সোমবার রাতেও হাসপাতালে আসেন শাহনুল। বাবার বেডের পাশে বসেছিলেন। ডিউটিতে আসেন ওই নার্সও। কিন্তু তিনি টেরই পাননি, এই কয়েক দিনে তাঁকে মন দিয়ে বসে আছেন তাঁর সেবায় থাকা রোগীর ছেলে। শাহনুলের কিন্তু আবার একেবারে ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’! আর সে কথা চুপিচুপি নিবেদন করতে গিয়ে হিসেবে খানিকটা ভুল করে ফেলেন তিনি। আর তাতেই সব গোলমাল হয়ে গেল।
কী ভাবে?
মনে কথা জানানো যায় কী ভাবে, তা নিয়ে কয়েক দিন ধরে একপ্রকার গবেষণাই করে ফেলেছিলেন শাহনুল। প্রেম নিবেদন করতে হবে। কিন্তু রিঅ্যাকশন কী হবে তা তো জানা নেই। তাই একটু আবডাল থাকাও জরুরি। অতএব প্ল্যান এল মাথায়। বন্ধুকে দিয়ে লেখালেন, ‘আই লাভ ইউ। প্রথম দেখাতেই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।’ এখানে থেকে গেলে তা-ও হতো। কিন্তু শাহনুল এরপরেই বেচাল চেলে ফেলেন। বার্তার নীচে নিজের নামটিও লিখিয়ে নেন বন্ধুকে দিয়ে।
এ বার পালা চিঠি দেওয়ার। সোমবার রাতে যখন নার্সদের চেঞ্জ রুম তালাবন্ধ, তখনই দরজার ফোকর গলিয়ে টুক করে প্রেম-বার্তা ঠেলে দেন ভিতরে। অভিযোগকারিণী নার্স মঙ্গলবার সকালে ডিউটি শেষে চেঞ্জ রুমে ঢুকেই পায়ের কাছে সাদা কাগজ দেখে কুড়িয়ে নেন। ভাঁজ খুলতেই চোখ কপালে! খানিকটা ধাতস্থ হয়ে বেরিয়ে আসেন। ওয়ার্ডে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, শাহনুল কে?
আশা-নিরাশার তীব্র দোলাচল তখন যুবকের বুকে ঢেউ তুলেছে। শেষমেশ ভয় পেরিয়ে সাহসেই সওয়ার হলেন তিনি। প্রেমিকের শিভ্যালরি বলে কিছু থাকবে না! অতঃপর তাঁর সামনে যাওয়া এবং চোখে চোখ রেখে বলা, ‘আমিই সে।’
ব্যস! দি এন্ড। ওখানেই শেষ। হাসপাতালের অন্য কর্মীদের ডাকেন ওই নার্স। তাঁরা চেপে ধরতেই শাহনুল জানান তিনিই প্রেম-প্রার্থী। তার পর পুলিশে খবর এবং হস্তান্তর, থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের। মহেশতলা থানার এক অফিসার বলেন, ‘অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ অর্থোপেডিকের নার্সকে প্রেম নিবেদনের শিক্ষা যে এমন হাড়ে হাড়ে টের পাবেন, তা কি আর ভেবেছিলেন শাহনুল?
