RG Kar Protest,ফের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু: দায়ী কি কর্মবিরতি, বিতর্ক – rg kar junior doctors are in strike people facing problem


এই সময়, চুঁচুড়া: ফের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু ঘিরে আলোড়ন ছড়িয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে। গত ১৮ অগস্ট হুগলির হরিপালের বাসিন্দা সদানন্দ পাল (৬২) পথ দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর চোট পান। জেলার দু’টি সরকারি হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা না পেয়ে পরিবার সদানন্দকে নিয়ে আসে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে।কিন্তু সেখানেও আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা তাঁর চিকিৎসা করেননি বলে পরিবারের অভিযোগ। বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর ২৯ অগস্ট মৃত্যু হয় রেশন দোকানের কর্মী সদানন্দর। মঙ্গলবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডলে মৃতের ছেলের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে ফের চিকিৎসকদের আন্দোলনের দিকে আঙুল তোলে শাসকদল। সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হতে প্রশ্ন উঠেছে জেলার হাসপাতালগুলির চিকিৎসা পরিকাঠামো নিয়েও।

ওই ভিডিয়োয় মৃত সদানন্দর ছেলে সৌমেন পাল বলেন, ‘মোটর সাইকেলের ধাক্কায় বাবা রাস্তায় পড়ে মাথার পিছনে চোট পান। পুলিশের গাড়ি করেই প্রথমে হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। সদর হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করানোর পর ডাক্তারবাবু বলেন, বাবার নিউরো সার্জারি করতে হবে। ডাক্তারবাবু কল্যাণী এইমসে রেফার করে ছিলেন। কল্যাণীর দুটো সরকারি হাসপাতালে আমরা ঘুরে ভর্তি করতে পারিনি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাই। কিন্তু কর্মবিরতির জন্য ডাক্তার না থাকায় বাবাকে আমরা ওখানেও ভর্তি করতে পারিনি।’

গত শুক্রবার প্রায় একই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছিলেন কোন্নগর দ্বারিক জঙ্গল রোডের বাসিন্দা কবিতা দাস। গণেশ পুজোর দিন ভোরে বাড়ির কাছেই পায়ের উপর দিয়ে ট্রাক চলে যায় বিধবা কবিতার একমাত্র সন্তান বিক্রম ভট্টাচার্যর (২২)। গুরুতর জখম ছেলেকে নিয়ে ভোরবেলাতেই শ্রীরামপুর ওয়ালশ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে ছোটেন মা। জরুরি বিভাগে চিকিৎসার পর ছেলেকে রেফার করা হয় আরজি কর হাসপাতালে।

কিন্তু সেখানে কয়েক ঘণ্টা ছোটাছুটি করেও ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেননি কবিতা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বিক্রমের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় আরজি কর হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের কাঠগড়ায় তোলেন মৃত বিক্রমের মা কবিতা। বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয় তৃণমূলও।

কিন্তু কেন জেলার হাসপাতালে পরিষেবা পাননি সদানন্দ বা বিক্রম? হরিপালের বিধায়ক করবী মান্না বলেন, ‘গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামোর সংস্কার করা হয়েছে। শয্যা ও অন্যান্য চিকিৎসার পরিসর বৃদ্ধি করা হয়েছে।’ বিএমওএইচ মণিকুন্তলা হাজরা বলেন, ‘পথ দুর্ঘটনায় জখম ব্যক্তিকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের এখানে সিটি স্ক্যান পরিষেবা নেই। তাই চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

বিক্রমের জন্য জাস্টিসের দাবিতে মিছিল
চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের এখানে সিটি স্ক্যান পরিষেবা আছে। কিন্তু নিউরো সার্জারি বা নিউরো মেডিসিনের চিকিৎসক নেই। মেডিসিনের ডাক্তার আছেন। তাঁরা সাধ্যমতো চিকিৎসা করেন। কিন্তু নিউরোর কোনও স্পেশালিস্ট ডাক্তার নেই।’ সিঙ্গুরের বিধায়ক তথা কৃষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, ‘মস্তিস্কে চোট বা আঘাতের চিকিৎসা গ্রামীণ বা জেলা হাসপাতালে নেই। জেলায় দুর্ঘটনায় মাথায় চোট লাগলে মেডিক্যাল বা পিজিতে নিয়ে যাওয়াই দস্তুর।’

বিক্রমের মা কবিতা বলেন, ‘শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ভোরবেলা ডাক্তারবাবুরা ছিলেন। তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেলের পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেন। স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে দ্রুত কলকাতায় রেফার করে দেন। আমরা সকাল ৯টা নাগাদ আরজি করে পৌঁছাই। কিন্তু জরুরি বিভাগ আর ট্রমা কেয়ারে ছোটাছুটি করে কোনও চিকিৎসা হয়নি। চোখের সামনে যন্ত্রণা পেয়ে মরে গেল ছেলেটা।’

বিক্রমের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে শ্রীরামপুর ওয়ালশ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার প্রণবেশ হালদারকে ফোনে পাওয়া যায়নি। জবাব মেলেনি এসএমএসের।

এ দিনই কোন্নগরে বিক্রমের বাড়িতে তৃণমূল সাংসদ দোলা সেনের নেতৃত্বে দেশ বাঁচাও মঞ্চের প্রতিনিধিরা হাজির হয়ে সাহায্যের আশ্বাস দেন। প্রতিনিধিরা যান পিজি হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মৃত রাজীব দেবের রিষড়ার বাড়িতেও। নবান্ন অভিযানে গুরুতর আহত হয়েছিলেন দুই পুলিশকর্মীর বাড়িতেও যান তাঁরা। প্রতিনিধিদলে ছিলেন সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত, বর্ণালী মুখোপাধ্যায়, চলচ্চিত্রকার সুশান রায়ের মতো অনেকে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *