী হয়?
বিফলে যায় কাজের অভিজ্ঞতা ও মেধা। যেমন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিকের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর তথা অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক উৎপল দত্ত। তাঁর পদোন্নতি প্রাপ্য। কিন্তু হয় না। উৎপলের বক্তব্য, ‘যাঁরা খরচ করেন, তাঁরা ইন্টারভিউয়ের পুরো নম্বরটা পেয়ে গিয়ে দৌড়ে এগিয়ে যান।’ তিনি জানাচ্ছেন, গত বছর অগস্ট-সেপ্টেম্বরে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। নভেম্বরে ইন্টারভিউও হয়ে গিয়েছিল। তার পরেও সকলের নাম ওঠেনি প্রোমোশন লিস্টে।

ন্যাশনাল মেডিক্যালের এক শিক্ষক-চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘তথাকথিত উত্তরবঙ্গ লবির লোকজন ঠিক করত পদোন্নতির আর্থিক নজরানার অঙ্ক। সেইমতো ঠিক হতো, কোন প্রার্থীর ইন্টারভিউ কে নেবেন। সব শেষে ফাইল চলে যেত সন্দীপ ঘোষ, অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাসদের কাছে। সেখানেই পড়ত চূড়ান্ত সিলমোহর।’ তাঁর আক্ষেপ, ক্ষমতাসীন ওই গোষ্ঠীর অঙ্গুলিহেলনে পদোন্নতির দৌড়ে পিছনে পড়ে থাকে যোগ্যতা। আর তাকে ওভারটেক করে যায় যোগাযোগ আর নজরানা। (চলবে)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *