RG Kar Incident: সন্দীপ-ওসি আঁতাঁত, দাবি ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ – cbi claims there is a larger conspiracy behind rg kar incident


এই সময়: আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ এবং প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে উঠেছিল সেই অভিযোগের তির।

আর ওই ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন নির্যাতিতার পরিবার, চিকিৎসক-মহল এমনকী সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশও। ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া একা সঞ্জয় রায় নয়, আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। শনিবার রাতে ওই খুন-ধর্ষণের ঘটনায় সন্দীপ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই কার্যত সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিয়েছে বলে দাবি উঠেছে সমাজ মাধ্যমে।

রবিবার ওই দু’জনকে শিয়ালদহ আদালতে তুলে তাঁদের মধ্যে আঁতাঁত রয়েছে বলে দাবি করেছে সিবিআই। আদালতে পেশ করা তাদের রিপোর্টে উঠে এসেছে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে, সঞ্জয়ের মতো একজন সাধারণ সিভিক ভলান্টিয়ার, যে ওই হাসপাতলের কোনও কাজেই যুক্ত ছিল না, তার সঙ্গে সেই হাসপাতালের অধ্যক্ষের কী ভাবে আঁতাঁত গড়ে ওঠে?

প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি সত্যিই সে দিন ওই নির্মম ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে আরও কয়েকজন? কারণ, ৯ অগস্টের ওই ঘটনার পর অকুস্থল বা ক্রাইম সিন থেকে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছিল বলেও ঘুরিয়ে দাবি করেছে তদন্তকারী সংস্থা।

গত ৩৭ দিন ধরে দোষীদের শাস্তির দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে টানাপড়েন চলছে নবান্নের। এখন টালা থানার প্রাক্তন ওসি এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ায় ‘নৈতিক জয়’ দেখছেন নির্যাতিতার পরিবার এবং চিকিৎসকেরা।

RG Kar Case: ‘কার নির্দেশে এই কাজ?’ ধৃত টালা থানার ওসিকে জুতো দেখিয়ে বিক্ষোভ

শনিবার সিজিও কমপ্লেক্সে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরে অভিজিৎ-কে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দারা। অন্যদিকে, আরজি কর হাসপাতালে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলেই ছিলেন সন্দীপ। এই মামলায় তাঁকে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। রবিবার দুপুরে দু’জনকে শিয়ালদহ আদালতে পেশ করে তিন দিনের হেফাজতের আবেদন করে সিবিআই।

অভিযুক্তদের আইনজীবী তার বিরোধিতা করে বলেন, ‘জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। সরাসরি তাঁরা ওই মামলার সঙ্গে যুক্তও নন।’ যদিও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে’র অভিযোগ এনে যে তথ্যপ্রমাণ পেশ করেন, তার ভিত্তিতে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক পামেলা গুপ্ত।

এ দিন সিজিও কমপ্লেক্স থেকে অভিজিৎ-কে এবং প্রেসিডেন্সি জেল থেকে সন্দীপকে ডাক্তারি পরীক্ষার পরে আদালতে পেশ করা হয়। তাঁদের দেখে ‘চোর চোর’ স্লোগান দিতে থাকেন সেখানে জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষ। এমনকী, জুতোও ছোড়া হয়। এ দিন দুপুর দুটো নাগাদ শিয়ালদহ আদালতে মামলাটি ওঠে। সিবিআইয়ের আইনজীবী শুরুতেই বলেন, ‘আমরা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। ওই তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পরে, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি-র মধ্যে ফোনে কথা হয়েছিল। নেপথ্যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।’

আদালতে সিবিআইয়ের যুক্তি, ‘প্রথমে আত্মহত্যা বলা হয়েছিল। যদিও দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, ওই তরুণীর সঙ্গে যৌন নির্যাতনের মতো কিছু হয়েছে। এমন ঘটনায় কী কী পদক্ষেপ করা উচিত, তা পুলিশ এবং চিকিৎসকদের জানা। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। মেডিক্যাল কলেজের মাথায় থেকেও সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি সন্দীপ।’

টালা থানার OC-কে জুতো দেখালেন বিক্ষোভকারীরা, রবিবার ফের মিছিল ডাক্তারদের
যদিও সিবিআইয়ের গ্রেপ্তারি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন অভিজিতের আইনজীবী অয়ন ভট্টাচার্য এবং নাজিমুল আলম সরকার। অভিজিতের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল, তিনি তথ্যপ্রমাণ লোপাটের পথ প্রশস্ত করেছেন। তা ছাড়াও, ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া থেকে এফআইআর — সব ক্ষেত্রেই ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরি করেছেন।

অয়ন বিচারককে বলেন, ‘ছ’বার নোটিস দেওয়া হয়েছে। শেষ বার ১৪ সেপ্টেম্বর তাঁকে নোটিস পাঠানো হয়। অভিযুক্ত না সাক্ষী — কী হিসেবে তাঁকে ডাকা হয়েছে, তা সেই নোটিসে বলা ছিল না। তিনি মেডিক্যাল লিভে ছিলেন। সম্প্রতি হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিলেন। তদন্তে সাহায্য করেছেন। হঠাৎ ১৪ তারিখ তদন্তকারীদের এমন কী মনে হলো, যে গ্রেপ্তার করে নিলেন? অ্যারেস্ট মেমোতে তাঁর স্ত্রী বা আত্মীয়ের কোনও সই নেই। কীসের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারও উল্লেখ নেই। যে কোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক।’

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী কী ধারা দেওয়া হয়েছে তা জানতে চান বিচারক পামেলা গুপ্ত। সিবিআই ধারা উল্লেখ করার পরে বিচারক বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, এগুলো জামিনযোগ্য।’ অয়ন বলেন, ‘কর্তব্যে গাফিলতির কথা বলছে সিবিআই। সে ক্ষেত্রে বিভাগীয় তদন্ত করা যেত। গ্রেপ্তার কেন?’

RG Kar Incident: তিলোত্তমা কাণ্ডে জোড়া গ্রেপ্তারি, সন্দীপের সঙ্গে সিবিআই জালে টালা থানার ওসি
সিবিআইয়ের আইনজীবীর পাল্টা দাবি, ‘সত্যিটা জানতে চাই। অনেকে বলছেন, পুলিশ এবং সিবিআইয়ের মধ্যে দড়ি টানাটানি চলছে। তা নয়। আমরা সন্দীপ এবং অভিজিৎ-কে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চাই। সকাল ১০টায় ওসি ঘটনার খবর পান। প্রায় এক ঘণ্টা পরে, ১১টার সময়ে তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ওসি নিজেই একজন সন্দেহভাজন। ধর্ষণ ও খুনের মামলায় যতটা সতর্ক থাকা উচিত ছিল, ততটা তিনি ছিলেন না।’

সিবিআইয়ের দাবি, সৎকারের আগে নির্যাতিতার পরিবার দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের দাবি জানালেও তাড়াহুড়ো করে দেহ দাহ করে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ওসি বা পুলিশের অন্য অফিসারেরা কেন পরিবারের কথা শুনল না? সিবিআইয়ের দাবি, সে বিষয়ে হেফাজতে নিয়ে অভিজিৎ-কে জেরা করতে চান গোয়েন্দারা।

এ দিন সন্দীপের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী জহাব রাউফ। সওয়াল-জবাবের মধ্যে অনবরত বাধা দিতে থাকেন শিয়ালদহ বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীরা। ওসির জামিনের আবেদন করতেই বিচারকের সামনে তাঁরা বলতে থাকেন, ‘ওসি যা করেছেন, তার পর জামিনের আবেদন করতে এসেছেন?’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *